|
|
|
|
|
|
|
বাইরে রাগ দেখালেও ভেতরে ও অসহায় |
এমন অনেক ছেলেমেয়ে থাকে যারা ছোট থেকেই আত্মকেন্দ্রিক। বড় হয়ে অনেক সময় এরা অবসেসিভ
কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার-এর মতো বিভিন্ন মানসিক রোগে ভোগে। সময়মতো মনচিকিৎসক দেখিয়ে
ওষুধপত্র খেলে এই ধরনের রোগ সারিয়ে তোলা যায়। পরামর্শ দিচ্ছেন মনোবিদ জয়ন্তী বসু |
|
আমার দুই সন্তান। মেয়ে বড়, এখন চাকরি করে। আর ছেলে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ছে। সমস্যা আমার মেয়েকে নিয়ে। ও যখন ক্লাস এইটে বা নাইনে পড়ে, তখন স্কুলে শিক্ষিকারা আমায় এক-দু’বার ডেকে পাঠান। তাঁরা বলেছিলেন যে, স্কুলে থাকাকালীন আমার মেয়েকে নাকি হাসতে দেখা প্রায় যায়ই না। সব বিষয়ে খুব সিরিয়াস এবং ভীষণ আত্মকেন্দ্রিক। পড়ার খাতিরে ও বন্ধুবান্ধব তো দূর, বাড়ির লোকের সঙ্গেও আপস করত না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ও কেমন শুচিবায়ুগ্রস্ত হয়ে উঠেছে। বর্তমানে আমাকেও খুব একটা পছন্দ করে না। মা হিসেবে আমি অনেক বারই ওকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি, কিন্তু ও আমার কোনও কথাই শুনতে রাজি নয়। স্বামী এখনও চাকরি করলেও আর্থিক কারণে আমার পক্ষে ছেলেকে নিয়ে আলাদা থাকা সম্ভব নয়। যদিও আমি মেয়ের কাছ থেকে কোনও অর্থনৈতিক সাহায্য নিই না। ওকে বিয়ে করার কথাও বলেছি। ওর বক্তব্য, আগে ও নিজের কেরিয়ার ঠিকমতো গড়বে, আর্থিক ভাবে সক্ষম হবে, তারপর বিয়ের কথা ভাববে। ও যে ধরনের আচরণ করে তার কিছু নমুনা
১) ঘরের কোথাও কোনও ধুলো-ময়লা রয়েছে কিনা খালি খুঁজবে। যদি এক কণাও দেখতে পায়, তা হলে চিৎকার-চেঁচামেচি করে সারা বাড়ি মাথায় করবে। এতে পাড়ার লোকেরা অনেক সময় অসন্তুষ্ট হয়।
২) জুতো, সে বাড়ির লোকের হোক বা বাইরের, বাড়ির চৌহদ্দির বাইরে খুলে রাখতে হবে। নইলে সেগুলোকে জল দিয়ে ধুতে হবে।
৩) খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে প্রায় সব ব্যাপারেই ভাইকে খুব ঈর্ষা করে।
৪) ওর বাবার কাছ থেকে ঘুরে এলে, আমাদের ওপর ভীষণ রাগারাগি করবে। ওকে কী ভাবে সুস্থ করে তুলব সেই বিষয়ে যদি পরামর্শ দেন, তা হলে বাধিত হব।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক |
|
ছবি: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য |
|
তোমাকে বলছি |
তোমার মনের মধ্যে হয়তো ছোট থেকে কতকগুলি চিন্তাভাবনা, উদ্বেগ কাজ করেছে, যা তোমাকে স্বচ্ছন্দ থাকতে দেয়নি। তুমি এগুলি কিছুটা উপলব্ধি করেছ, কখনও হয়তো বা বিড়ম্বিত বোধ করেছ, কিন্তু বোধহয় স্পষ্ট করে কারও সঙ্গে আলোচনা করোনি। এই ধরনের ভাবনা একটি বিশেষ রোগ, যা আমাদের মস্তিষ্কের মধ্যে এক ধরনের রাসায়নিক ক্ষরণের গোলমালের ফলে হয়। নিজের বিচিত্র চিন্তা ভেবে যা নিয়ে আমরা বিড়ম্বিত হই, তা ওষুধের প্রয়োগে, অর্থাৎ ওই রাসায়নিকগুলির অনুপাত ঠিক করে দিলে অনেক সহজে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে চলে আসে। জীবনটা অনেক বেশি সুন্দর ও সহজ মনে হয়। তাই তোমাকে আমার অনুরোধ যে তুমি এক জন ভাল মন-চিকিৎসক এবং মনোবিদের কাছে গিয়ে তাঁদের নির্দেশ মতো ওষুধ খাও ও কিছু অভ্যাস তৈরি করো বা বদলাও। দেখবে, জীবনের মানেটাই পাল্টে যাবে। |
|
মাকে বলছি |
আপনার মেয়ের আচরণের যে বর্ণনা দিয়েছেন, তার থেকে মনে হচ্ছে ওর ছোটবেলা থেকেই কয়েকটি সমস্যা রয়েছে। ও বোধহয় একটু আত্মগত ছিল, সহজ মেলামেশা করতে অসুবিধা বোধ করত। নিজের সাফল্য নিয়ে হয়তো একটু বেশি উদ্বিগ্ন থাকত, যার জন্য কিছুটা আত্মকেন্দ্রিক আচরণও করে ফেলত। অর্থাৎ, সামাজিকতায় কখনও স্বচ্ছন্দ ছিল না। ওর ব্যক্তিত্ব একটু অনড় ধরনের; পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিজেকে বদলে ফেলা ওর পক্ষে সহজ নয়। এর সঙ্গে বর্তমানে যে সমস্যাগুলি দেখা দিয়েছে, সেগুলি হল পরিচ্ছন্নতার বাতিক আর বিরক্তি। সব মিলিয়ে ওর মধ্যে বেশ কিছুটা মানসিক জটিলতা দেখা যাচ্ছে।
