চিত্রকলা ও ভাস্কর্য ১...
ফুটে উঠেছে সামাজিক, রাজনৈতিক ও নান্দনিক চিত্র
সিমা গ্যালারিতে এখন চলছে ২০১২-র গ্রীষ্মের প্রদর্শনী। সারা ভারতের ৩৪ জন শিল্পী এতে অংশগ্রহণ করেছেন। মোট ৫৩টি কাজ অন্তর্ভুক্ত। এর মধ্যে মাত্র তিনটি ইনস্টলেশনধর্মী ভাস্কর্য। বাকি সবই বিভিন্ন মাধ্যমের ও আঙ্গিকের ছবি। ১৯৬০ ও ১৯৭০-এর দশকের প্রখ্যাত শিল্পী আছেন কয়েক জন। এছাড়া বেশির ভাগই ১৯৯০ পরবর্তী তরুণতর প্রজন্মের শিল্পী। ফলে প্রদর্শনীটি আমাদের বুঝতে সাহায্য করে আজকের সামাজিক, রাজনৈতিক ও নান্দনিক পরিস্থিতি। হিংসা ও সন্ত্রাসের পরিমণ্ডল পরিব্যাপ্ত হয়ে আছে। ভেঙে যাচ্ছে সময়ের সংহত নৈতিকতা। অধিকাংশ শিল্পীই খুব উদ্বিগ্ন। শঙ্কামিশ্রিত দায়বোধ, প্রেম ও প্রতিবাদ থেকে গড়ে উঠছে তাদের প্রতিমাকল্প। সেই রূপনির্মাণ প্রজন্মের বিবর্তনে কী ভাবে পাল্টে যাচ্ছে, জটিলতর হচ্ছে তারও একটা রূপরেখা উঠে আসে এই প্রদর্শনী থেকে।
গণেশ পাইনের ২০১১-র টেম্পারার ক্যানভাস ‘দ্য বোনস’ যেন এই দ্বৈতেরই প্রকৃষ্ট প্রতীক। অন্ধকার প্রেক্ষাপটে একটি নর-করোটি বিভৎস হাসছে। সমস্ত শুভের বিরুদ্ধে বিদ্রুপের হাসি। নিম্নভাগে কয়েকটি শুষ্ক হাড়ের জটিল বুনন। তা থেকে জেগে উঠছে দু’টি অগ্নিশিখা। এই সুররিয়ালিস্ট প্রতিমাকল্পের মধ্য দিয়ে উদ্ভাসিত হচ্ছে এই সময়ের গভীর সংকট। যোগেন চৌধুরীর ‘বকাসুর’ পৌরাণিক প্রতিমাকল্প। বকের উপস্থাপনায় কালি-কলমের সুস্মিত বুনোট যে আপাত-সুষমার আবহ গড়ে তুলতে চায়, তাকেই শিল্পী রূপান্তরিত করেন হিংসার প্রতীকে। লালু প্রসাদ সাউ-এর নারীমুখাবয়বের পার্শ্বচিত্রেও প্রচ্ছন্ন এক অমঙ্গল চেতনার আভাস ধরা থাকে। রামানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় ও সুহাস রায়-এর ছবিতে পরম্পরার কিছু প্রতিফলন থাকে।
যেমন থাকে টি. বৈকুণ্ঠনের ছবির বিষয় ও আঙ্গিকে। লৌকিক হয়ে ওঠে আধুনিকতার বলিষ্ঠ এক শক্তি। যার বিস্তৃত প্রকাশ দেখা যায় আর একটু পরবর্তী প্রজন্মের শিল্পী জয়শ্রী বর্মনের ছবির বর্ণিল রূপকথার পরিমণ্ডলে। রিনি ধূমলের ‘সেইন্ট’ বা পরেশ মাইতির ‘টুগেদারনেস’ শীর্ষক তেলরঙের ক্যানভাসে সেই লৌকিক পরম্পরাই উপস্থাপিত হয়, যা এই সময়ের জটিলতাকে অনেকটা আত্মস্থ করে।
‘সিমা’য় আয়োজিত প্রদর্শনীর একটি ছবি
অঞ্জু চৌধুরী যে ভাবে নিসর্গকে বিমূর্তায়িত করেন বা শ্রেয়সী চট্টোপাধ্যায় সুতোর বুননে যে নিসর্গ আঁকেন, তাতেও এক অস্তিতার আবহই জেগে ওঠে।
