|
|
|
|
বিনোদন |
হল হারিয়েছে, হারিয়েছে ভিড়ও
অনল আবেদিন • বহরমপুর |
|
|
বহরমপুরে তখন স্বপন, মদন, ধান্নু, তপন, গাবগুল্লা, নির্মল, শঙ্করাদের দাপট দেখে কে!
সত্তরের দশক। সদ্য মুক্তি পেয়েছে ‘হাতি মেরে সাথি’। সুপারস্টার রাজেশ খন্না’র গান ‘চল চল চল মেরে সাথি’ তখন লোকের মুখে মুখে ফিরছে। সিনেমা হলে হাউসফুল। বেশি দামে টিকিট পাওয়া যেত তখন ওই টিকিট ব্ল্যাকার ধান্নু, গাবগুল্লাদের কাছ থেকেই। শহরে তখন চারটে সিনেমা হল মোহন, কল্পনা, মিরা ও সূর্য। সব হলের সামনে থিকথিকে ভিড়ের মধ্যে পুলিশের সঙ্গে লুকোচুরি খেলে গলির ভিতরে গিয়ে সেই টিকিট চড়া দামে বিক্রি করা হত।
সেই ছবিটা এখন কল্পনা করাও দায়।
যেমন ইতিহাস, সপরিবারে উৎসবের মেজাজে হলে সিনেমা দেখতে যাওয়াও। শিবরাত্রির মতো উৎসবের রাতে সারারাত ধরে হলে বসে সিনেমা দেখা হত। ইস্টার্ন ইন্ডিয়া মোশন পিকচার্স অ্যাসোসিয়েশানের মুর্শিদাবাদ জেলা শাখার সভাপতি অশোক জৈন বলেন, “এখন সিনেমা হলে দর্শকের অভাবে মাছি তাড়াতে হয়। বহরমপুরের ৪টি সিনেমা হলের মধ্যে ইতিমধ্যে মিরা সিনেমা হল বন্ধ হয়ে গিয়েছে। লালবাগ, জিয়াগঞ্জের সিনেমা হলগুলিও বন্ধ। স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে এ জেলার ৫০টি সিনেমা হলের মধ্যে ৩১টিই এখন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বাকিগুলিও বন্ধ হওয়ার অপেক্ষায় দিন গুনছে।” বহরমপুর শহরের বাসিন্দা মৃণাল রায় বলেন, “এখন শহরের কোনও একটি হলে গুটিকয়েক দর্শক নিয়ে কোনও সিনেমা দু’সপ্তাহ চললেই মালিকরা তৃপ্ত। তাও আবার দৈনিক মাত্র দু’টি শো। অথচ একটা সময় দিনে ৪টি শো হত। তখন কোনও সিনেমা চলত ৪ সপ্তাহ, কোনওটি আবার ৪৭ সপ্তাহও। এমনকী শততম সপ্তাহ পার করে দেওয়ার রেকর্ডও রয়েছে।” একটা সময় সিনেমা দেখার নির্ঘণ্ট ছিল সাড়ে ১২টা-২টো, ৩টে-৬টা, ৬টা-৯টা, ৯টা-১২টা। নকশাল আন্দোলনের ফলে ১৯৭১ সাল নাগাদ ৯টা-১২টার ‘নাইটশো’ বাতিল করে নতুন নির্ঘণ্ট হয় ১টা-৪টে , ৪টে-৭টা, ৭টা-১০টা।
শহররের অভিজাত সিনেমা হল ‘কল্পনা’র মালিক তাপস সাহা বলেন, “দুর্দিন শুরু হয় স্যাটেলাইট চ্যানেলের যুগ থেকে।” তিনি বলেন, “আগে নির্দিষ্ট কয়েকটি হলে নতুন সিনেমার শুভারম্ভ হত। এখন সেখানে এক সঙ্গে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সব হলে একটি সিনেমা রিলিজ করা যায়। তার উপরে আছে সিডির পাইরেসি এবং টিভিতে সিনেমা দেখানোর ব্যবস্থা। ফলে দর্শক আর সিনেমা হল মুখী হতে চাইছে না।” কল্পনা হাউসের আসন সংখ্যা ছিল এক হাজার। কমিয়ে করা হয়েছে সাতশো। তাপসবাবু বলেন, “আসন কমানো হয়েছে, দৈনিক শো সংখ্যাও ৪টির বদলে ২টি করা হয়েছে, তবু ২০ জন থেকে ৫০ জনের বেশি দর্শক হয় না। কর্মীর সংখ্যাও তিন ভাগের একভাগে নামাতে হয়েছে। কোনও দিন হলের দরজায় তালা পড়ে যাবে।”
অশোকবাবু এক সময় ৬টি সিনেমা হলের মালিক ছিলেন। এখন তাঁর দায়িত্বে কেবল মোহন ও সূর্য সিনেমা। তিনি বলেন, “ওই দু’টি হলেও আসন সংখ্যার শতকরা ১৫ ভাগও দর্শক হয় না। ফলে কর্মী সংখ্যা কমিয়ে তিন ভাগের এক ভাগে নামাতে হয়েছে। আগে ছিল ৪টি ক্লাস। এখন লেডিজ ক্লাস-সহ মোট দু’টি ক্লাসের অবলুপ্তি ঘটাতে হয়েছে। তাতেও খরচটুকুও উঠছে না। সরকার বিশেষ কোনও ব্যবস্থা না নিলে অদূর ভবিষ্যতে সিনেমা হল গুলির সবক’টিই বন্ধ হয়ে যাবে।” |
|
|
|
|
|