মাটির ভাঁড় থেকে প্লাস্টিকের কাপ, পানের পিক থেকে কয়লার গুঁড়ো- কী নেই! বর্ধমানগামী যে কোনও লোকাল ট্রেনে উঠলেই চোখে পড়বে এমন দৃশ্য। এমনকী অহরহ ছানাও নিয়ে যাওয়া হয় একাধিক কামরায়। আর সেই ছানার জলের গন্ধে টেকা দায় হয়ে ওঠে আশেপাশের আরও কয়েকটি কামরায়। এমনই অভিযোগ করছেন নিত্যযাত্রীরা। তাঁদের দাবি, অবিলম্বে ট্রেনের কামরাগুলির এই বেহাল দশা বদলাতে হবে। এ নিয়ে পূর্ব রেলের আসানসোল বিভাগের ডিআরএম জগদানন্দ ঝার জবাব, “নজরদারির জন্য বলা হবে সংশ্লিষ্ট দফতরকে।”
আসানসোল ছাড়াও পুরুলিয়া ও গোমো থেকে বর্ধমান পর্যন্ত লোকাল ট্রেন চলে। যাতায়াত করেন সাধারণ যাত্রী থেকে পড়ুয়া, ব্যবসায়ী থেকে চাকুরিজীবী সকলেই। এক্সপ্রেস ট্রেনগুলি সমস্ত স্টেশনে না দাঁড়ানোয় এগুলিই যাতায়াতের ভরসা তাঁদের। তাঁদের অভিযোগ, ট্রেনের কামরা নিয়মিত পরিষ্কার করা হয়না। ফলে দিনের পর দিন আবর্জনা জমে রীতিমতো দুগর্ন্ধ ছড়ায়। এছাড়া রেলের যাত্রীবাহী কামরায় ছানা নিয়ে যাতায়াত করা নিষিদ্ধ হলেও বর্ধমান থেকে নিয়মিত দুর্গাপুর ও আসানসোল শিল্পাঞ্চলে ছানা নিয়ে আসা-যাওয়া করেন ব্যবসায়ীরা। ফলে সকাল বিকেল ছানার গন্ধ আর জলে কামরায় টেকা মুশকিল হয়ে যায়। আর সেই জল শুকিয়ে গেলে গন্ধ ছনিয়ে পড়ে আশেপাশের কামরাতেও। পানাগড়ের বাসিন্দা নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ফাঁকা থাকলেও প্রথম ও শেষের দিকে কামরায় ওঠার ঝুঁকি নিই না। কারণ বাইরে থেকে বোঝার উপায় থাকে না ছানার কামরা শুরুর দিকে পড়েছে না শেষের দিকে।” তিনি জানান, চায়ের কাপ, শালপাতার টুকরো, পানের পিক-এসব তবু সহ্য করা সম্ভব। কিন্তু ছানার জলের শুকনো গন্ধ সহ্য করা কঠিন। |
যাত্রীরা আরও জানান, ছোট বস্তায় করে কয়লা নিয়ে যাওয়ার রেওয়াজ কম হলেও এখনও চলছে। স্টেশনে বস্তা নামিয়ে নেওয়া হলেও বস্তার ফাঁক গলে পড়া কয়লার কুচি বা গুঁড়ো কামরায় রয়ে যায়। পায়ে পায়ে সেই গুঁড়ো ছড়িয়ে পড়ে কামরার মেঝেতে। এমনকী রেলের নিয়মে, কামরায় মাছের চারা নিয়ে যাওয়াও নিষেধ। কিন্তু তাও চলছে অবাধে।
দুর্গাপুর থেকে কাজ সেরে প্রতিদিন লোকাল ট্রেন ধরেই বাড়ি ফেরেন বর্ধমানের দেওয়ানদিঘীর স্নেহাংশু ঘোষ। তিনি বলেন, “হাওড়া মেন বা কর্ড লাইনের ট্রেনে ভিড় অনেক বেশি। কিন্তু নোংরার দিক থেকে এ দিকের ট্রেনগুলি সামনের সারিতে।” কাঁকসার সিলামপুর হাইস্কুলের ইংরাজির শিক্ষক কৌশিক আচার্য নিয়মিত পানাগড় থেকে রানিগঞ্জ যাতায়াত করেন। তিনি বলেন, “আগে তবু মাঝে মাঝে সাফাই করা হতো। কিন্তু এখন যে কতদিন পর হয় কে জানে।” তিনি জানান, সম্প্রতি বিষয়টি রেল কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন তিনি।
রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, কর্মী সংখ্যার অপ্রতুলতা ও ট্রেনের আসা ও যাওয়ার মাঝে পর্যাপ্ত বিরতি না থাকা নিয়মিত কামরা পরিষ্কার না হওয়ার অন্যতম কারণ। পূর্ব রেলের আসানসোল বিভাগের ডিআরএম জগদানন্দ ঝা জানান, এ ব্যাপারে লিখিত কোনও অভিযোগ জমা পড়েছে কিনা জানা নেই। তবে সমস্যার কথা গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন।
এখন আশ্বাস পূরণ হয়ে, কবে ট্রেনের কামরা পরিষ্কার হয় সেটাই দেখার। |