জুতো পালিশ সিঙ্গুরের ‘অনিচ্ছুক’ কৃষকপুত্রের (২৪-৬) সংবাদ প্রকাশের প্রেক্ষিতে এই চিঠি। চাকরি না-পাওয়ার প্রতিবাদ হিসাবে প্রায়ই জুতো পালিশ করা পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়। প্রতিবাদ দেখানোর এ কী ধরনের ভাষা! এক জন সৎ চর্মকার কি শ্রমের বিনিময়ে সুন্দর জীবনযাপন করতে পারেন না? নাকি কৃষিকাজের চেয়ে চর্মকারের কাজ ছোট। আজও কৃষকের ছেলে কৃষক এবং চর্মকারের ছেলে চর্মকার এই মনুবাদী ধারণা সমস্ত রাজনৈতিক ব্যক্তিরা বহন করে চলেন। বাংলার প্রলেতারিয়েত পার্টির ছাত্র সংগঠন এস এফ আই বেশ কয়েক বছর আগে ও বি সি-দের সংরক্ষণের প্রতিবাদে হাওড়া-শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে রাস্তা ঝাঁট দিয়ে এবং জুতো পালিশ করে প্রতিবাদ প্রদর্শন করেছিল। দাবি আদায়ের নিশ্চয়ই সকলের অধিকার আছে কিন্তু অন্যের শ্রমকে ঘৃণা প্রদর্শন করার অধিকার কারও নেই।
আসলে এই ঘৃণা সচেতন এবং অবচেতন ভাবে বপন করে দেওয়া হয়। অনেক সময় কে ঘৃণা করছে, কাকে ঘৃণা করছে, সেই বোধ পর্যন্ত থাকে না। অনেক সময় ‘অযোগ্য’ ছাপ মেরে ঘৃণার তীব্রতা বাড়ানো হয়। মাঝখান থেকে নেপোয় মারে দই। স্বাধীনতার এত বছর পরেও প্রতিষ্ঠার কেন্দ্রে সাধারণত চর্মকার বা ঝাড়ুদারের সন্তান থাকে না। কোনও কৃষকের সন্তানও থাকে না।
দেবাশিস মণ্ডল। বি গার্ডেন, হাওড়া-৩
|
শান্তিনিকেতন পাঠভবনে একটি অমানবিক ঘটনার কথা জেনে দুঃখ পেলাম। পাঠভবন আমাদের বড় প্রিয় প্রতিষ্ঠান। ১৪ বছর আশ্রমশিক্ষা লাভ করেছি। ‘ম্যাট্রিক’ পাশ করেছি ৫৪ বছর আগে। আমাদের সময়েও চতুর্থ বর্গের (ষষ্ঠ শ্রেণি) একটি মেয়ে (নাম গোপন রাখলাম) বিছানা ভিজিয়ে ফেলত। মাতৃসমা ওয়ার্ডেন সুধাদি ঘর পরিদর্শনের সময় কোনও রকম বকা-ঝকা না-করে নির্দেশ দিয়েছিলেন বিছানার চাদরটা তাকেই জল দিয়ে ধুয়ে দিতে হবে। পরে সরলাদি (সব কাপড় কাচার দায়িত্বে যিনি ছিলেন) ভাল করে সাবান দিয়ে কেচে দেবেন। ভেজা তোশকটি রোদ্দুরে দেওয়ার সময় মেয়েটিকে সাহায্য করার জন্য এক-এক জনকে ‘ডিউটি’ দেওয়া হত। কড়া আদেশ ছিল, কেউ হাসাহাসি করবে না বা ‘টিটকিরি’ দেবে না। সুধাদির নির্দেশে অভিভাবক এসে মেয়েটিকে বাড়ি নিয়ে যান চিকিৎসার জন্য। ক’মাস পরে সুস্থ হয়ে সে ফিরে আসে হাসিমুখে। এই ছিল আমাদের পাঠভবন। আমাদের শান্তিনিকেতন। দু’এক জন পীড়িতমনা মানুষ এর গরিমা খর্ব করতে পারবে না।
অমিতা সরকার পাল। নয়াদিল্লি-১১০০৬৩
|
সম্প্রতি কলকাতার একটি হাসপাতালে এক মহিলা অসুস্থ হয়ে ভর্তি হন। পরে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে এলে দেখা যায়, তাঁর ডিসচার্জ সার্টিফিকেটে নিজের ধর্ম বিশ্বাসের পরিবর্তে অন্য ধর্ম লেখা রয়েছে। যদিও ভর্তির সময় রোগীর নাম, ঠিকানা ও বয়স ছাড়া তিনি কোন ধর্মে বিশ্বাসী তা জিজ্ঞাসা করা হয়নি। কতর্ব্যনিষ্ঠ কর্মী তাঁর নিজের মতো করে ভেবে লিখেছেন। পরে কর্তৃপক্ষকে ধর্মের কলমটি সংশোধন করার কথা বললে বলেন, “একটা অ্যাপ্লিকেশন করুন। কম্পিউটারে সংশোধন করতে একটু সময় লাগবে।” এই পরিপ্রেক্ষিতে আমার প্রশ্ন হল এই যে, একটা ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের সরকারি হাসপাতালে রোগী কোন ধর্মে বিশ্বাস করেন তা জানতে চাওয়া হয় কেন?
সংগ্রাম অগস্তি। বেহালা, কলকাতা-৬০ |