যে প্রচ্ছন্ন আধ্যাত্মিকতার আবহ থাকে এ সব ছবিতে, তারই পরিপূর্ণ উদ্ভাস অনুভব করা যায় রশ্মি বাগচি সরকারের ‘আ প্রেয়ার ফর হোপ’ শীর্ষক জাপানি বর্ণ-প্রকরণে গড়ে তোলা ছবিটিতে। আলো-আঁধারের যে দ্বৈত এই প্রদর্শনীর মূল সুর, তার শ্রেষ্ঠ প্রকাশ যেন এই ছবি। মূর্ত ও বিমূর্তের প্রকৃষ্ট মেলবন্ধনে গড়ে ওঠা এই ছবিতে প্রকৃতি যেন দীপশিখা হয়ে আকাশকে আলোকিত করতে চায়। একই সঙ্গে সেই শিখা থেকে জেগে ওঠে ধূম্রকুণ্ডলীও। এখানে যেটুকু আশার দীপ্তি তারই এক বিপরীত আবহ কিংশুক সরকারের ‘থ্রেট’ শীর্ষক বিমূর্ত অ্যাক্রিলিকের ক্যানভাসটিতে। সামগ্রিক এই শঙ্কাকেই আরও গভীর থেকে অভিব্যক্ত করেন শাকিলা তাঁর অনামা কোলাজটিতে। এই গ্রামীণ মানবী কীভাবে উপলব্ধি করেন বিশ্বের বিস্তীর্ণ সন্ত্রাসের পরিস্থিতি এবং তাকে এত দক্ষতা ও মননে রূপায়িত করেন, তা বিস্ময়ের। সহজ ভাষা ও মগ্ন ধ্যানের জন্য রশ্মি ও শাকিলার ছবিদু’টি দর্শককে আবিষ্ট করে রাখে।
বাংলার যে ‘পপুলার আর্ট’ বা সাধারণ জনরুচির শিল্প-প্রকাশ, তার প্রকৃষ্ট ব্যবহারে সুমিত্র বসাক ১৫টি ছোট ফ্রেমের সমন্বয়ে গড়ে তুলেছেন বড় ছবি ‘অক্ষয় হোক তোমার আলতা সিঁদুর’। তাঁর এই নিজস্ব আঙ্গিক পদ্ধতি আজকের বাজার অর্থনীতির পরিমণ্ডলকে সার্থক ভাবে রূপায়িত করে। প্রকৃত বাজারের সঙ্গে জনচেতনার ধর্মবোধকে মিলিয়েছেন শিবানন্দ বাসবনথাপা ‘মাতা’ শীর্ষক তাঁর তেলরঙের ক্যানভাসে অনেকটা স্বাভাবিকতাশ্রিত রূপারোপে। স্বাভাবিকতাকে রূপান্তরিত করে জাদুবাস্তবতার দিকে নিয়ে গেছেন চিন্তন উপাধ্যায় তাঁর ‘মুন’ শীর্ষক ছবি ও ‘ক্লাউড’ শীর্ষক ইনস্টলেশনধর্মী ভাস্কর্যে। ভাস্কর্যটিতে উপর থেকে শূন্যে ঝুলিয়ে দিয়েছেন যূথবদ্ধ কিছু শিশুর মুখ। নীচে আয়নায় তার প্রতিফলন। অন্য দু’টি ত্রিমাত্রিক রচনা সন্তোষ মোরের।
অস্তিতার স্নিগ্ধ অনুভূতি জেগে থাকে তরুণ শিল্পী অনির্বাণ মুখোপাধ্যায়ের জলরং ও কালি-কলমের নিসর্গ রচনায়। ১৫টি ছোট ছবির সমাহারে গড়ে ওটা তাঁর উপস্থাপনায় তিনি দূরপ্রাচ্যের প্রভাবকে সার্থক ভাবে আত্মস্থ করেছেন। সত্যজিৎ রায়ের ‘বার্ড’ শীর্ষক মোরগের মাথার ড্রয়িংগুলিও স্বকীয় আঙ্গিকপদ্ধতিতে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। আয়নার উপর এচিং করে অভিব্যক্তিময় জ্যামিতিকতায় মুখের ছবি এঁকেছেন সৌগত দাস। এ ছাড়াও প্রদর্শনীতে ছিলেন রাউল হেমন্ত, রজন কৃষ্ণাণ, তুষার পোৎদার, চন্দনা মুখোপাধ্যায়, তিমির ব্রহ্ম, অপু দাশগুপ্ত, অনির্বাণ ঘোষ ও সুমন্ত্র মুখোপাধ্যায়।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.