লোকবলের অভাবে ‘আইনভঙ্গকারী’ পথচারীদের অধিকাংশের থেকেই জরিমানা আদায় করতে পারছেন না আইনরক্ষকেরা।
সিগন্যালের লাল আলো, ‘জেব্রা ক্রসিং’-এর তোয়াক্কা না করেই রাস্তা পার হচ্ছেন নাগরিকদের কেউ-কেউ। কখনও মোবাইলের ‘হ্যান্ডস-ফ্রি’ কানে গুঁজেই। অভিযোগ, ‘বেপরোয়া’ পথচারী নয়, পুলিশের নজর থাকছে শুধু যানবাহনের দিকেই।
এই পরিস্থিতির মধ্যেই বেপরোয়া গাড়ির কাছ থেকে জরিমানা আদায়ের মাসিক ‘হিসেব’ রাখার একটি কাগজ নিয়ে ধন্দে পড়েছেন শহরের ট্রাফিক সার্জেন্টদের একাংশ। সম্প্রতি লালবাজার থেকে কলকাতার বিভিন্ন ট্রাফিক গার্ডে ওই নথি পৌঁছেছে। এক ট্রাফিককর্তা বলেন, “রাজস্বের পরিমাণ কী ভাবে বাড়ানো যায়, তার হিসেব কষতেই ওই তালিকা তৈরি হয়েছিল। তবে এ নিয়ে নির্দেশ জারি হয়নি। ট্রাফিক গার্ডদের সব সময়েই বলা হয়, যত বেশি সম্ভব আইনভঙ্গকারী গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে।” তিনি আরও জানান, সংযোজিত এলাকা যোগ হওয়ায় জরিমানার পরিমাণ বেড়েছে। ট্রাফিক গার্ডদের শুধু জরিমানা আদায়ে আরও তৎপর হতে বলা হয়েছে।
কিন্তু জরিমানা আদায়ে এই বিভেদ কেন? আইনভঙ্গকারী পথচারীদের থেকে ঠিক মতো জরিমানা নিয়েও তো বাড়ানো যায় রাজস্ব?
লালবাজার সূত্রে খবর, শহরের সব রাস্তায় আইনভঙ্গকারী পথচারীদের থেকে জরিমানা আদায়ের পরিকাঠামো আপাতত নেই। ডিসি (ট্রাফিক) দিলীপ আদক বলেন, “এখন ডোরিনা ক্রসিং, কে সি দাস, মানিকতলা, গড়িয়াহাট, মৌলালি, রুবির মতো কিছু গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে ওই নজরদারি রয়েছে।”
পুলিশ সূত্রে খবর, ট্রাফিক বিভাগের এএসআই বা তার উপরের পদমর্যাদার কোনও অফিসার ওই জরিমানা নিতে পারেন। পথচারী সিগন্যাল ভেঙে অথবা মোবাইল কানে রাস্তা পেরোলে ১০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। লালবাজারের এক ট্রাফিককর্তার বক্তব্য, “লোকবলের অভাবে শহরের সব রাস্তায় পথচারীদের উপরে নজরদারি চালানো আপাতত সম্ভব নয়। এখন থানা ও ট্রাফিক বিভাগ যৌথ ভাবে ওই কাজ চালায়। গড়ে ১০ টাকা করে জরিমানা হয়। নাগরিক সচেতনতার অভাবেই এ সমস্যা থেকে গিয়েছে।”
এ দিকে, হিসেব রাখার কাগজটি পেয়ে নানা ধারণা তৈরি হয়েছে ট্রাফিক সার্জেন্টদের মধ্যে। কয়েক জনের মতে, এই কাগজের মাধ্যমে প্রত্যেককে মাসে ৪৩৪টি করে জরিমানা আদায়ের ‘লক্ষ্যমাত্রা’ দেওয়া হয়েছে। তবে সরকারি ভাবে সে কথা স্বীকার করা হয়নি।
ট্রাফিক বিভাগ সূত্রের খবর, কলকাতা পুলিশের কয়েকটি ট্রাফিক গার্ডে সম্প্রতি মাসিক রিপোর্টের একটি কাগজ গিয়েছে। তাতে মাসে গার্ডের প্রত্যেক সার্জেন্টের জন্য ৪৩৪টি করে জরিমানা আদায়ের কথা উল্লেখ আছে। মোটরযান বা পুর-আইনের কোন ধারায় কতগুলি কেস করতে হবে, তা-ও লেখা আছে ওই নথিতে। ওই কাগজে ছাপা আছে বেআইনি পার্কিং, নথিবিহীন বা রেজিস্ট্রেশনের নিয়ম ভাঙা গাড়ির (যেমন ব্যক্তিগত গাড়ি ভাড়া খাটানো বা নির্দিষ্ট সংখ্যার বেশি যাত্রীবহন) বিরুদ্ধে ও মোটরযান আইনের অন্য ধারায় করে জরিমানা আদায় করতে হবে। টাকার হিসেবে বেআইনি পার্কিংয়ের ক্ষেত্রে জরিমানার পরিমাণ ১০০ টাকা, নথিভুক্তকরণের নিয়ম ভাঙা গাড়ির বিরুদ্ধে ৩০০০ টাকা ও অন্য ধারাগুলিতে গড়ে ১০০০ টাকা। কয়েক জন ট্রাফিক সার্জেন্ট জানিয়েছেন, মাসে এখন গড়ে ৮০-৯০ হাজার টাকার কাছাকাছি জরিমানা আদায় করা হয়। |