|
|
|
|
বৃষ্টি কম, চাষ শুরুই হয়নি বহু এলাকায় |
প্রশান্ত পাল • পুরুলিয়া |
চলতি বর্ষায় আশঙ্কার সিঁদুরে মেঘ দেখছেন পুরুলিয়ার চাষিরা। জুলাই মাসের অর্ধেক পেরিয়ে গেলেও এ বার বৃষ্টির যা হাল, তাতে কার্যত এক ফসলি পুরুলিয়া চাষের মরসুম শেষে কেমন ফসল ঘরে তুলবে, তা নিয়ে সন্দিহান কৃষকেরা। তাঁদের মতোই আশঙ্কার সুর জেলা কৃষি দফতরের কর্তাদের গলাতেও।
জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলার কুড়িটি ব্লকে মোট কৃষি জমির পরিমাণ ২ লক্ষ ৮০ হাজার হেক্টর। এর সিংহভাগ জমিতে বছরে একবার, এই বর্ষার মরসুমেই আমন ধানের চাষ হয়। কিন্তু বৃষ্টির অভাবে বিক্ষিপ্ত ভাবে জেলার দু’একটি অঞ্চল বাদ দিলে চলতি বছর কোথাও চাষিরা চাষের কাজ শুরু করতে পারেননি বললেই চলে। অথচ গত বছর ছিল উল্টো ছবি। অতিবৃষ্টির সৌজন্যে পুরুলিয়ার মতো সুখা জেলাতেও চাষ ভাল হয়েছিল। উৎপন্ন হয়েছিল প্রচুর পরিমাণ ধান। |
|
কৃষি দফতরের পরিসংখ্যান বলছে, ২০১১ সালের জুন মাসে এই জেলায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ৪৩,৭১৫ মিলিমিটার। সেখানে এ বার জুনে বৃষ্টি হয়েছে মাত্র ১৪,১১৯ মিলিমিটার। গত বার জুলাইয়ে জেলায় বৃষ্টিপাত হয়েছিল ২৩০ মিলিমিটার। চলতি বছরে ১৩ জুলাই অবধি বৃষ্টি হয়েছে ১৩৩.৫ মিলিমিটার। জেলার উপ-কৃষি অধিকর্তা অশ্বিনীকুমার কুণ্ডু বলেন, “এখনও পর্যন্ত জেলায় বৃষ্টির ঘাটতির পরিমাণ প্রায় ৭৫ শতাংশ। জেলার কোনও জায়গা থেকে চারা নষ্ট হয়ে যাওয়ার খবর না মিললেও অধিকাংশ এলাকাতেই চাষিরা ধান রোঁয়ার কাজ শুরু করতে পারেননি। বিক্ষিপ্ত ভাবে দু’একটি ব্লকের কোনও কোনও অঞ্চলের চাষিরা রোঁয়ার কাজ হয়তো শুরু করেছেন। কিন্তু সেটা খুবই নগণ্য।” তাঁর বক্তব্য, “আমাদের হিসেব অনুযায়ী গত বার এই সময় পর্যন্ত জেলায় ১ লক্ষ ৯০ হাজার হেক্টর কৃষিজমিতে রোঁয়ার কাজ হয়ে গিয়েছিল। আর এ বার যেটুকু হয়েছে, তা হিসেবের মধ্যে ধরা চলে না।”
বলরামপুরের বেলা গ্রামের কৃষক পঞ্চানন মাহাতোর কথায়, “গত বার এই সময়ে অনেকটাই চাষ হয়ে গিয়েছিল। এ বার বৃষ্টিই তেমন নেই, কীসে চাষ হবে!” কাশীপুর ব্লকের পাড়াশোল গ্রামের চাষি শশধর মাহাতো, কাশিডি গ্রামের চাষি সনাতন মাঝিরাো বলছেন, “গত বার এই সময় পর্যন্ত অর্ধেকের মতো চাষ হয়ে গিয়েছিল। এ বার বৃষ্টির অভাবে চাষই শুরু করতে পারিনি।” তাঁদের আক্ষেপ, “আমাদের চাষ বলতে তো এই একবারই, যা বৃষ্টি নির্ভর। গত বার বৃষ্টি পেয়েছিলাম বলে চাষ হয়েছিল। এ বার যা অবস্থা, তাতে চাষ কেমন হবে বলতে পারছি না।”
রঘুনাথপুর ২ ব্লকের চাতরমহুল গ্রামের চাষি জন্মেজয় মাহাতো, মনোজিৎ মাহাতোরা জানিয়েছেন, বৃষ্টির অভাবে এ বার চাষের কাজ শুরুই করা যায়নি। একই অবস্থা কৃষি শ্রমিকদেরও। মাঠে কাজ নেই বলে বসে রয়েছেন তাঁরাও। কাশীপুর ব্লকের জিউড়বনা গ্রামের সনকা মাঝি বা চাঁদমণি মাঝিরা বলেন, “গত বছর এ সময় কাজের ফুরসত ছিল না। আর এ বার বসে আছি।” একই কথা বলছেন বলরামপুরের বেলা গ্রামের কৃষি শ্রমিক নিরঞ্জন মাছুয়ার, হাগরু মাছুয়ারেরা।
অশ্বিনীবাবু জানিয়েছেন, এখনও সময় রয়েছে। আগামী ৩১ জুলাই পর্যন্ত বৃষ্টি হলে ঘাটতি পুষিয়ে না গেলেও চাষিরা চাষটা অন্তত করতে পারবেন। না হলে ফলন মার খাওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। জেলা কৃষি দফতরের হিসেব অনুযায়ী, আমন মরসুমে জেলায় গড়ে ৮ থেকে সাড়ে ৮ লক্ষ মেট্রিক টন ধান উৎপন্ন হয়। ভাল বৃষ্টি হওয়ার কারনে গত বার তা দাঁড়িয়েছিল ১০ লক্ষ মেট্রিক টনে। এ বার এখনও অবধি বৃষ্টির যা হাল, তাতে ফসল উৎপাদনের আগাম অনুমান করতে পারছে না পুরুলিয়া জেলার কৃষি দফতর। |
|
|
|
|
|