পুজোর আগেই শেষ হবে ঐতিহ্যবাহী কারেন্সি হাউসের সংস্কার-পর্ব। প্রায় ছ’বছর আগে শুরু হয় ভগ্ন ভবনটির আদল ফেরানোর কাজ। তবে, বহু খুঁজেও মিলছে না ভবনটির প্রয়োজনীয় ছবি। তাই তৈরি করা যাচ্ছে না ১৭৯ বছরের প্রাচীন এই ভবনের পুনরুদ্ধার-পরিকল্পনাও। ফাঁপরে পড়েছে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া (এএসআই)।
বি বা দী বাগে ১৮৩৩ সালে তৈরি এই বাড়িটি এক কালে ছিল আগ্রা ব্যাঙ্কের সদর দফতর। পরবর্তী কালে এই ভবনের মালিকানা যায় এদেশের ব্রিটিশ অর্থমন্ত্রকের হাতে। ইতালিয় রেনেসাঁর স্থাপত্য রীতিতে তৈরি, তিনতলা এই ভবনে দীর্ঘকাল চলেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কর্মকাণ্ড। ১৯৩৭ সালের পরে ভবনটির মালিকানা বর্তায় কেন্দ্রীয় পূর্ত দফতরের (সিপিডব্লিউডি) উপরে। ২০০০ সালে তারা এই ভবন ভেঙে ১৪ তলা অফিস তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়। শুরু হয় কাজ। ঐতিহ্য বিপন্ন হওয়ার অভিযোগে প্রতিবাদ ওঠে। এগিয়ে আসে কলকাতা পুরসভা। কাজ বন্ধ করতে বাধ্য হয় সিপিডব্লিউডি। অবশেষে, ২০০৩ সালে ভবনটির দায়িত্ব দেওয়া হয় এএসআই-এর উপর।
মূল ভবনের মাঝখানে, উপর দিকে ছিল দু’টি পেল্লায় গম্বুজ। সেগুলি ভেঙে ফেলা হয়েছিল। দীর্ঘকাল রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ভবনটিও জীর্ণ হয়ে পড়ে। |
এএসআই-এর এক মুখপাত্র বলেন, “কী ভাবে এর হৃত আদল ফেরানো সম্ভব, তার সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও ভবনের ভাঙা অংশের বর্জ্য সরাতেই লেগে যায় তিন বছর। ২০০৭ থেকে শুরু হয় সংস্কারের কাজ।” এএসআই-এর পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান তপনজ্যোতি বৈদ্য বলেন, “ভবনের ঐতিহ্যের কথা মাথায় রেখে সতর্কতার সঙ্গে কাজ করা হচ্ছে। চলতি অর্থবর্ষে এ খাতে বরাদ্দ হয়েছে ৫০ লক্ষ টাকা। পুজোর আগে শেষ হয়ে যাবে সংস্কার-পবর্।”
কথা মতো, সংস্কারের পরে ভবনটির পুনরুদ্ধার-পর্ব শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু মূল ভবনের বিভিন্ন অংশের নির্ভরযোগ্য ছবি মিলছে না। তপনজ্যোতিবাবুর কথায়, “আমরা বহু জায়গায় এই ভবনের, বিশেষত গম্বুজের ছবি খুঁজেছি। কিন্তু পাইনি।” প্রস্তাব এসেছে ১২৮ ফুট উঁচু এই ভবনের মাঝে প্রায় চার হাজার বর্গফুট অংশে ফাইবার গ্লাসের স্বচ্ছ গম্বুজ স্থাপনের। কিন্তু নিছক কল্পনার ভিত্তিতে এই ভবনের পুনরুদ্ধারের কাজ করতে রাজি নয় এএসআই। কী থাকবে এই ভবনে? এএসআই-এর এক পদস্থ অফিসার জানান, সংরক্ষণ-কর্মকাণ্ড নিয়ে আলোকচিত্র প্রদর্শনীর ব্যবস্থা রাখা হবে। আগামী ৫ সেপ্টেম্বর থেকে চলবে বিদেশের ঐতিহ্য-সংরক্ষণে এএসআই-এর কাজ নিয়ে প্রদর্শনী। তপনবাবু আরও বলেন, “ব্রিটিশ আমলের প্রায় আট হাজার রৌপ্যমুদ্রা রয়েছে আমাদের হেফাজতে। সেগুলির স্থায়ী প্রদর্শনীর ভাবনাও আছে।” |