|
|
|
|
ঘিসিংয়ের মামলা |
রায় বিরুদ্ধে গেলেই ফের জটে জিটিএ |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা দার্জিলিং পাহাড়ে এখনই শাসনভার পাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হল। ‘গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ (জিটিএ) গঠনকে চ্যালেঞ্জ করে দার্জিলিং গোর্খা পার্বত্য পরিষদের (ডিজিএইচসি) প্রধান সুবাস ঘিসিং কলকাতা হাইকোর্টে যে মামলা করেছিলেন, সেই মামলার শুনানির সময় বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত জানিয়ে দেন, যদি এই মামলার রায় সরকারের বিরুদ্ধে যায়, তা হলে জিটিএ-নির্বাচন এবং ফল ঘোষণা অবৈধ হয়ে যাবে। সুবাস ঘিসিং যে কারণে জিটিএ-কে সংবিধানসম্মত নয় বলে দাবি করেছেন, সেই কারণকে হাইকোর্টের আপাত-যুক্তিগ্রাহ্য বলে মনে হয়েছে।
রাত পোহালেই, রবিবার জিটিএ ভোট। মোর্চার প্রচার সচিব হরকাবাহাদুর ছেত্রী বলেন, “জিটিএ বিলটি কেন্দ্রের আইন মন্ত্রকের কাছে ছ’মাস পড়ে ছিল। সেখানকার বিশেষজ্ঞরা সব খতিয়ে দেখেছেন। যে ত্রুটির কথা শুনছি তা সত্যি হলে সেটা কেন্দ্রের বিশেষজ্ঞদের নজরে ধরা পড়েনি কেন, তা ভেবেই অবাক হচ্ছি।” তাঁর দাবি, “যাই-ই হোক না কেন, ঘিসিং যদি জেতেনও তাতে জিটিএ গঠন বড়জোর কিছুটা পিছোতে পারে। যদি ধরে নিই, ফের সব প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করেও জিটিএ ভোট হবে, তা হলেও মোর্চাই জিতবে।” ওই মোর্চা নেতার মন্তব্য, “ঘিসিং নিজেকে প্রাসঙ্গিক রাখতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। কিন্তু পাহাড়ে শান্তি ও গণতন্ত্র ও উন্নয়নের জন্য মানুষ যে জিটিএ চাইছেন, তা জিটিএ ভোটের বহু আসনে আমাদের প্রার্থীদের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতা থেকেই স্পষ্ট।”
হরকাবাহাদুর যা-ই বলুন, ঘটনা হল, সুবাস ঘিসিংয়ের অভিযোগের সারবত্তা নিয়ে মোর্চার অন্দরেও চলছে চুলচেরা আলোচনা। কারণ, কলকাতা হাইকোর্টে রাজ্য সরকার যে হলফনামা দিয়েছে সেখানে জানানো হয়েছে, রাজ্যপাল গত ১৪ মার্চ জিটিএ আইনে অনুমোদন দিয়েছেন। তবে ওই আইনের ৭৪ ধারায় তিনি অনুমোদন দেননি। কী বলা রয়েছে ওই ধারায়? ওই ধারায় বলা রয়েছে, দার্জিলিং গোর্খা পার্বত্য পরিষদ আইন খারিজ করা হল। রাজ্যপাল ওই ধারাটিকে অনুমোদনের বাইরে রেখেছেন। ফলে, ডিজিএইচসি-র অস্তিত্ব বিলোপ হয়নি। অথচ, জিটিএ-র নির্বাচন হচ্ছে।
ঘিসিংয়ের তরফে আইনজীবী অরুণাভ ঘোষ জানান, সমগ্র দেশে স্থানীয় ভাবে পুরসভা বা পঞ্চায়েত প্রশাসনের কাজ করে। যদি কোনও এলাকা পরিচালনার দায়িত্ব পঞ্চায়েত বা পুরসভা ছাড়া, অন্য কোনও নির্বাচিত পর্ষদ বা নির্বাচিত সংস্থাকে দেওয়া হয়, তা হলে সংবিধান সংশোধন করতে হয়। তাঁর কথায়, “সংবিধানের ২৪৩ (এম) ধারায় বলা রয়েছে, পুরসভা ও পঞ্চায়েত ছাড়া অন্য সংস্থাকে পরিচালন ক্ষমতা দিতে হলে, কোন এলাকায়, কোন সংস্থা পরিচালনা করবে তা সংবিধান সংশোধন করে বলতে হবে। ’৮৯ সালে ৭৩তম সংবিধান সংশোধন করে দার্জিলিং পাহাড় এলাকা ডিজিএইচসি পরিচালনা করবে বলে সংসদে সংশোধনী পাস করা হয়। সেই অনুযায়ী, পাহাড়ের স্থানীয় পরিচালন ক্ষমতা এখনও ডিজিএইচসি-র। জিটিএ-র এখনও সাংবিধানিক বৈধতা নেই।” ‘অল ইন্ডিয়া গোর্খা লিগ’-ও জিটিএ-কে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেছে। গোর্খা লিগের পক্ষে আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্য বলেন, “জিটিএ পাহাড়ের পরিচালন ক্ষমতা নিতেই পারে না। এখনও তাদের জন্মই হয়নি।” এ দিকে মোর্চার পক্ষে বিমল গুরুঙ্গ আদালতকে জানিয়েছেন, তাঁরা নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত তাই এ ব্যাপারে হলফনামা দিতে পারেননি। হাইকোর্ট বিমল গুরুঙ্গের এই যুক্তিতে অসন্তোষ প্রকাশ করে। ৬ অগস্টের মধ্যে মোর্চাকে হলফনামা দিতে হবে। রাজ্য সরকারের পক্ষে এ দিন আইনজীবী সুমন গুপ্ত শুনানির জন্য সময় চান। এই অবস্থায় বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত ১০ অগস্ট মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন। উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেবের প্রতিক্রিয়া, “আমরা পাহাড়ে শান্তি এবং উন্নয়ন-প্রক্রিয়ায় আরও গতি আনতে বদ্ধপরিকর। আর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারে বারেই জানিয়েছেন, আমরা বিচার ব্যবস্থার উপরে পুরোপুরি শ্রদ্ধাশীল এবং আস্থা রাখি।” |
|
|
|
|
|