বরুণ বিশ্বাসকে খুনের ঘটনায় প্রকৃত দোষীদের গ্রেফতার করা না হলে সিবিআই তদন্তের দাবিতে বৃহত্তর আন্দোলনে নামার ‘হুমকি’ দিল ‘প্রতিবাদী মঞ্চ’।
২০০০ সাল থেকে সুটিয়ায় একের পরে এক গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছিল। ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবিতে ও পুলিশি ‘নিষ্ক্রিয়তা’র বিরুদ্ধে ‘প্রতিবাদী
মঞ্চ’ গড়ে আন্দোলনে নামেন স্থানীয় কিছু মানুষ। সেই ‘মঞ্চ’-এরই
সম্পাদক ছিলেন মিত্র ইনস্টিটিউশনের (মেন) শিক্ষক বরুণ বিশ্বাস। গণধর্ষণের একাধিক মামলায় অন্যতম সাক্ষী বরুণবাবুকে গত ৫ জুলাই গোবরডাঙা
স্টেশনের সামনে গুলি করে খুন করে দুষ্কৃতীরা। রবিবার গাইঘাটার সুটিয়া-বারাসত পল্লি উন্নয়ন বিদ্যাপীঠের মাঠে বরুণবাবুর স্মরণসভার আয়োজন করেছিল ‘প্রতিবাদী মঞ্চ’।
মঞ্চের সভাপতি ননীগোপাল পোদ্দার বলেন, “গণধর্ষণের ঘটনায় সুশান্ত চৌধুরী, বীরেশ্বর ঢালিরা গ্রেফতার হয়েছিল। জেলে বসে তারা বরুণকে খুনের ছক কষে থাকতে পারে। বাইরে থেকেও কেউ টাকা দিয়ে খুন করিয়ে থাকতে পারে। সত্য উদ্ঘাটন হোক। তবে প্রকৃত দোষীরা গ্রেফতার না হলে প্রয়োজনে সিবিআই তদন্তের দাবিতে আমরা রাজ্যব্যাপী আন্দোলন গড়ে তুলব।” বরুণের ‘আদর্শ’কে বাঁচিয়ে রাখতে তাঁরা একটি ‘ট্রাস্টি বোর্ড’ গড়ে সেবার কাজ চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন ননীগোপালবাবু। |
বরুণ-হত্যার পরেই সিআইডি-কে তদন্তভার দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পুলিশ ও রেল পুলিশ ইতিমধ্যেই খুনের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে একাদশ শ্রেণির এক ছাত্র-সহ ৬ জনকে ধরেছে। চার জনকে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে সিআইডি। ওই ছাত্রকেও তারা জেরা করবে বলে জানিয়েছে। এ দিন রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের দুই প্রতিনিধি বরুণ-খুনের ঘটনা খতিয়ে দেখতে আসেন সুটিয়ায়। শনিবার খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জানিয়েছিলেন ‘প্রতিবাদী মঞ্চ’-এর সদস্যদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হবে। ননীগোপাল পোদ্দার, জিতেন বালা ও নীলরতন মজুমদার নামে তিন জনকে রবিবার থেকেই এক জন করে সর্বক্ষণের সশস্ত্র দেহরক্ষী দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা পুলিশ।
এ দিন ভিড়ে-ঠাসা স্মরণসভায় নিহত বরুণের বাবা জগদীশবাবু, মা গীতাঞ্জলিদেবী, দাদা অসিত হাজির ছিলেন। মঞ্চে উঠে কান্নায় ভেঙে পড়েন বরুণের বৃদ্ধ বাবা-মা। জ্ঞানও হারান কিছু ক্ষণের জন্য। সদ্যপুত্রহারা মায়ের কথায়, “কোনও মায়ের বুকে এমন ব্যথা যেন কখনও না জমে।” জগদীশবাবু বলেন, “এখন এত আন্দোলন হচ্ছে। কিন্তু প্রকৃত দোষীরা যদি ধরা না পড়ে, তবে এ সবের কোনও গুরুত্ব থাকবে না।” |