ব্লকের ছ’টি সমবায়ে পরিচালন সমিতির ভোট ছিল একই দিনে। চারটিতে বিরোধী কেউ প্রার্থী না দেওয়ায় আগেই জিতে গিয়েছিলেন তৃণমূল সমর্থিত প্রার্থীরা। রবিবার দু’টি সমবায়ে ভোটাভুটি হলে একটিতে জেতে তৃণমূল। কিন্তু অন্যটিতে সব আসনেই সিপিএম সমর্থিত প্রার্থীদের কাছে হেরে গিয়েছে তারা। ঘটনাচক্রে, সেই সমবায় থেকে কিছুটা দূরেই বাড়ি তৃণমূল নেতা তথা রাজ্য সংখ্যলঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগমের চেয়ারম্যান আবু আয়েশ মণ্ডলের। পাঁচটিতে জয় সত্ত্বেও মন্তেশ্বরের কুলুটে এই সমবায়ে হারের জন্য আবু আয়েশের দিকে আঙুল তুলেছে দলেরই একাংশ।
রবিবার মন্তেশ্বরের কুলুট, কাইগ্রাম, কুসুমগ্রাম, কশা বলরামপুর, কুলজোড়া ও সোনাডাঙার ছ’টি সমবায়ে ভোট ছিল। কুলুট ও কাইগ্রাম ছাড়া বাকি চারটিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছেন তৃণমূল সমর্থিত প্রার্থীরা। কাইগ্রামের ছ’টি আসনের সব ক’টিতেও বামফ্রন্ট সমর্থিত প্রার্থীদের হারিয়েছেন তাঁরা। কুলুটের সমবায়ে মোট ৫০টি আসনের ৪৬টিতে প্রার্থী দিয়েছিল তৃণমূল। কিন্তু কোনওটিতেই জিততে পারেনি তারা। সব আসনে জিতে নতুন বোর্ড গড়তে চলেছেন সিপিএম সমর্থিত প্রার্থীরা।
এই হারের জন্য আবার এলাকার তৃণমূল নেতা তথা এক সময়ের সিপিএম সাংসদ আবু আয়েশকেই দায়ী করেছেন তৃণমূলের একাংশ। মন্তেশ্বর পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল সদস্য আব্দুল রসিদের অভিযোগ, “আবুু আয়েশ তৃণমূল কর্মীদের বাদ দিয়ে একদা সিপিএমের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখা লোকেদের উপরে ভরসা করেছেন। কিছু দিন আগে কুসুমগ্রাম সমবায় সমিতিতে উনি এমন এক জনকে দাঁড় করান যিনি সিপিএমের লোকাল কমিটির সদস্য ছিলেন। ওই সমবায়ে সিপিএম প্রার্থী দিতে পারেনি। আবু আয়েশ জানিয়েছেন, নতুন বোর্ডের চেয়ারম্যান হবেন ওই ব্যক্তি। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দলের কর্মী-সমর্থকেরা আন্দোলনে নেমেছি।”
আবু আয়েশ অবশ্য তাঁর গ্রামের বাড়ি আকবরনগরের থেকে সামান্য দূরে কুলুটের সমবায়ে হারের দায় অস্বীকার করে বলেন, “ওখানে ভোট আছে শুনেছিলাম। কিন্তু আমি তো কলকাতায় থাকি। তাই ওখানে প্রার্থী দেওয়ার ব্যাপারে কোনও মতামত দিইনি।” তাঁর দাবি, “আসলে ওই সমবায়ে পরপর তিন বার সিপিএম জিতেছে। ওখানে যাদের সদস্য করা হয় তারা সিপিএমেরই লোক। তাই আমরা হেরেছি।” দলের একাংশের অভিযোগ প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, “গত বিধানসভা ভোটে দলের স্থানীয় কিছু নেতার ষড়যন্ত্রেই আমি হেরেছি। তাঁরা অপপ্রচার না করলে সিপিএম কোনও ভাবেই জিতত না।’’ তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, “মানুষ যদি আমার জন্যে তৃণমূলকে ভোট না দেন তবে এলাকার অন্য পাঁচটি সমবায়ে দলের সমর্থিত প্রার্থীরা জিতলেন কী করে?”
মন্তেশ্বরের সিপিএম বিধায়ক চৌধুরী মহম্মদ হেদায়েতুল্লার দাবি, “উপযুক্ত পরিবেশ না থাকায় আমরা অনেকগুলি সমবায়ে প্রার্থী দিতে পারিনি। তবে কুলুটের সমবায়টি মানুষের উন্নয়নের জন্য টানা কাজ করে চলেছে। এখানে তৃণমূলই চারটি আসনে প্রার্থী দিতে পারেনি। বাকি আসনগুলিতে বিপুল ভোটে হেরেছে।”
সিপিএমের মেমারি ২ জোনাল কমিটির সদস্য অশেষ কোনারের আবার বক্তব্য, “কুলজোড়ায় ভোট ঘোষণা হওয়ার কয়েক দিন আগে বেআইনি ভাবে এলাকার ২৮৯ জনকে সদস্যপদ দেওয়া হয়। তাতে তৃণমূলের মদত ছিল। এর প্রতিবাদে আমরা ভোটে যোগ দিইনি।” দলের মন্তেশ্বর ১ লোকাল কমিটির সম্পাদক মদন রায়ের দাবি, “কুসুমগ্রাম ও কশা বলরামপুরে সমঝোতার মাধ্যমে বোর্ড গঠন হয়েছে। সোনাডাঙায় সাংগঠনিক কারণে আমরা প্রার্থী দিইনি।” তৃণমূলের মন্তেশ্বর ব্লক সভাপতি অজয় রায় অবশ্য দুই সমবায়ে ‘সমঝোতার’ মাধ্যমে বোর্ড গঠনের কথা উড়িয়ে দিয়েছেন। এ ছাড়া, তাঁর পাল্টা দাবি, “কুলজোড়ায় যে ২৮৯ জনকে সদস্যপদ দেওয়া হয়েছে তাঁরা দু’বছর আগে আবেদন জানিয়েছিলেন। সিপিএম তাঁদের সদস্য করেনি। পাঁচটি সমবায়ে জয়ের ফলে বোঝা যাচ্ছে, এলাকায় তৃণমূলের শক্তি বাড়ছে।” |