ভারতীয় সংস্থাগুলির জন্য ব্যবসার অঢেল সুযোগ ফ্রান্সের বাজারে। অথচ এই ইউরোপীয় দেশটি সম্পর্কে স্রেফ কিছু ভুল ধারণা মনে পুষে রাখার কারণে, সেই সুযোগ কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে শ্লথ হয়ে পড়ছে ভারতীয় শিল্পমহল। জানিয়েছে আন্তর্জাতিক উপদেষ্টা সংস্থা প্রাইসওয়াটারহাউস কুপার্স (পিডব্লিউসি)-এর এক সমীক্ষা।
সম্প্রতি প্যারিসে ভারতীয় দূতাবাসের উদ্যোগেই করানো হয়েছে এই সমীক্ষা, ‘ইনভেস্টিং ইন ফ্রান্স- অপরচুনিটিস অ্যান্ড ইনসাইটস ফর ইন্ডিয়ান কোম্পানিজ’। যেখানে বলা হয়েছে, ফ্রান্সে ভারতীয় সংস্থাগুলির জন্য ব্যবসার বিস্তর সুযোগ অপেক্ষা করে আছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত লগ্নির ঠিকানা হিসেবে ওই বাজার এ দেশের শিল্পমহলের সম্ভ্রম খুব একটা আদায় করে নিতে পারেনি। বরং দিনে দিনে ভারতীয় লগ্নির প্রবাহ ক্রমশ কমে চলেছে সেখানে। সমীক্ষায় এর জন্য দায়ী করা হয়েছে ফ্রান্স, বিশেষত সে দেশের অর্থনীতির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি সম্পর্কে ভারতীয় সংস্থাগুলির একটা বড় অংশের স্বল্প জ্ঞান এবং অন্য অংশের বেশ কিছু ভ্রান্ত ধারণাকে।
রিপোর্ট অনুযায়ী, গত ২০০৯ ও ২০১০ সালে দুই দেশের মধ্যে লগ্নির আদান-প্রদান ছিল বছরে গড়ে মাত্র ২ কোটি ৬০ লক্ষ ইউরো। আবার ভারতে ফ্রান্সের বিনিয়োগের অঙ্ক যেখানে ছিল ২৯০ কোটি ইউরো, সেখানে ফ্রান্সে এ দেশ থেকে ঢুকেছে মাত্র ৩৬ কোটি ২০ লক্ষ ইউরো। মাত্র ১০০টি এমন সংস্থা রয়েছে ফ্রান্সে, যারা হয় ভারতীয় কোনও শিল্প গোষ্ঠীর শাখা অথবা যেগুলির মালিকানা ভারতীয়। সংশ্লিষ্ট মহলের ব্যাখ্যায় দু’দেশের অর্থনীতির মাপের পরিপ্রেক্ষিতে পারস্পরিক লগ্নি ও বাণিজ্যের ধারা বেশ কম এবং উদ্বেগজনক।
এমনকী ওই ছবি আরও ম্লান হয়ে যায়, ওই সময়ে ভারত থেকে বিশ্বের বিভিন্ন গন্তব্যে পৌঁছনো প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের গড় পরিমাণ দেখলে। যা বছরে প্রায় ১,৬৩০ কোটি ডলার। এর ০.৩ শতাংশেরও কম জুটেছে ফ্রান্সের কপালে, জানিয়েছে সমীক্ষা।
অন্য দিকে, ভারত থেকে ফ্রান্সে রফতানির অঙ্ক এখন আমদানির তুলনায় ৭০ শতাংশেরও বেশি। কিন্তু তা সে দেশের বাজারে ভারতীয় রফতানি পণ্যের দখল মাত্র ২%। প্রসঙ্গত, ভারত যে সমস্ত পণ্য ফ্রান্সে রফতানি করে, সেগুলির মধ্যে রয়েছে প্লাস্টিক ও অন্যান্য পেট্রোপণ্য থেকে তৈরি বস্তু, পোশাক, জুতো ইত্যাদি। আর ফ্রান্স থেকে ভারতে আসে মহাকাশ সংক্রান্ত পণ্য-সহ অন্যান্য কিছু তৈরি সামগ্রী।
এই পরিস্থিতিতে পিডব্লিউসি-র সমীক্ষায় একটাই পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যত দ্রুত সম্ভব ফ্রান্স সম্পর্কে সমস্ত ভুল ধারণা দূর করুক ভারত। তবেই কাটানো যাবে মনমোহন সিংহের দেশ থেকে ফ্রাঙ্কো অঁল্যাদের দেশে লগ্নি পৌঁছনোর খরা। |