বিজেপি-তে আরও এক বার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার ইঙ্গিত দিয়ে যশোবন্ত সিংহকে উপরাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী করলেন লালকৃষ্ণ আডবাণী। সঙ্ঘ পরিবারের আপত্তি সত্ত্বেও। আডবাণীর পক্ষে আরও স্বস্তির কথা হল, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ইউপিএ প্রার্থীকে সমর্থনের কথা জানালেও এ দফায় যশোবন্তের পাশেই দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছে এনডিএ শরিক সংযুক্ত জনতা দল (জেডিইউ)।
শুধু সঙ্ঘ পরিবার নয়, যশোবন্তকে প্রার্থী করার ব্যাপারে আপত্তি ছিল বিজেপি-র একটা অংশেরও। দলের সভাপতি নিতিন গডকড়ী থেকে অরুণ জেটলি বা রাজনাথ সিংহেরা বলছিলেন, গত বার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভৈরোঁ সিংহ শেখাওয়াতকে প্রার্থী করে দলের কোনও রাজনৈতিক ফায়দা হয়নি। এ বারও হার নিশ্চিত জেনে প্রার্থী দিলে আখেরে মুখই পুড়বে। গডকড়ীদের পাল্টা প্রস্তাব ছিল, এনডিএ-র ধর্মনিরপেক্ষ কোনও মুখকে প্রার্থী করা হোক। যাঁকে অকংগ্রেসি দলগুলি সমর্থন করতে পারে।
সেই প্রস্তাবে বেঁকে বসেন আডবাণী। শনিবারই দলীয় বৈঠকের পরে অনন্ত কুমার জানিয়ে দেন, বিজেপি প্রার্থী দেবে। সে দিনই মোটামুটি ভাবে ঠিক হয়ে গিয়েছিল যশোবন্তই প্রার্থী হবেন। আজ সকালে আডবাণীর বাড়িতে বৈঠকে অবশ্য আরও দু’টি নাম নিয়ে আলোচনা হয় বিজেপি-র নাজমা হেপতুল্লা এবং এনডিএ-র আহ্বায়ক শরদ যাদব। কিন্তু তাঁরা দু’জনেই ভোটে লড়তে রাজি নন বলে বার্তা দেন। এ দিকে যশোবন্তের সমর্থনে এগিয়ে আসেন সুষমা স্বরাজও। আডবাণী-সুষমার যৌথ চেষ্টায় মহম্মদ আলি জিন্নার জীবনী লিখে সঙ্ঘের কোপে পড়ে একদা দল থেকে বহিষ্কৃত দার্জিলিঙের বিজেপি সাংসদকেই প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত হয়। |
বেশ কিছু দিন আগে আডবাণীর কাছে গিয়ে উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে লড়ার ইচ্ছা প্রকাশ করার সময় যশোবন্ত বলেছিলেন, উপরাষ্ট্রপতি পদে লড়া তাঁর কাছে সম্মানের বিষয়। তাই তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামতে চান। আজ প্রার্থীপদ পাওয়ার পরে যশোবন্ত বলেন, “এনডিএ-র সর্বসম্মত প্রার্থী হিসেবে আমার নাম ঘোষণা হওয়ায় আমি গর্বিত। এনডিএ-র সব ক’টি শরিক দল ছাড়াও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং জয়ললিতার কাছ থেকেও সমর্থন আশা করছি। আমি ওই দুই নেত্রীর সঙ্গে কথা বলব।”
ঘটনা হল, যশোবন্তকে ঠেকানোর চেষ্টায় গত ক’দিন ধরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই পরোক্ষে বার্তা পাঠাচ্ছিল তাঁর বিরোধী শিবির। তারা চাইছিল, তৃণমূল নেত্রী কৃষ্ণা বসুকে প্রার্থী করুন। সে ক্ষেত্রে এনডিএ তাঁকে সমর্থন দেবে। তাতে যশোবন্তকে ঠেকানোর পাশাপাশি ইউপিএ-তেও ভাঙন ধরানো যাবে।
কিন্তু বিজেপি-র সমর্থন নিয়ে উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে লড়ার ব্যাপারে মমতার গোড়া থেকেই আপত্তি ছিল। তৃণমূল সূত্রের বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গে মুসলিম ভোটব্যাঙ্কের বড় অংশই এখন তাদের সমর্থক। এই অবস্থায় বিজেপি-র সমর্থন নিয়ে মুসলিম প্রার্থী হামিদ আনসারির বিরোধিতা করলে সেই ভোটব্যাঙ্কের কাছে মোটেই ভাল বার্তা যেত না। পাশাপাশি, কংগ্রেসের সঙ্গে নতুন করে সংঘাতের ক্ষেত্র তৈরি করতেও মমতা বিশেষ আগ্রহী নন। ফলে যশোবন্ত-বিরোধী শিবিরের প্রস্তাবে তিনি সাড়া দেননি।
|
উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন |
|
মোট ভোট ৭৯০
লোকসভা ৫৪৫
রাজ্যসভা ২৪৫
জিততে চাই৩৯৬ |
|
আনসারির পক্ষে
• ইউপিএ+ ৪১০ • সিপিএম+ফব ২৮ |
যশোবন্তের পক্ষে
• এনডিএ+ ২১৮ |
|
|
মমতা রাজি না হওয়ায় অরুণ-নিতিন-রাজনাথেরা পরবর্তী কৌশল হিসেবে শরদ যাদবের মতো ধর্মনিরপেক্ষ এনডিএ নেতাকে দাঁড় করানোর পরিকল্পনা নেন। তাঁদের যুক্তি ছিল, সে ক্ষেত্রে মমতা, জয়ললিতা, চন্দ্রবাবু নায়ডু বা নবীন পট্টনায়কের সমর্থন প্রত্যাশা করা যেতে পারে। শরদও ঘনিষ্ঠ মহলে জানান, তাঁকে সমর্থন করার বার্তা পাঠিয়েছেন মমতা। কিন্তু তিনি উপরাষ্ট্রপতি হয়ে গেলে সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের হয়ে মুখ খোলার মতো কেউ থাকবে না বলেই তিনি ভোটে দাঁড়াতে রাজি নন।
তবে যশোবন্তকে সমর্থন করার কথা আজই ঘোষণা করে দিয়েছে শরদ যাদবের দল জেডিইউ। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রণব মুখোপাধ্যায়কে সমর্থন করছে তারা। ধর্মনিরপেক্ষ ভাবমূর্তি বজায় রাখতে এ বারও আনসারি সমর্থন করতে চাইছিলেন জেডিইউ নেতা তথা বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। |