হাইড পার্কের সার্পেন্টাইন গ্যালারিতে আমন্ত্রিত অসংখ্য অতিথির সঙ্গে কথা বলছিলেন মহেশ ভূপতি আর রোহন বোপান্না। বক্সার বিকাশ যাদবকে দেখে মনে হল প্রচণ্ড উত্তেজিত। প্রথম অলিম্পিক বলে কথা!
তিন দিন পরেই শুরু অলিম্পিক গেমস। তার আগে সুন্দর একটা পরিবেশে কিছুটা আনন্দ করে নেওয়া আর কী।
টিম ইন্ডিয়া-র অলিম্পিয়ানদের সম্মানে পার্টিটা দিয়েছিলেন লক্ষ্মী মিত্তল। যিনি বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ভারতীয় তো বটেই, ব্রিটেনের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিও। প্রতিভাবান ভারতীয় অ্যাথলিটদের কোচিং এবং ট্রেনিংয়ের জন্য তাঁর উদ্যোগেই শুরু হয়েছে মিত্তল চ্যাম্পিয়ন্স ট্রাস্ট। বর্তমানে এই ট্রাস্ট ৩৩ জন অ্যাথলিটের দায়িত্ব নিয়েছে। যাঁদের মধ্যে ১৫ জনই এ বারের লন্ডন অলিম্পিকে নামতে চলেছেন।
“লক্ষ করে দেখবেন, প্রত্যেক অলিম্পিকের পরেই একটা অভিযোগ ওঠে। একশো কোটি মানুষের দেশ একটাও পদক জিততে পারে না?” বলছিলেন অমিত ভাটিয়া। লক্ষ্মী মিত্তলের জামাই এবং মিত্তল চ্যাম্পিয়ন্স ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি। কী ভাবে তৈরি হল এই সংস্থা? অমিতের ব্যাখ্যা, “আমরা ঠিক করেছিলাম এই অভিযোগগুলো বন্ধ করতে হবে। ভারতীয় অ্যাথলিটদের সাহায্য করার চেষ্টা করতে হবে। ২০০৪ আথেন্স অলিম্পিকের পর ট্রাস্ট করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ২০০৮ বেজিং গেমসে আমাদেরই ট্রেন করা এক অ্যাথলিট ভারতকে প্রথম ব্যক্তিগত সোনা এনে দিয়েছিল অভিনব বিন্দ্রা। এ বছর আমরা আরও পদক জিতব আশা করছি।” |
মিত্তল ট্রাস্ট ঠিক কী ভাবে অ্যাথলিটদের পাশে দাঁড়িয়েছে, তার খুঁটিনাটি তথ্য এর পর পাওয়া গেল সিইও মণীষা মলহোত্রের কথায়। “পদক জেতা কিন্তু শুধু প্রতিভার উপরই নির্ভর করে না। সঠিক ট্রেনিং, পুষ্টি, মনোবিদদের সাহায্য, এমনকী সঠিক জুতোজোড়া থাকাও খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে,” বলছিলেন মণীষা। তাঁর আরও ব্যাখ্যা, “আমরা হাজার-হাজার অ্যাথলিটের কাছ থেকে আবেদন পাই। কিন্তু কাকে ট্রাস্টের আওতায় আনা হবে, সেটা খুব যত্নের সঙ্গে ঠিক করা হয়। আমাদের সংস্থায় আমরা তিরন্দাজ, বক্সার, শ্যুটার, কুস্তিগীরদের ট্রেনিং দিচ্ছি। যে সব বিভাগ থেকে পদক জেতার সম্ভাবনা আছে বলে আমরা মনে করি, সেই বিভাগের অ্যাথলিটদের উপরই ফোকাস করা হয়।” ঝাড়াই-বাছাই করে অ্যাথলিট নির্বাচন করার নীতি সমর্থন করে মণীষা বলছেন, “আমাদের বাস্তববাদী হতে হবে। কেউ যদি বলে সে রোয়িংয়ের জন্য ট্রেনিং নিতে চায়, তো সেটা প্রচুর খরচসাপেক্ষ হবে। তাই আমরা এমন সব বিভাগের উপর ফোকাস করি যেগুলো আমরা যুক্তিসম্মত ভাবে সামলাতে পারব। আর আমরা এমন ভাবে ট্রেনিং দিই যাতে পদকের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়।”
২০১২ অলিম্পিক সংগঠনেও বেশ বড় ভূমিকায় রয়েছেন লক্ষ্মী মিত্তল। অলিম্পিক স্টেডিয়ামের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা আর্সেলর-মিত্তল অর্বিট যে স্টিল থেকে তৈরি হয়েছে, সেটা তিনিই দান করেছেন। গেমসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পৃষ্ঠপোষক হিসেবে দেখা হচ্ছে তাঁকে।
সার্পেন্টাইন গ্যালারিতে রবিবারের পার্টি বিশেষ একটা প্যাভিলিয়নে আয়োজিত হয়েছিল। আর্সেলর-মিত্তলের সঙ্গে সেই প্যাভিলিয়ন তৈরির দায়িত্বে ছিলেন বিখ্যাত দুই স্থপতি হের্জগ এবং দে মেউরোঁ। বেজিংয়ে যে স্টেডিয়ামটা ‘বার্ডস নেস্ট’ হিসেবে বিখ্যাত হয়েছিল, সেটা এঁদের দু’জনেরই কীর্তি। প্যাভিলিয়ন তৈরির দায়িত্বে ছিলেন আরও এক জন। ইনি বিদ্রোহী চিনা শিল্পী আই ওয়েইওয়েই। প্যাভিলিয়নটা শিল্পের উৎকৃষ্ট নিদর্শন। এক বছর পরে সেটা এখান থেকে মিত্তলের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হবে। এবং সেখানেই থাকবে। |