জমি-জটে আটকে গিয়েছে বারাসত থেকে বনগাঁ পর্যন্ত ৬২ কিলোমিটার দীর্ঘ চার লেনের বাইপাস তৈরির পরিকল্পনা। গোটা প্রকল্পটিই যোজনা কমিশনের কাছে ‘ফেরত পাঠিয়ে’ দিয়েছেন জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ। কেন্দ্রীয় বরাদ্দের ৬০০ কোটি টাকার প্রকল্পটি এখন অথৈ জলে।
অন্য জেলায় সমস্যা না হলেও ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের ক্ষেত্রেও উত্তর ২৪ পরগনার আমডাঙা-সংলগ্ন ১৮ কিলোমিটার অংশে জমি অধিগ্রহণ নিয়ে একই সমস্যা দেখা দিয়েছে। ঠিক যেমন বাইপাস তৈরির জন্য মাপজোক, খুঁটি পোঁতার কাজও হয়ে গেলেও তিনটি জায়গায় বাধা আসে। সেই ‘সামান্য’ বাধাই অতিক্রম করা যায়নি। বিষয়টি নিয়ে পাঁচ বছরে কম করেও ৩০টি বৈঠক করেছেন জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ বা এনএইচএআই। তার পরেও নতুন রাস্তা তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় জমি হাতে আসেনি। তাই চার লেনের ওই রাস্তা তৈরির প্রকল্পটিই কার্যত মুখ থুবড়ে পড়ে। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের ‘ভবিষ্যৎ’ও বাইপাসের মতো হবে কি না, তা নিয়ে এখন আশঙ্কায় জেলা প্রশাসন। |
যে সংস্থাটি বাইপাসটির সমীক্ষার কাজ করছিল, তারা জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষকে জানায়, জমির অভাবেই নতুন রাস্তা তৈরি সম্ভব নয়। এ দিকে, চার লেনের কম কোনও সড়ক তৈরির প্রকল্প হাতে নেয় না জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ। এই পরিস্থিতিতে প্রকল্পটি যোজনা কমিশনের কাছে ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছেন জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ। সংস্থার চিফ জেনারেল ম্যানেজার অজয় অহলুওয়ালিয়া বলেন, “বাইপাসের কাজ করার জন্য পূর্ণাঙ্গ প্রজেক্ট রিপোর্ট তৈরির সময়ে কিছু বাধা আসে। ফলে প্রকল্পটি কেন্দ্রের কাছে ফেরত পাঠানো হয়। যে-সব জায়গায় সমস্যা হচ্ছে, সেখানে উড়ালপুল তৈরির পরিকল্পনাও করা যেতে পারে। তাও যোজনা কমিশনকে জানানো হয়েছে।” উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসক সঞ্জয় বনশল বলেন, “কিছু জায়গায় বাধা পেয়ে প্রকল্পটি আটকে যায়। তার সুরাহা হয়নি।”
যশোহর রোডের উপর যানজট দিন দিন বাড়ছে। পেট্রাপোল সীমান্তের আধুনিকীকরণের কাজ শেষ হলে পণ্য পরিবহণ বাড়বে। সেই প্রেক্ষিতেই বাইপাসের প্রয়োজনীয়তা। ২০০৫ সালে বামফ্রন্ট সরকার যশোহর রোডকে চওড়া করে চার লেন করার পরিকল্পনা নেয়। কিন্তু তাতে প্রচুর বাড়ি ও দোকানঘর ভাঙা পড়ত। পরে ৩৫ ও ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ঠিক মাঝখান দিয়ে বারাসতের কাজিপাড়া থেকে বনগাঁর পেট্রাপোল সীমান্ত পর্যন্ত সাড়ে ৬২ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ২৭ মিটার চওড়া চার লেনের নতুন বাইপাস তৈরির প্রকল্প নেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় সরকার এই খাতে ৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করে। ২০০৬-এর ডিসেম্বরে দিল্লির একটি বেসরকারি সংস্থাকে সমীক্ষার ভার দেন জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ।
সমীক্ষার কাজ কিছুটা এগোনোর পরে, ২০০৭ সালের মাঝামাঝি বাধা আসে তৃণমূলের ‘কৃষি জমি রক্ষা কমিটি’র কাছ থেকে। হাবরার কাছে দিগড়া, গাইঘাটার কাছে কলাসীমা ও বনগাঁর ছয়ঘরিয়ার কাছে নরহরিপুরে রাস্তা মাপজোকের কাজ আটকে দেন কিছু বাসিন্দা। কিছু জায়গায় জমি জরিপের কাজ করতে গিয়ে নিগৃহীত হতে হয় সংস্থার কর্মীদের। এর পরে গত কয়েক বছরে দফায় দফায় সর্বদল বৈঠক ডেকেছে প্রশাসন। তাতেও সমস্যা মেটেনি। রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের পরে তৃণমূল ক্ষমতায় এলেও প্রকল্পটি রূপায়ণ তো দূর, সেটি ফেরতই চলে যায়। তৃণমূলের জেলা পর্যবেক্ষক তথা খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, “বাইপাসের জমি অধিগ্রহণ নিয়ে কিছু বাধা এসেছিল। প্রকল্পটি আমরা আবার ফেরত আনতে চেষ্টা করব। যশোহর রোড সম্প্রসারণেরও পরিকল্পনা রয়েছে।” স্থানীয়রা অবশ্য বলছেন, দু’পাশে বাড়ি আর অজস্র দোকানে-ঠাসা যশোহর রোড চওড়া করা অসম্ভব। তাতে কাজে অনেক বেশি বাধা আসবে। মাত্র তিনটি জায়গায় বাধা সরাতে না পেরে ফেরত গিয়েছে বাইপাস প্রকল্প। এ বার ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের কাজে বাধা দিলেও এমন বিপদ ঘটতে পারে, তার আভাস মিলেছে জেলা প্রশাসনের কথাতেও। অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংষ্কার) সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় বলেন, “সব কাজেরই একটা সময় সীমা থাকে। না হলে প্রকল্প ফেরত চলে যায়। বাইপাসের মতো ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের টাকা ফেরত চলে গেলে এলাকাবাসীরই ক্ষতি হবে।” |