চিকিৎসায় গাফিলতিতে এক রোগী মৃত্যুর অভিযোগ ঘিরে ফের উত্তেজনা ছড়াল মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। মৃতের পরিবারের লোকজন ভাঙচুর চালালেন হাসপাতালে। পরিস্থিতি সামলাতে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। ভাঙচুরে জড়িত অভিযোগে ৭ জনকে গ্রেফতারও করা হয়। ঘটনার জেরে সমস্যায় পড়েন অন্য রোগীর আত্মীয়রা। লাঠিচার্জের সময় তাঁদের অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে এ দিক-সে দিক দৌড়তে শুরু করেন। হাসপাতাল সুপার যুগল কর বলেন, “অভিযোগ খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করা হবে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে।” পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরীর বক্তব্য, “ভাঙচুরে জড়িতদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে।” অনভিপ্রেত ঘটনা এড়াতে হাসপাতাল চত্বরে বাড়তি পুলিশি নজরদারি বন্দোবস্ত করা হয়েছে। |
হাসপাতালে ভাঙচুরের পর। —নিজস্ব চিত্র। |
চিকিৎসায় গাফিলতিতে রোগী মৃত্যুর অভিযোগ ঘিরে শনিবার সন্ধ্যায় একপ্রস্থ উত্তেজনা ছড়ায় মেদিনীপুর মেডিক্যালে। বিকেলে শান্তনু মুদি নামে (১২) এক কিশোরের মৃত্যু হয়। বাড়ি খড়্গপুর লোকাল থানার দুবগোহালে। গাছ থেকে পড়ে জখম হয়ে সপ্তাহ দেড়েক আগে মেডিক্যালে ভর্তি হয়েছিল সে। তার অস্ত্রোপচারও হয়। ঠিক মতো চিকিৎসা হলে শান্ত মারা যেত না এই দাবিতে গভীর রাত পর্যন্ত হাসপাতালের সহকারী সুপারদের ঘেরাও করে রাখেন মৃতের পরিবারের লোকজন। লিখিত অভিযোগও জানানো হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অভিযোগ খতিয়ে দেখে উপযুক্ত পদক্ষেপ করার আশ্বাস দিলে ঘেরাও ওঠে। রবিবার সকালে উমারানি ঘোষ (৪১) নামে এক মহিলার মৃত্যু ঘিরে ফের উত্তেজনা ছড়ায় মেডিক্যালে। বাড়ি খড়্গপুর টাউন থানার ইন্দায়। সর্পদষ্ট হয়ে শনিবার সকালে তিনি মেডিক্যালে ভর্তি হয়েছিলেন। মৃতার পরিজনদের অভিযোগ, চিকিৎসায় গাফিলতির জেরেই এই মৃত্যু। এ নিয়ে জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে তাঁদের বচসাও হয়। তারপর হাসপাতালে ভাঙচুর শুরু করেন উমারানিদেবীর পরিবারের লোকজন। তখন দুপুর দেড়টা। মেডিক্যালের নতুন ভবনের ৩ তলায় বেশ কিছু বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম নষ্ট করা হয়। খবর পেয়ে কোতয়ালি থানার আইসি জয়দীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়তি পুলিশ বাহিনী নিয়ে হাসপাতালে এসে পৌঁছন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিচার্জ শুরু করে পুলিশ। কয়েকজন জখম হন। ভাঙচুরে জড়িত অভিযোগ ৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
মেদিনীপুর মেডিক্যালে চিকিৎসকদের সঙ্গে রোগীর পরিজনদের বচসা নতুন নয়। মাঝেমধ্যেই চিকিৎসা পরিষেবায় গাফিলতির অভিযোগ ওঠে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, সব অভিযোগ ঠিক থাকে না। অনেক সময় ঠিক মতো চিকিৎসা হলেও রোগীর পরিবারের লোকজন গাফিলতির অভিযোগ তুলে সরব হন। পাল্টা অভিযোগও রয়েছে। একাংশ রোগীর পরিজনদের বক্তব্য, সিনিয়র ডাক্তাররা সব সময় থাকেন না। জুনিয়র ডাক্তারদের উপর অনেকখানি নির্ভর করতে হয়। রবিবারের ঘটনার প্রেক্ষিতে ফের পুলিশি নিরাপত্তার দাবি তুলেছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। নিরাপত্তার দাবিতে রবিবার বিকেল থেকে কাজও বন্ধ রেখেছেন তাঁরা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অভিযোগ থাকলে তা লিখিত ভাবে জানানো যেতেই পারে। কিন্তু ভাঙচুর কেন? জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে রাতে বৈঠকে বসার কথা কর্তৃপক্ষের। |