খোরপোষের মামলার শুনানির জন্য আদালতে যাওয়ার পথে প্রাক্তন স্ত্রীকে ধারাল অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুনের অভিযোগে এক ব্যক্তিকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। সোমবার তুফানগঞ্জ মহকুমা আদালত লাগোয়া মেন রোডে মহকুমাশাসকের বাংলোর সামনে ঘটনাটি ঘটেছে। পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, নিহতের নাম সুচিত্রা যাদব (৩৫)। এদিন সকাল সাড়ে ১০ টা নাগাদ তিনি একাই আদালতে যাচ্ছিলেন। অভিযোগ, মহকুমাশাসকের বাংলোর সামনে আচমকা রাস্তা আটকে দাঁড়ান সুচিত্রা দেবীর প্রাক্তন স্বামী রামমিলন যাদব। মহিলা কিছু বুঝে ওঠার আগে কোমর থেকে ধারালো অস্ত্র বার করে রামমিলন প্রাক্তন স্ত্রীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। কোমর, বুক, পিঠে কোপাতে থাকেন। মহিলা মাটিতে লুটিয়ে পড়লে তাঁর শ্বাসনালি ওই ব্যক্তি কেটে দেন বলে অভিযোগ। উপস্থিত জনতা হইচই করলে অভিযুক্ত তুফানগঞ্জ আদালত চত্বরে রক্তমাখা অস্ত্র নিয়ে ঢুকে পড়েন। তা দেখে আদালতে আসা মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে ওই রক্তমাখা অস্ত্র সহ রামমিলনকে হাতেনাতে গ্রেফতার করে। পুলিশের দাবি, প্রাক্তন স্ত্রী কে কুপিয়ে খুনের কথা অভিযুক্ত স্বীকার করেছেন। কোচবিহারের পুলিশ সুপার প্রণব দাস বলেন, “ওই মহিলাকে কুপিয়ে খুনের ঘটনায় অভিযুক্তকে ধরা হয়েছে। ধৃতের কাছ থেকে রক্তমাখা অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। পুরানো আক্রোশের জেরেই ওই ঘটনা বলে প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে। তদন্ত চলছে।” পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৯৫ সালে বক্সিরহাট থানার শিলঘাগরির বাসিন্দা সুচিত্রা দেবীর সঙ্গে একই গ্রামের বাসিন্দা রামমিলনের বিয়ে হয়। পেশায় চালক রামমিলন উত্তরপ্রদেশের গোরখপুরের বাসিন্দা। বক্সিরহাটের শিলঘাগরিতে যাতায়াতের সুবাদে রামমিলনের সঙ্গে সুচিত্রার যোগাযোগ হয়। পরে অবশ্য সপরিবারে বক্সিরহাটের ওই গ্রামে পাকাপাকিভাবে থাকতে শুরু করেন ওই দম্পতি। তাদের তিনটি সন্তানও রয়েছে। ২০০৮ সালে তাঁদের সম্পর্কের অবনতি হয়। তার জেরে স্বামীর বিরুদ্ধে বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা করেন সুচিত্রা দেবী। বছর দুয়েক আগে ওই বিচ্ছেদ হয়েছে। তার পর থেকেই ছোট মেয়ে ও ছেলে নিয়ে তুফানগঞ্জে ভাড়ায় থাকতেন ওই মহিলা। পরিচারিকার কাজ করে সংসার চালাতেন। তবে ২০০৯ সাল থেকে তুফানগঞ্জ মহকুমা আদালতে মাসে তিন হাজার টাকার খোরপোষের মামলা চলছিল। মঙ্গলবার ওই মামলার শুনানি ছিল। রামমিলন ও সুচিত্রা দুজনের সাক্ষ্য দেওয়ার কথাও ছিল। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, সুচিত্রার নামে কিছু জমির মালিকানা করেন রামমিলন। বিচ্ছেদের পর সুচিত্রা ওই জমি ফেরত দিতে গড়িমসি শুরু করেন। তা নিয়ে সমস্যা বেড়ে যায়। পুলিশের দাবি, মামলা থেকে তিতিবিরক্ত হয়ে সুচিত্রার ওপর হামলার করার কথা কবুল করেন রামমিলন। সুচিত্রার হয়ে মামলা লড়ছিলেন যিনি, সেই আইনজীবী প্রভাত পাখাধরা বলেন, “কিছু দিন আগে ওই দম্পতির ডিভোর্স হয়েছে। মহিলা বধূ নির্যাতনের মামলা করেছিলেন। ২০০৯ সালের ফ্রেব্রুয়ারিতে করা খোরপোষের মামলা চলছিল। এদিন ছিল শুনানি সম্পূর্ণ হওয়ার কথা ছিল। আদালতে যাওয়ার আগে মহিলা আমার সঙ্গে দেখাও করেছিলেন। তার পরে শুনি রাস্তায় উনি খুন হয়েছেন।” ধৃত রামমিলনের হয়ে মামলা লড়ছিলেন যিনি সেই আইনজীবি অতুল সরকার বলেন, “২০১০ সালে মক্কেলের সঙ্গে স্ত্রীর ডিভোর্স হয়। খোরপোষের মামলার শুনানি এ দিন হওয়ার কথা ছিল।” |