প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে দশ শয্যার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে উন্নীত করার সুপারিশ রয়েছে। স্বাস্থ্যকেন্দ্র ঘিরে প্রত্যাশা রয়েছে। কিন্তু জেলার চারটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিকাঠামো নিয়ে প্রত্যয়ী নন এলাকাবাসী।
কোথাও নতুন ভবনে ফাটল, বিদ্যুৎ নেই। কোথাও চিকিৎসকদের আবাসন বেহাল। কোনও জায়গায় আবার পর্যাপ্ত ডাক্তার বা নার্স নেই। এমনই দশা কাটোয়া ২ ব্লকের অগ্রদ্বীপ, কেতুগ্রাম ২ ব্লকের শিবলুন, পূর্বস্থলী ১ ব্লকের নাদনঘাট ও খান্দরা ডিপিএসসি-র পাণ্ডবেশ্বর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের। আর এই চারটি কেন্দ্রকেই দশ শয্যার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে উন্নীত করতে চলেছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। সিএমওএইচ দিলীপ মণ্ডল অবশ্য বলেন, “চারটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে দশ শয্যার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে উন্নীত করার মতো অবস্থায় রয়েছি আমরা।” ওই চার কেন্দ্রের নাম সরকারি ভাবে ঘোষণার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও পাঠানো হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। প্রশাসনের এক কর্তা জানান, জেলার ১২টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মধ্যে ৮টি দশ শয্যার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে উন্নীত হয়ে গিয়েছে। এই চারটির ক্ষেত্রে এখন আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন না হলেও পরবর্তীতে সুযোগ বুঝে তা করা হবে। |
প্রায় বছর খানেক আগে জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিকে উন্নীত করার জন্য নতুন ভবন গড়া শুরু হয়। প্রতিটি ভবন তৈরি করতে খরচ হয় গড়ে প্রায় ৫৭-৫৮ লক্ষ টাকা। তবে অনেক ভবনই এখন দশ শয্যার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে উন্নীত হওয়ার অবস্থায় নেই। স্বাস্থ্যকর্তারা জানান, ১০ শয্যার হাসপাতাল চালু করতে ন্যুনতম ২ জন চিকিৎসক, ৪ জন নার্স, ২ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী ও ২ জন সুইপার প্রয়োজন। কিন্তু এখনও জেলা স্বাস্থ্য দফতর তার কোনও ব্যবস্থা করতে পারেনি। সব স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই ডাক্তারের অভাব রয়েছে।
শিবলুন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নতুন ভবন চালু হয়ে গেলেও বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ শেষ হয়নি। ভবনের বাইরের দেওয়ালে ফাটল। অগ্রদ্বীপ স্বাস্থ্যকেন্দ্রেও গত মঙ্গলবার এক জন চিকিৎসক সকালে কাজে যোগ দিয়ে বিকেলেই ইস্তফা দেন। কারণ হিসেবে জানান, আবাসন বসবাসের উপযুক্ত নয়। নাদনঘাট স্বাস্থ্যকেন্দ্রেরও প্রায় একই দশা। ঠিকাদারদের হাত থেকে নতুন ভবন এখনও হাতেই পাননি স্বাস্থ্যকর্তারা। হয়নি আলো, পাখা বা নতুন শয্যার ব্যবস্থাও।
কয়েকদিন আগে শিবলুনে চিকিৎসক ও নার্স না থাকায় চতুর্থ শ্রেণির এক কর্মীই চিকিৎসা করেছিলেন। ওই কর্মী নিজেই জানান, স্বাস্থ্যকেন্দ্র চালু রাখার জন্য তাঁকে ‘জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ’, সবই করতে হয়। চিকিৎসক না থাকায় বিএমওএইচ তাপস বাগ নিজে সপ্তাহে তিন দিন বহির্বিভাগে বসেন। বৃহস্পতিবার অবশ্য জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য কর্মসূচি প্রকল্পের দু’জন চিকিৎসক এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু নার্স ও কর্মী সংখ্যায় ঘাটতি রয়েছে। বাকি রয়েছে বিদ্যুতের কাজও। চিকিৎসক আবাসনও বেহাল। |
অগ্রদ্বীপ প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রসব করানোর ব্যবস্থা থাকলেও চিকিৎসক ও নার্স কম। মঙ্গলবার জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য কর্মসূচির (এনআরএইচএম) এক চিকিৎসক যোগ দিয়েও পদত্যাগ করায় নতুন এক জনকে নিয়োগ করা হয়েছে। যদিও তিনি এখনও কাজে যোগ দেননি। ওই ডাক্তারের পদত্যাগের বিষয়ে এসিএমওএইচ (কাটোয়া) শুভদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমরা বিস্তারিত রিপোর্ট সিএমওএইচ-এর কাছে পাঠিয়েছি। যা বলার তিনিই বলবেন।”
খান্দরা ডিপিএসসি-র পাণ্ডবেশ্বর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এক জন ডাক্তার রয়েছেন, তা-ও চুক্তির ভিত্তিতে। সব সময় আবার তাঁর দেখা মেলে না। নার্স আছেন চার জন, ফার্মাসিস্ট নেই, কর্মী দু’জন, সুইপার এক জন। হাসপাতাল চত্বর জঙ্গলে ভরা। নাদনঘাট প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র দশ শয্যায় উন্নীত হওয়ার উপযুক্ত কি না, সে প্রশ্নে এসিএমওএইচ (কালনা) সুভাষ মণ্ডলের বক্তব্য, “ঘোষণা হয়ে গেলে আমরা স্বাস্থ্য দফতরের কাছে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও কর্মী দাবি করতে পারব।” নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসকের মতে, “এই অবস্থায় দশ শয্যার স্বাস্থ্যকেন্দ্র চালু হলে আমরা খুব সমস্যায় পড়ব। তখন কী ভাবে চালাব, বুঝতে পারছি না।”
সিএমওএইচ দিলীপবাবু বলেন, “এনআরএইচএম থেকে চিকিৎসক পাওয়া গিয়েছে। নার্স ও কর্মী নিয়োগের বিষয়টিও দেখা হচ্ছে।” তবে তড়িঘড়ি ‘উন্নীত’ হলেও পরিষেবার উন্নতি কতটা হবে, সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। |
অসুখের চার ঠিকানা |
• ডাক্তার নেই।
• কর্মী নেই।
• চিকিৎসক আবাসন বেহাল।
• স্বাস্থ্যকেন্দ্র চত্বর জঙ্গলে ভরা।
• বিদ্যুৎ নেই সর্বত্র। |
|