আজ কথা মন্ত্রিসভায়
মন সংস্কারে, ফরওয়ার্ড ট্রেডিং নিয়ে ফের সক্রিয় মনমোহন
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থন আদায় করে নেওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই আর্থিক সংস্কার কর্মসূচির রূপায়ণে সক্রিয় হয়ে উঠলেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ।
কেন্দ্রের প্রস্তাবিত ফরওয়ার্ড ট্রেডিং আইন সংশোধন নিয়ে মন্ত্রিসভার গত বৈঠকের আগে আপত্তি জানিয়েছিল তৃণমূল। এ ব্যাপারে রেলমন্ত্রী মুকুল রায়ের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে ‘নোট অফ ডিসেন্ট’ পাঠিয়েছিলেন মমতা। সেই নোট পাওয়ার পরে বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে আলোচনা স্থগিত রাখা হয়। কিন্তু কাল মন্ত্রিসভার অর্থ বিষয়ক কমিটির বৈঠকে ফের ওই বিল পেশ করতে চলেছে সরকার।
মুকুল অবশ্য আগামিকালের বৈঠক স্থগিত রাখার আর্জি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি পাঠিয়েছেন। তিনি বলেছেন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোট দিতে কলকাতায় থাকার কারণে তাঁর পক্ষে মন্ত্রিসভার বৈঠকে যোগ দেওয়া সম্ভব হবে না। সেই আর্জিতে সাড়া দিয়ে বৈঠক পিছিয়ে দেওয়ার কোনও ইঙ্গিত যদিও রাত পর্যন্ত নেই। কংগ্রেস সূত্রে বলা হচ্ছে, ভোট দিয়েও দিল্লি আসতে যাতে অসুবিধা না হয়, সে জন্য বৈঠকের সময় সন্ধ্যা ছ’টা রাখা হয়েছে।
শেষ পর্যন্ত আগামিকাল বৈঠক হবে কিনা, এবং তাতে ফরওয়ার্ড ট্রেডিং বিলে চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া যাবে কিনা তা সময় বলবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় সূত্রে বলা হচ্ছে, সময়ের দাবি মেনে রাজনৈতিক বাধা অতিক্রম করে তিনি যে সংস্কার কর্মসূচি এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছেন, সেই বার্তাই দিতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী। কাল রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা সেলের বিলগ্নিকরণের প্রস্তাবও অনুমোদন পেতে পারে মন্ত্রিসভার বৈঠকে।
প্রণব মুখোপাধ্যায়ের প্রতি মমতার সমর্থন ঘোষণার পর গত কাল এই প্রশ্নই উঠেছিল যে, তা হলে কি সংস্কার প্রক্রিয়ায় ফের রাশ টানবেন প্রধানমন্ত্রী। কেননা, দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের শুরু থেকে পেনশন, বিমা বিল, খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নিতে ছাড়পত্রের মতো সংস্কারের কর্মসূচিতে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে তৃণমূল।
কিন্তু সরকার ও কংগ্রেস শীর্ষ সূত্রে বলা হচ্ছে, বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে যে সব সংস্কার কর্মসূচির রূপায়ণ অপরিহার্য, রাজনৈতিক বাধা কাটিয়ে সেগুলি রূপায়িত করতে বদ্ধপরিকর প্রধানমন্ত্রী। এ ব্যাপারে তাঁর পাশে রয়েছেন সনিয়া গাঁধীও। মনমোহন তাঁকে বুঝিয়েছেন যে, আর্থিক বৃদ্ধি ছাড়া সামাজিক প্রকল্পগুলিতে অর্থ বরাদ্দ করা সম্ভব নয়।
