সংস্কারের সদিচ্ছা থাকলেও শরিকি সমস্যায় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে যে প্রতি পদে হোঁচট খেতে হচ্ছে, তা আজ আরও এক বার স্পষ্ট হয়ে গেল। কখনও তাঁর সিদ্ধান্তের পথে বাধা তৃণমূলের আপত্তি, কখনও আবার শরদ পওয়ারের ‘ক্ষোভ’। যার মোদ্দা ফল, আজ আরও এক বার ফরওয়ার্ড ট্রেডিং সংক্রান্ত বিলটি স্থগিত রাখতে বাধ্য হলেন তিনি।
গত ১২ জুলাই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার আগের বৈঠকে বিলটি এক বার স্থগিত রাখা হয়। কারণ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তি। রেলমন্ত্রী মুকুল রায় চিঠি দিয়ে মনমোহনকে সেই আপত্তির কথা জানান। তার পরে আজ ছিল মন্ত্রিসভার অর্থ বিষয়ক কমিটির বৈঠক। এখানে বিলটি আলোচ্যসূচিতে রাখা হলেও শেষ পর্যন্ত আলোচনা পিছিয়ে দিলেন মনমোহন। কেন? মুকুল তাঁকে গত কালই চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলেন, রাষ্ট্রপতি ভোটের জন্য তিনি দিল্লিতে থাকতে পারবেন না। আলোচনা যেন পিছিয়ে দেওয়া হয়।
কিন্তু সরকারি সূত্রই বলছে, মুকুলের অনুপস্থিতিই আলোচনা পিছিয়ে দেওয়ার একমাত্র কারণ নয়। বরং তার থেকে আজ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে এনসিপি প্রধান শরদ পওয়ারের ‘অনুপস্থিতি’। প্রণব মুখোপাধ্যায় চলে যাওয়ার পরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় কে দু’নম্বর স্থানটি পাবেন, এটা নিয়েই কংগ্রেসের সঙ্গে তাঁর টানাপোড়েন। তাই আজ মন্ত্রিসভার বৈঠক ‘বয়কট’ করেন কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী। শোনা যায়, আগামিকাল তিনি এবং তাঁর দলের আর এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রফুল্ল পটেল (ভারী শিল্পমন্ত্রী) দু’জনেই দফতরে আসবেন না। আরও শোনা যায়, দু’জনই মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দিতে চেয়েছেন। পওয়ারকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি শুধু বলেছেন, ‘নো কমেন্টস’!
অথচ পওয়ারের অনুপস্থিতিতে ফরওয়ার্ড কনট্র্যাক্ট রেগুলেশন সংশোধন বিলটি অনুমোদন করা সম্ভব নয়। কারণ, এটি খাদ্য মন্ত্রকের আওতায়
পড়লেও কৃষি মন্ত্রকও এর সঙ্গে জড়িত। তাই আজ তাঁর অনুপস্থিতি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
এর মধ্যে মনমোহনের উপরে আর্থিক সংস্কার নিয়ে বাণিজ্যমহলের চাপ উত্তরোত্তর বাড়ছে। বণিকসভা ফিকি-র প্রতিনিধিরা আজ প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারম্যান সি রঙ্গরাজনের সঙ্গে দেখা করে। তাঁরা আর্থিক সংস্কার নিয়ে রীতিমতো সময়সীমা বেঁধে দেন সরকারকে। রঙ্গরাজনকে তাঁরা জানান, আগামী দশ দিনের মধ্যে আর্থিক সংস্কারে গতি আনতে হবে। খয়রাতি বন্ধ করে শিল্পায়নের জন্য আর্থিক স্টিমুলাস দিতে হবে।
রাজনৈতিক পরিস্থিতি কিন্তু অন্য কথা বলছে। মমতা আজও স্পষ্ট করে দিয়েছেন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত প্রণবকে ভোট দিলেও কংগ্রেসের সঙ্গে তাঁর বিরোধের জায়গাগুলি থেকে সরে আসার ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। ফরওয়ার্ড ট্রেডিং বিল তো বটেই, খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগ, জমি অধিগ্রহণ বিল ইত্যাদি বিষয়েও দলের অবস্থান একই রয়েছে। ৮ অগস্ট থেকে লোকসভার যে অধিবেশন শুরু হতে চলেছে, সেখানে সরকারের ‘জনস্বার্থ বিরোধী’ পদক্ষেপের বিরোধিতা করতে তৈরি হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তৃণমূলের অনেক সাংসদই।
তৃণমূলের আপত্তির কথা জানা সত্ত্বেও কিন্তু আজ প্রাথমিক ভাবে ইতিবাচক সিদ্ধান্তই নেন মনমোহন। মন্ত্রিসভার আলোচ্যসূচিতে রাখা হয়েছিল ফরওয়ার্ড ট্রেডিং বিলটি। মন্ত্রিসভার এক বর্ষীয়ান সদস্যের কথায়, এ ভাবে সদর্থক বার্তাই দিতে চেয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু যে পওয়ার এই বিলের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন, তিনিই আজ সরকারের জন্য নতুন রাজনৈতিক সঙ্কট তৈরি করে দিলেন।
কংগ্রেস সূত্রে বলা হচ্ছে, এক যোগে একাধিক শরিকের সঙ্গে সংঘাত এড়াতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তবে তার মানে এই নয়, অনন্তকালের জন্য বিলটি ঝুলিয়ে রাখা হবে। বিষয়টি নিয়ে তৃণমূলকে বোঝানোর চেষ্টা চলবে। একই সঙ্গে পওয়ারের সঙ্গে রাজনৈতিক বোঝাপড়ার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হবে। |