নার্স-সঙ্কটের জেরে লালগড় প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রোগীদের পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে চরম সমস্যায় পড়েছেন কর্তৃপক্ষ। সমস্যার কথা লিখিত ভাবে জেলা স্বাস্থ্য দফতরকে জানানোও হয়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রয়োজনীয় সংখ্যক নার্সের অভাবে অন্তর্বিভাগে উপযুক্ত পরিষেবা মেলে না।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জঙ্গলমহলের স্বাস্থ্য-পরিষেবার হাল ফেরাতে গুচ্ছ-কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন। লালগড়কে কেন্দ্র করেই এক সময়ে জঙ্গলমহলে আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছিল। অথচ সেই লালগড়েরই প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির বিষয়ে স্বাস্থ্য দফতর উদাসীন বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। লালগড় ব্লকের ৫টি অঞ্চলের প্রায় ৫০ হাজার বাসিন্দা ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপরেই নির্ভরশীল। আগে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অন্তর্বিভাগে ১০টি শয্যা ছিল। ২০০৬-এ শয্যা-সংখ্যা বেড়ে হয় ১৫টি। তবে প্রায় প্রতিনিয়তই শয্যা-সংখ্যার অতিরিক্ত রোগী ভর্তি নিতে বাধ্য হন কর্তৃপক্ষ। চিকিৎসক আছেন মাত্র দু’জন--প্রশান্ত সানা ও দিলীপকুমার ভক্তা। ৫ জন নার্সের মধ্যে দু’জন মাতৃত্বকালীন ছুটিতে গিয়েছেন। আরও এক জন ছুটিতে যাওয়ার জন্যে ইতিমধ্যেই কর্তৃপক্ষকে মৌখিক ভাবে জানিয়েছেন। |
নার্স-স্বল্পতার কারণে ওই নার্সের ছুটির লিখিত-আবেদনপত্র এখনও গ্রহণ করেননি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মেডিক্যাল অফিসার (এমও) প্রশান্তবাবু। সমস্যা মেটাতে অবশ্য গত জুন মাসে ব্লকের লাঘাটা ও ধরমপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে দু’জন নার্সকে অস্থায়ী ভাবে লালগড় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কাজে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দেন বিনপুর-১ ব্লকের স্বাস্থ্য আধিকারিক (বিএমওএইচ) মনোজ মুর্মু। কিন্তু যোগ দেওয়ার কয়েক দিন পরেই এক জন অসুস্থতার কারণে ছুটি নিয়েছেন। অন্য জন কাজে যোগই দেননি। এই পরিস্থিততে লালগড় প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এখন ৩ জন নার্স থাকলেও কার্যত দু’জনই কাজ করছেন। তাঁদেরও আবার সাপ্তাহিক এবং ‘জরুরি ভিত্তিক’ ছুটি মঞ্জুর করতে হয় কর্তৃপক্ষকে। যার ফলে অনেকক্ষেত্রে চিকিৎসকেরাই নার্সের কাজ করছেন।
স্বাস্থ্যকেন্দ্রের আউটডোরে প্রতিদিন দেড়শো-দু’শো রোগীর ভিড় সামলাতে হয়। তার মধ্যেই জরুরি-বিভাগ সামলানো এবং অন্তর্বিভাগে ভর্তি থাকা রোগীদের চিকিৎসা ও দেখভাল করতে গিয়ে নাজেহাল হচ্ছেন চিকিৎসক প্রশান্ত সানা ও দিলীপকুমার ভক্তা। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, নার্সের অভাবে পরিষেবা দেওয়া কার্যত শিকেয় উঠেছে। যে কারণে, কম-সংখ্যক রোগী ভর্তি নেওয়া হচ্ছে। বাকিদের ঝাড়গ্রাম হাসপাতাল অথবা মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ‘রেফার’ করতে বাধ্য হচ্ছেন কর্তৃপক্ষ। প্রশান্তবাবু, দিলীপবাবুরা এ প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে, ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্র সূত্রের খবর, প্রয়োজনীয় সংখ্যক নার্সের অভাবে অন্তর্বিভাগ চালানো দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। সে কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বার বার জানানো সত্ত্বেও উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হয়নি বলে অভিযোগ। তাই বাধ্য হয়েই অন্তর্বিভাগে অতিরিক্ত রোগী ভর্তি নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
১২ কিমি দূরের রামগড় প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে আবার দীর্ঘ দিন চিকিৎসক না-থাকায় সেখানকার আউটডোরটি বন্ধ। রামগড়ে অন্তর্বিভাগও নেই। লালগড় থেকে ১০ কিমি দূরের ধরমপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অবশ্য এক জন চিকিৎসক আউটডোরে রোগী দেখেন। ধরমপুরেও অন্তর্বিভাগ নেই। ফলে প্রতিদিনই লালগড় প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বাড়তি রোগীর চাপ সামলাতে গিয়ে নাজেহাল হচ্ছেন কর্তৃপক্ষ। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের মুখপাত্র অসিত বিশ্বাস বলেন, “নার্সদের মেটারনিটি লিভ দিতেই হবে। এটা তাঁদের প্রাপ্য ছুটি। এ ক্ষেত্রে সাময়িক ভাবে অন্য জায়গা থেকে নার্স এনে সংশ্লিষ্ট স্বাস্থকেন্দ্রে পাঠানো হয়। লালগড়ে তার ব্যতিক্রম হওয়ার কথা নয়।”
বাস্তব কিন্তু অন্য কথা বলছে! |