ডলারে টাকার দাম বাড়তে থাকায় ভারতে পড়তে শুরু করেছে সোনার দর। মাঝখানে বিচ্ছিন্ন কিছু পতনের ঘটনা বাদ দিলে, বৃহস্পতিবারও ৩৬ পয়সা বেড়ে এক ডলার ছুঁয়েছে ৫৫.১২ টাকা। আর ভারতীয় মুদ্রার এই ঊর্ধ্বমুখী গতি দেখে বিশেষজ্ঞদের পূর্বাভাস, এ সপ্তাহেই দেশের বাজারে প্রতি ১০ গ্রাম সোনার দাম নামতে পারে সাড়ে ২৯ হাজারের নীচে। কলকাতায় এ দিন পাকা সোনা ছিল ২৯,৬২০ টাকা। তবে ডলার কিছুটা দুর্বল থাকায় আন্তর্জাতিক বাজারে আরও মহার্ঘ্য হয়েছে এই হলুদ ধাতু।
বস্তুত, ডলারে টাকার দাম গত বছরের অগস্ট থেকে পড়েছে প্রায় ৩০%। শুধু গত মে মাসেই তা ৭% পতনের নজির গড়ে। এক সময় ৫৬ পেরিয়ে ‘রেকর্ড’ তলানিও ছুঁয়ে ফেলেছিল ভারতীয় মুদ্রাটি। বিপদ বুঝে ডলারের জোগান বাড়াতে তৎপর হতে হয় ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ককেও। তবে সম্প্রতি দেশের আমদানি-রফতানিই দুটিই কিছুটা কমায় দেশের বাণিজ্য ঘাটতি কিছুটা নেমেছে। ফলে দ্রুত বিপুল পরিমাণ ডলার বিক্রি করতে দেখা গিয়েছে রফতানিকারীদের। পাশাপাশি শেয়ার বাজারেও ঢুকছে বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থার বিনিয়োগ। যার জেরে গত জুনের শেষ থেকে ছবিটা একটু বদলে এ পর্যন্ত ডলারে টাকা বেড়েছে ৫%। ইউরোপীয় দেশগুলিতে আর্থিক সঙ্কট অব্যাহত থাকা, দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে চিনের আর্থিক বৃদ্ধি তিন বছরের মধ্যে ন্যূনতম অঙ্কে পৌঁছনো ও মার্কিন মুলুকে বেকারত্বের হার বৃদ্ধিও ভারতে টাকার পায়ের তলার জমি শক্ত করেছে। আর এ সবের ফলেই দেশীয় বাজারে সোনার দামের ঊর্ধ্বমুখী গতিতে বাধা পড়েছে বলে জানিয়েছেন আর্থিক সংস্থা কমট্রেন্ডজ রিসার্চ-এর ডিরেক্টর জ্ঞানশেখর ত্যাগরাজন।
তিনি বলেন, “সোনার দাম নির্দিষ্ট কোনও ছকে এগোয় না। আর যেহেতু এখন টাকার মূল্য বাড়ছে, তাই ১০ গ্রাম সোনার দামও ২৯,০০০ থেকে ২৯,৭০০-র মধ্যে নেমে আসার সম্ভাবনা।”
তবে আগের তুলনায় শোধরালেও, গোটা এশিয়ায় এখনও ডলার পিছু বিনিময় মূল্যের হিসেবে সব থেকে খারাপ অবস্থা ভারতীয় মুদ্রাটিরই। এমনকী সারা বিশ্বেও মূল্য কমার নিরিখে ব্রাজিলের মুদ্রা রিয়ালের পরেই রয়েছে টাকা। এ পর্যন্ত ডলার পিছু রিয়ালের দাম কমেছে ৩২%।
বিশ্ব বাজারে অবশ্য উল্টো পথে হেঁটে আরও দামী হয়েছে সোনা। সে ক্ষেত্রে আবার ডলারের দাম কমে যাওয়াই এর জন্য দায়ী বলে জানিয়েছেন ত্যাগরাজন। তাঁর দাবি, সেখানে স্বল্প মেয়াদে সোনার দাম এক আউন্সে (২৮.৩৫ গ্রাম) ১,৫৪৫-১,৬১০ ডলারে পৌঁছনোর সম্ভাবনা। |