অলিম্পিক (২০০৪ বেজিং) থেকে একটা পদক পেতেই ভারতীয় বক্সাররা নিজেদের নিয়ে বড্ড বড়াই করা শুরু করে দিয়েছে। লন্ডন গেমসে পৌঁছতেই বিজেন্দ্র সিংহের দিকে মিডিয়ার এই তির ছুটে এল। এবং চার বছর আগের অলিম্পিক ব্রোঞ্জজয়ী ভারতীয় বক্সার সেই অভিযোগকে সটান নক-আউট করে দিচ্ছেন এই বলে যে, “না, না। মোটেই বড়াই নয়। এ সব বর্তমান ভারতীয় বক্সারদের আত্মবিশ্বাসেরই প্রমাণ দিচ্ছে। আমরা বিশ্বের কোনও বক্সারকেই এখন আর ভয় পাই না।”
নিজেদের প্রজন্মের সঙ্গে পূর্বসূরি ভারতীয় বক্সারদের মানসিকতারও তুলনা টেনেছেন ২০১২ অলিম্পিকে ভারতের অন্যতম পদক-ভরসা বিজেন্দ্র। “আগে আমাদের সিনিয়র বক্সারদের লক্ষ্য ছিল কোনও রকমে অলিম্পিকে যোগ্যতা অর্জন করা। কিন্তু এখন আমাদের দেশের তরুণ বক্সাররা অলিম্পিকের রিংয়ে নামছে পদক জেতার শপথ নিয়ে। ভারতের বর্তমান প্রজন্মের বক্সারদের মধ্যে সেই আত্মবিশ্বাস আছে।”
পূর্বসূরিদের এক রকম খোঁচা মেরেছেন বিজেন্দ্র। “বেশ মনে পড়ছে, আগে দেশের সিনিয়র বক্সাররা আমাদের ভয় দেখাতেন এই বলে যে, আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী বিশ্বচ্যাম্পিয়ন বা তার ধারেকাছে কেউ। ফলে তাকে হারানো অসম্ভব। কিন্তু এখন সেই ছবি পালটে গেছে।” |
এ দিন গেমস ভিলেজে দেশি-বিদেশি সাংবাদিকদের বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ের প্রাক্তন এক নম্বর ভারতীয় বক্সার জানান, নিজের খেলোয়াড়জীবনের গোড়ায় কোনও বক্সার নন, তাঁর প্রেরণা ছিলেন টেনিসের লিয়েন্ডার পেজ এবং হকির ধনরাজ পিল্লাই। “পেজ আর পিল্লাইয়ের কৃতিত্ব আমাকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখত। ওদের মতো আমিও গোটা দেশের চোখে তারকা হয়ে উঠতে চাইতাম। স্বপ্ন দেখতাম অলিম্পিকে নামার।”
সেই সময়ের স্মৃতিতে ডুব দিয়ে বিজেন্দ্র বলেছেন, “নিরানব্বই সাল নাগাদ খবরের কাগজ আর টিভি-তে স্পোর্টস শ্যুট-এর বিজ্ঞাপনে লিয়েন্ডারকে দেখতাম। এখনও মনে আছে, ছ’শো টাকা দাম ছিল সেই জুতোর। আমিও স্বপ্ন দেখতাম ওই রকম বিজ্ঞাপন করার। ব্র্যান্ড অ্যাম্বাস্যাডর হওয়ার। ঈশ্বর মহান। আমার স্বপ্ন আজ সফল। ধনরাজ আমার আর এক হিরো। তাঁর একটা কথা আমি চিরকাল মনে রেখেছি বিদেশে গেলে পর্যটক হয়ে যাব না। দেশের প্রতিনিধি হয়ে যাব!”
অলিম্পিক পদক জয়ী হরিয়ানার বক্সার বলছেন, তাঁর খেলোয়াড়জীবন নিয়ে তিনি তৃপ্ত, কিন্তু আদৌ থেমে থাকবেন না। “স্বপ্নেও কোনও দিন ভাবিনি যে, তিনটে অলিম্পিকে আমি যাব। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, হৃদয় আরও চায়। আরও অলিম্পিক পদক আমার দেশকে দিতে চাই আমি। গত বারোটা বছর স্রেফ ঝড়ের গতিতে কেটে গেছে। কিন্তু আমি খুব শৃঙ্খলাবদ্ধ আর সহজ-সরল জীবনযাপন করি। ফলে আরও অনেক বছর ফর্মের তুঙ্গে থাকব বলেই বিশ্বাস করি,” বলেছেন তিনি। বক্সার না হলে কী হতেন? “অবশ্যই সৈনিক। আমার ভাই সেনাবাহিনীতে আছে। কার্গিল যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। ওর জন্য আমরা গর্বিত।” বক্সিং থেকে অবসর নেওয়ার পর কী করবেন সেটাও ঠিক করে রেখেছেন বিজেন্দ্র। “সিনেমায় নামার কাজ শুরু করে দিয়েছি। ভবিষ্যতের ফিল্মস্টারও বলতে পারেন আমাকে।” |