আগের শুক্রবার খণ্ডঘোষ। সোমবার বর্ধমান শহর। বৃহস্পতিবার দুর্গাপুরের নামো সগড়ভাঙা।
টানা চারটে দিন কাটছে না, যার মধ্যে কোথাও না কোথাও গোষ্ঠী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছেন না তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। এই পরিস্থিতিতে আজ, শনিবার জেলায় আসছেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এক মাত্র তিনিই কোন্দলে রাশ টানতে পারেন, আশা দলের সাধারণ কর্মীদের। যদিও মমতার কাছেও গোষ্ঠী-সমস্যার সমাধান আছে কি না, দলের তৃণমূল স্তরের কর্মীরা তা জানেন না।
এ বার কোনও দলীয় অনুষ্ঠান নয়, কিছু সরকারি কর্মসূচিতে যোগ দিতে বর্ধমানে আসছেন মমতা। কিন্তু চাইলে তার মধ্যেও তিনি গোষ্ঠীবাজদের সতর্ক করে দিয়ে যেতে পারেন বলে মনে করছেন তিতিবিরক্ত কর্মী-সমর্থকেরা। তাঁদের অভিযোগ, শহরে পাড়ায়-পাড়ায় দলের নানা গোষ্ঠীর মধ্যে গোলমাল লেগেই রয়েছে। ইতিমধ্যে দলের বেশ কিছু স্থানীয় নেতার বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগও হয়েছে। মারধর, মহিলাদের হেনস্থা করা থেকে শুরু করে অপর গোষ্ঠীর লোকেদের ঘরছাড়া করা সবই রয়েছে অভিযোগের তালিকায়। |
বর্ধমান শহরের যে নেতাদের দিকে অভিযোগের তির, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সুশান্ত ঘোষ, পরিতোষ চক্রবর্তী, জয়ন্ত পাঁজা, ইকবাল আহমেদ, লাল্টু সিংহ, অশোক মণ্ডল, অনিমেষ দত্ত, দলের যুব নেতা খোকন দাস প্রমুখ। দলের রাজ্য নেতারা যখন বলছেন, যে কোনও নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক পুলিশ, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তা কার্যত হয়নি। এক মহিলা ও তাঁর মেয়েকে দোকান থেকে উচ্ছেদে অভিযুক্ত সুশান্তবাবুকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক কার্তিক ঘরামিকে মারধরে অভিযুক্ত খোকন দাস, মানিক দাস, কমল দাসদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়নি। অভিযুক্তদের প্রায় সকলেই দলীয় ও সরকারি নানা কর্মসূচিতেও যোগ দিচ্ছেন। তাঁদের দাবি, অভিযোগ মিথ্যা। অন্য গোষ্ঠীর হাতে আক্রান্ত হয়ে তাঁরা আত্মরক্ষার চেষ্টা করেছেন মাত্র। বর্ধমান থানার আইসি দিলীপ গঙ্গোপাধ্যায় অবশ্য এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
তবে গত ১৭ জুলাই জেলা গোয়েন্দা পুলিশের এসআই তাপস ভট্টাচার্য বর্ধমান থানায় রিপোর্ট দিয়ে জানিয়েছেন, খোকন দাসের অনুগামী তথা শহর যুব তৃণমলের সহ-সভাপতি পরিতোষ চক্রবর্তীর সঙ্গে জেলা তৃণমূল নেতা পরেশ সরকারের অনুগামীদের মধ্যে বারবার দ্বন্দ্ব ও সংঘর্ষ ঘটছে। বড়নীলপুর, বটতলা, শান্তিপাড়া, মুচিপাড়া, ছোটনীলপুর ইত্যাদি জায়গায় এলাকা দখলের চেষ্টায় দুই গোষ্ঠী অস্ত্রশস্ত্রও জোগাড় করছে। প্রতি দিনই এলাকায় টহল দিচ্ছে সশস্ত্র বাইকবাহিনী। যদিও পরেশবাবু ও পরিতোষবাবু এমন অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন।
বর্ধমানে দলের দুই পর্যবেক্ষক আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক ও অলোক দাসের বক্তব্য, “গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়ে দলের মধ্যে উদ্বেগ ও অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। দ্বন্দ্বে লিপ্ত নেতা-কর্মীদের নামের তালিকা তৈরি হচ্ছে। তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নেত্রী অনুমোদন দিলে তাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হবে।”
নেত্রী আজ কী বলেন, সে দিকে তাকিয়ে রয়েছেন অনেকেই। |