ধর্ষিতার সঙ্গে কথা
হাওড়ার পুলিশ-প্রধানকে তীব্র তিরস্কার কমিশনের
নির্যাতিতাকে সাহায্য না-করার অভিযোগে জগাছা থানার এক অফিসারকে বৃহস্পতিবার সাসপেন্ড করা হয়েছিল। আর শুক্রবার সাঁতরাগাছি ধর্ষণ কাণ্ডে পুলিশের ভূমিকার নিন্দা করে খোদ হাওড়ার পুলিশ কমিশনারকেই ভর্ৎসনা করল রাজ্য মহিলা কমিশন।
এ দিন বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ হাওড়া জেলা হাসপাতালে সাঁতরাগাছিতে ধর্ষিতা ওই মহিলার সঙ্গে দেখা করতে যান রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন সুনন্দা মুখোপাধ্যায় এবং অন্য পাঁচ সদস্যা। সেখানে তাঁরা ধর্ষিতা মহিলার সঙ্গে প্রায় ১৫ মিনিট কথা বলেন। তার পরে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে তাঁরা যান পুলিশ কমিশনারের কাছে। সেখানে সাংবাদিকের সামনে পুলিশ কমিশনার অজেয় রানাডের ঘরে বসেই তাঁকে ভর্ৎসনা করেন কমিশনের প্রতিনিধিরা। তাঁরা পুলিশ কমিশনারকে বলেন, “পুলিশ যে এখনও যথেষ্ট মানবিক হয়ে উঠতে পারেনি, সাঁতরাগাছির ঘটনাতেই সেটা স্পষ্ট। অথচ অসহায় মানুষকে সাহায্য করা আপনাদের কাজ। পুলিশের চাকরিতে যোগ দেওয়ার সময় আপনারা এই মর্মে শপথ নেন যে, সব সময়েই মানুষের পাশে থেকে তাঁদের সেবা করবেন। অথচ কার্যক্ষেত্রে তা করা হচ্ছে না।”
ধর্ষিতার সঙ্গে কথা বলার পরে রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন সুনন্দা মুখোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র
মহিলা কমিশনের পক্ষ থেকে পুলিশ কমিশনারকে জানিয়ে দেওয়া হয়, পুলিশের এই দৃষ্টিভঙ্গি সামগ্রিক ভাবে বদলাতে হবে। পেশিশক্তির ব্যবহার কমিয়ে মানবিক হয়ে উঠতে হবে। বর্তমান রাজ্য সরকারেরও দৃষ্টিভঙ্গি সেটাই। ধর্ষণের ঘটনার ৪৮ ঘণ্টা পরেও মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে না-পারায় পুলিশ কমিশনারের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেন কমিশনের প্রতিনিধিরা।
গত বুধবার সকাল ৫টা নাগাদ এক দুষ্কৃতী সাঁতরাগাছি সেতুর নীচে ওই মহিলাকে মারধর ও ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। পরে ওই মহিলা জানান, ঘটনার পরে তিনি পথচলতি মানুষের কাছে সাহায্য চান। কিন্তু কেউ তাঁকে সাহায্য করেননি। পরে তিনি সেতুর উপরে উঠে এক পুলিশকর্মীকে সব জানান। তিনিও মহিলার দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেননি। তার পরে রক্তাক্ত অবস্থায় তিন কিলোমিটার হেঁটে তিনি যান জগাছা থানায়। কিন্তু থানার ডিউটি অফিসার তাঁকে সাহায্য করা দূরে থাকুক, উল্টে তাঁর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন বলে ওই মহিলার অভিযোগ। পরে বাড়ির লোকেরা ওই মহিলাকে হাওড়া জেলা হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দেন। ঘটনার প্রায় ছ’ঘণ্টা পরে ওই মহিলার আত্মীয়েরা ধর্ষণের লিখিত অভিযোগ দায়ের করায় এফআইআর নিতে বাধ্য হয় পুলিশ।
লাঞ্ছিতাকে সাহায্য না-করার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পরে বৃহস্পতিবার জগাছা থানার এক পুলিশ অফিসারকে সাসপেন্ড করা হয়। ‘শো-কজ’ করা হয় থানার আইসি-কে। ওই ঘটনার কথা প্রথমে তিনি কেন জানতেন না এবং কেন তিনি সে-দিন থানায় ছিলেন না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে আইসি-র কাছে। ওই দিন হাওড়া হাসপাতালে ধর্ষিতার সঙ্গে দেখা করতে যান বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ও কিছু রাজনৈতিক দলের মহিলা সংগঠনের প্রতিনিধিরা। বিভিন্ন মহিলা সংগঠনের তরফে জগাছা থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভও দেখানো হয়। রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন এ দিন বলেন, “তাঁকে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে এক মহিলা নিজের মুখে অভিযোগ করার পরেও পুলিশ এফআইআর নিতে দেরি করল কী ভাবে? এ ব্যাপারে আমরা হাওড়ার পুলিশ কমিশনারের কাছে সবিস্তার রিপোর্ট চেয়েছি।” এই ঘটনায় হাওড়া পুলিশের ভুমিকার নিন্দা করার সঙ্গে সঙ্গেই রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন সুনন্দাদেবী অবশ্য পুলিশের পরবর্তী পদক্ষেপের ব্যাপারে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “ঘটনার দিন পুলিশ যে ঠিকমতো ভূমিকা পালন করেনি, পুলিশ কমিশনার তা স্বীকার করেছেন। পরে পুলিশ যে-ব্যবস্থা নিয়েছে, তা ঠিক। এক অফিসারকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।” অভিযুক্তকে ধরার জন্য সমস্ত রকম চেষ্টাও চলছে বলে তাঁদের জানান পুলিশ-প্রধান।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.