পরিচ্ছন্নতার উপর যে ওর অতিরিক্ত জোর তা এক ধরনের উদ্বেগের পরিচায়ক। এটি একটি বিশেষ মানসিক রোগের লক্ষণ যাকে বলা হয় অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার। এতে কিছু চিন্তা নিজের অনিচ্ছা সত্ত্বেও মনের মধ্যে আসতে থাকে, আর মনে হয় যে কিছু কিছু জিনিস যথাযথ ভাবে না রাখলে বা কিছু কাজ যথাযথ ভাবে সম্পন্ন না হলে খুব বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। শুচিবাই, পরিচ্ছন্নতার বাতিক এই রোগের খুব সাধারণ লক্ষণ। এ ছাড়াও ওর যে অকারণ রাগ আর বিরক্তি, তা এই রোগের কারণেও হতে পারে, আবার পাশাপাশি অন্য কোনও রোগের লক্ষণ হতে পারে। অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডারের সঙ্গে অনেক সময় বিষণ্ণতার যোগ থাকে। কখনও বা বাস্তব থেকে দূরে সরে যাবার প্রবণতাও জড়িয়ে যায়। ওর যে আশৈশব সামাজিকতায় অসুবিধা, তা এই দু’টি পার্শ্বরোগের যে কোনওটির জন্যও হতে পারে। বিষণ্ণ মানুষ আশপাশের মানুষের সঙ্গে যোগ রাখতে চায় না। বাইরের কেউ যদি বেশি ঘনিষ্ঠতা করতে আসে, তা হলে সে বিরক্ত হয়। আপনার দেওয়া তথ্য থেকে আমি নিশ্চিত নই যে এই দু’টি সম্ভাবনার কোনটি আপনার মেয়ের ক্ষেত্রে ঠিক।
আপনার প্রথমেই কোনও মনচিকিৎসকের সাহায্য নেওয়া উচিত। তিনি আপনার কাছে আরও তথ্য জেনে এবং ওকে সামনাসামনি পর্যবেক্ষণ করে ওর যথাযথ ডায়াগনসিস করতে পারবেন। সেই অনুসারে ওকে ওষুধ দেওয়া দরকার। আমি যে রোগগুলির সম্ভাবনার বললাম, তার সব ক’টির ক্ষেত্রেই ওষুধে অনেকটা উপকার পাবেন। ওষুধের পাশাপাশি ওর মনের ভিতরে যে উদ্বেগ ও ভ্রান্ত ধারণা আছে, সেগুলিকে আলোচনা করা দরকার। অনেক সময় এই ধারণাগুলি এমন ভাবে জট পাকিয়ে থাকে যে রোগী সরাসরি আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে আলোচনা করতে অস্বস্তি বোধ করে। তাই এ ক্ষেত্রে মনোবিদের সহায়তা নেওয়া প্রয়োজন। তিনি ওর চিন্তাধারার জট ছাড়িয়ে এক-এক করে ধারণাগুলিকে দূর করতে ওকে সাহায্য করবেন। মনোবিদ ওকে কিছু কাজ দেবেন ও বিশেষ নির্দেশ দেবেন, যেগুলি পালন করলে ও এই অকারণ উদ্বেগ কাটিয়ে উঠতে পারবে।
এই রোগের আরেকটি সমস্যা হচ্ছে নিজের উপর আস্থা কমে যাওয়া। বাইরে যতই রাগ দেখাক বা শক্ত হয়ে থাকুক, ভিতরে কোথাও ওর একটা অসহায়তা আছে। হয়তো ভাইয়ের উপর ঈর্ষা তারই প্রকাশ। আপনি ওকে বেশি উপদেশ না দিয়ে বা বকাবকি না করে একটু বেশি স্নেহের প্রকাশ করুন। ওকে রিল্যাক্সড থাকতে সাহায্য করুন। সঠিক ওষুধ ও আচরণভিত্তিক চিকিৎসার মাধ্যমে কিছুটা সুস্থ হলে তবেই হয়তো বিয়ের কথা ভাবা উচিত। না হলে এই অকারণ উদ্বেগ নতুন সংসারে মানিয়ে নেবার সময় সমস্যা তৈরি
করতে পারে। |
|
ছেলেমেয়েকে নিয়ে মা-বাবার সমস্যা? নাকি মা-বাবাকে নিয়ে ছেলেমেয়ের সমস্যা?
পড়ার খরচ
নিয়ে অভিভাবকের দুশ্চিন্তা? দূরের শহরে পড়তে যাওয়ার নামে মেয়ের গায়ে
জ্বর আসা? যে
মুশকিলই হোক না কেন, পরিবারের সবাই মিলেই সমাধানে পৌঁছতে হবে।
এ বার থেকে ‘প্রস্তুতি’-ও কথা বলবে গোটা পরিবারের সঙ্গেই। অভিভাবকদের বা
সন্তানের যে
কোনও দুশ্চিন্তার
কথা আমাদের জানান (এবং জানাও)
নিজেদের সমস্যা।
সুচিন্তিত উত্তর দেবেন বিশেষজ্ঞরা।
ইমেল: prastuti@abp.in বিষয়: Haate Haat।
অথবা, চিঠি পাঠান (এবং পাঠাও) এই ঠিকানায়:
হাতে হাত, প্রস্তুতি,
আনন্দবাজার পত্রিকা,
এ বি পি প্রাঃ লিঃ,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা ৭০০ ০০১ |
|
|
|
|
|
|