দু’টি ট্রাকের মুখোমুখি ধাক্কায় একটি ট্রাকের কেবিনে আগুন ধরে যায়। সেই কেবিন থেকে কোনওরকমে খালাসি নেমে পড়লেও বের হতে পারেননি চালক। কেবিনের সামনের চেপটে যাওয়া অংশে ট্রাক চালকের পা আটকে যায়। দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকা কেবিনের ভিতরে আটকে পড়ে গুরুতর জখম হন ট্রাক চালক। তাঁকে পরে উদ্ধার করা হলেও বাঁচানো যায়নি।
বৃহস্পতিবার ভোর ৪টায় দুর্গাপুর-বাঁকুড়া ৯ নম্বর রাজ্য সড়কে বড়জোড়ার তারা সিংহ ব্যারাজের কাছে দুর্ঘটনাটি ঘটে। মৃত ট্রাক চালকের নাম মনোজ রানা (৪৫)। বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনায়। অপর ট্রাকটির চালক ও খালাসি জখম হওয়ায় বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভতি করানো হয়। এর জেরে দুপুর পর্যন্ত ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। |
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, দুর্গাপুরের দিক সার বোঝাই একটি ট্রাক যাচ্ছিল। বাঁকুড়ার দিক থেকে আসছিল পাথরকুচি বোঝাই অন্য একটি ট্রাক। ওই সেতু থেকে সামান্য দূরে ট্রাক দু’টির মধ্যে মুখোমুখি ধাক্কা লাগে। দু’টিতেই আগুন লেগে যায়। পাথরকুচি বোঝাই ট্রাকটির চালক মনোজবাবু আগুনে পুড়ে যান। সারের ট্রাকটির চালক গঙ্গাধর সর্দারের দু’টি পা গুরুতর জখম হয়। ওই ট্রাকেরই খালাসি মধুসূদন সর্দারের চোয়ালে আঘাত লাগে। খানিক পরে বড়জোড়া পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের সাহায্যে জখমদের বের করে আনেন। দুর্গাপুর থেকে দমকলের দু’টি ইঞ্জিন এসে প্রায় আধঘন্টার চেষ্টায় আগুন নেভায়।
বাসিন্দারা জানান, আগেও ওই রাস্তায় বহু দুর্ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু দুর্ঘটনার পর আগুন লাগার ঘটনা এই প্রথম। স্থানীয় বাসিন্দা সুবিমল ঘড়ুই, রাজু বাউড়িরা বলেন, “ভোরে হঠাৎ বিকট শব্দে ঘুম ভেঙে যায়। রাস্তায় এসে দেখি দু’টি ট্রাক জ্বলছে। ট্রাকের চাকা পুড়ে ফেটে গিয়েছিল।” বাসিন্দারা জানান, এমনিতেই ট্রাক দু’টির সামনের অংশ দুমড়ে মুচড়ে গিয়েছিল। আগুন লাগায় তা পুরো ছাই হয়ে যায়। বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার বলেন, “সম্ভবত, একটি ট্রাকের কেবিনে দাহ্য পদার্থ থাকায় ধাক্কা লাগার সঙ্গে সঙ্গেই আগুন লাগে। একটি ট্রাকের চালক কেবিনে আটকে পড়ায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গিয়েছেন।”
জখম ৩ জনকে উদ্ধার করে প্রথমে বড়জোড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে পাঠানো হয় বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে মনোজবাবুকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। সকাল ৯টা নাগাদ ক্রেন এনে সরানো হয় ট্রাক দু’টিকে। ঘটনার জেরে বাঁকুড়ার বেলিয়াতোড় থেকে দুর্গাপুরের ডিভিসি ব্যারাজ পর্যন্ত ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। আটকে পড়ে স্কুলের পুল-কার, যাত্রীবাহী বাস-সহ অন্যান্য যানবাহন। রেহাই পায়নি অ্যাম্বুল্যান্সও। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে দুপুর ১ টা গড়িয়ে যায়। |