মন্ত্রিসভার এক বর্ষীয়ান সদস্যের মতে, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিও সংস্কার কর্মসূচি এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার একটা সুযোগ করে দিয়েছে মনমোহনকে। প্রথমত, মুলায়ম সিংহ যাদব এখন কংগ্রেসের পাশে। দ্বিতীয়ত, সর্বভারতীয় রাজনীতিতে এক ঘরে হয়ে পড়ার আশঙ্কা থেকে তৃণমূলের সীমাবদ্ধতা এবং দুর্বলতাও গত কাল বোঝা গিয়েছে। ফলে আর্থিক সংস্কারের বিরোধিতায় তৃণমূল এখন পথে নামতে পারে, কিন্তু ইউপিএ ছেড়ে চলে যাবে না।
আর সেটা বুঝেই ঝুঁকি নিতে চাইছে কংগ্রেস তথা সরকার। সেরে ফেলতে চাইছে শিল্পমহলকে বার্তা দেওয়ার কাজ। সরকারি সূত্রে এ-ও বলা হচ্ছে যে, অচিরে ডিজেলের মূল্য নির্ধারণের বিনিয়ন্ত্রণের পথেও হাঁটা হবে। এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে, মন্ত্রিসভার এক শীর্ষ স্থানীয় মন্ত্রী আজ বলেন, “কোনও সরকারই এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে চায় না, যাতে মানুষের অসুবিধা হয়। কিন্তু পরিস্থিতির চাপে সরকারকে কিছু পদক্ষেপ করতে হয়। অতীতে রাজনৈতিক বাধা পেরিয়ে পেট্রোলের মূল্য নির্ধারণ বিনিয়ন্ত্রণ করেছে সরকার। সম্প্রতি দু’বার পেট্রোলের দামও বাড়ানো হয়েছিল। এ ব্যাপারে তৃণমূল সরব হলেও সরকার কিন্তু পিছু হটেনি।”
প্রসঙ্গত, ফরওয়ার্ড ট্রেডিং বিলের সংশোধন নিয়ে তৃণমূলের মূল আপত্তি হল, এর ফলে ফড়েদের বাড়বাড়ন্ত হবে। এবং তাতে পণ্যের দাম বাড়বে। কিন্তু কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রক ও প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের বক্তব্য, প্রস্তাবিত বিলে খাদ্যশস্যের ফাটকা বাজারের নিয়ন্ত্রক ‘ফরওয়ার্ড মার্কেট কমিশন’কে আরও বেশি আর্থিক স্বাধীনতা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এর ফলে আরও বেশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ আসবে এবং বাজার আরও স্থিতিশীল হবে।
আজ তাঁর সচিবালয়ে খাদ্য সুরক্ষা বিল নিয়েও দীর্ঘ বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এবং সংস্কারপন্থীদের দাবি মেনে এই বিলকে বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ করে তুলতে চেয়েছেন। সরকার ইতিমধ্যে সংসদে যে বিল পেশ করেছে, তাতে বিপিএল পরিবারগুলিকে মাসে ৩৫ কেজি এবং এপিএল পরিবারগুলিকে মাসে ১৫ কেজি খাদ্যশস্য দেওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু তা সংশোধন করে সব এপিএল পরিবারকে খাদ্যশস্য না দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। তার পরিবর্তে বিপিএল সীমারেখার আশেপাশে থাকা পরিবারগুলিকে খাদ্য সুরক্ষার আওতায় আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর ফলে গরিব পরিবারগুলির ৭০ শতাংশই সস্তায় খাদ্যশস্য পাবেন।
যদিও অনেকেরই দাবি ছিল, খাদ্য সুরক্ষা সর্বজনীন করা হোক। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় সূত্রে বলা হচ্ছে, সরকারের আর্থিক ক্ষমতা এখন সীমিত। ফলে যেটুকু করা সম্ভব প্রাথমিক ভাবে তা-ই রূপায়ণ করা হোক। প্রকৃত দরিদ্ররা খাদ্য সুরক্ষার সুবিধা পেলে কংগ্রেসের রাজনৈতিক লাভ হবে। আর সংস্কারের সঙ্গে সামাজিক সুরক্ষার ভারসাম্য রাখার বার্তাও দেওয়া যাবে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.