ইঁদুরের উপদ্রব এ বার শিলিগুড়ি পুরসভার সভাকক্ষেও। মেয়র এবং তাঁর পারিষদদের অনেকেই কার্পেটে মোড়া সভাকক্ষে ইঁদুরের ছোটাছুটি দেখে বিরক্ত। সভার সময়ে ইতিউতি ছোটাছুটি দেখা যায়। সভার পরে ঘর ফাঁকা হলে মেঝেয় পিলপিল করে হাজির হয় ইঁদুর। সভাকক্ষের চা-বিস্কুটের ভগ্নাংশ খেতেই হুটোপুটি চলে গণেশ-বাহনদের। সব দেখেশুনেও হাত গুটিয়ে বসে থাকা ছাড়া উপায় নেই বলে মনে করেন পুরকর্মীরা। কারণ, গণেশের বাহন বলে কথা! অনেকেই মারতে দিতে রাজি নন। তার উপরে পরিবেশপ্রেমীরা বাস্তুতন্ত্রের কথা বলে হইচই বাঁধানোর আশঙ্কা রয়েছে। সম্ভবত সে জন্যই উদ্বিগ্ন মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত। মেয়র বলেন, “ইঁদুর শহর জুড়েই রয়েছে। এমনকী বিভিন্ন ওয়ার্ডে নর্দমার ধারের মাটি খুঁড়ে নিকাশির নালার ক্ষতি করছে। তবে সভাকক্ষেও ইঁদুর ঘোরাফোরা করার বিষয়টি চিন্তার। সভাকক্ষ লাগোয়া চা তৈরি, খাবার রাখার ঘরের জন্যই এই সমস্যা বলে মনে হচ্ছে। তেমন হলে সেখান থেকে খাবার ঘরটি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা হবে।” কাউন্সিলরদের অনেকে সভাকক্ষে ইঁদুর ঘোরাফেরার বিষয়ে জানেন। বস্তুত, সভাকক্ষ তথা পুরভবনে ইঁদুর থাকার বিষয়টি ভবিষ্যতে বিপদের কারণ হতে পারে বলেও তাঁরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাদের অনেকের বক্তব্য, ইঁদুরের থেকে ‘প্লেগ’ ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে। মেয়র পারিষদ দেবশঙ্কর হালদার বলেন, “শুধু সভাকক্ষেই নয়। তিন তলায় তাঁর ট্রেড লাইসেন্স বিভাগের দফতরেও ইঁদুরের লাফালাফি।” মেয়র পারিষদ দুলাল দত্ত জানান, সভাকক্ষে ইঁদুর ঘুরতে তিনিও দেখেছেন। সমস্যা মেটাতে তিনি মেয়রকে অনুরোধ করবেন।
কিন্তু ইঁদুর নিয়ন্ত্রণ করতে কী ব্যবস্থা নেওয়া দরকার? সে ব্যাপারে পুর কর্তৃপক্ষ কোনও স্থির সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। ওষুধ দিয়ে ইঁদুর মেরে ফেলার বিষয়টি বিপজ্জনক বলে মনে করেন অনেকেই। কেননা সে সব কীটনাশক থেকে মানুষের শরীরেরও ক্ষতি হয়। ইঁদুর মেরে ফেলা, ধরার সমস্যা রয়েছে। তাতে বাস্তুতন্ত্রে এবং জীব বৈচিত্রে প্রভাব পড়বে বলেই মনে করছেন পরিবেশপ্রেমী সংস্থা হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশন (ন্যাফ)-এর মুখপাত্র অনিমেষ বসু। তিনি বলেন, “শহর জুড়ে নির্বিচারে গাছ কেটে বহুতল গড়ে উঠছে। তাতে বাস্তুতন্ত্র নষ্ট হচ্ছে। ইঁদুরের থাকার জায়গা ধ্বংস হচ্ছে। ইঁদুর যাবে কোথায়? ইঁদুর ধরে মেরে ফেলা হলে তাতে বাস্তুতন্ত্রে প্রভাব পড়বে। আগে শহরে অনেক পেঁচা থাকত। পেঁচা ও বিড়ালের জন্য ইঁদুরের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে থাকত। শহরের উন্নয়ন হোক। তবে বাস্তুতন্ত্র বা পরিবেশের দিকেও নজর দিতে হবে।” বিরোধী দলনেতা মুন্সি নুরুল ইসলাম বলেন, “সব ক্ষেত্রেই পুর কর্তৃপক্ষ যেমন অব্যবস্থা করে রেখেছেন সভাকক্ষে ইঁদুর ঘোরার ক্ষেত্রেও তাই। |