|
|
|
|
ভাবনা সিপিএমেই |
তাড়াহুড়োয় আনন্দপুরে এগিয়েও পিছোতে হল |
বরুণ দে • মেদিনীপুর |
বছর বারো আগে, সেই যখন তৃণমূল নেত্রী ‘কেশপুরকেই সিপিএমের শেষপুর’ করার ডাক দিয়েছিলেনখানিক পিছু হটেও আনন্দপুর থেকেই ‘ঘুরে দাঁড়ানো’ শুরু করেছিল সিপিএম। এ বারও আনন্দপুরের বন্ধ পার্টি -অফিস খুলে কেশপুরে ‘ঘুরে দাঁড়ানো’ই লক্ষ্য ছিল তাদের। কিন্তু এক -কদম এগিয়ে দু’কদম পিছোতে হল সিপিএমকে। ফের বন্ধ হয়েছে আনন্দপুর অফিস।
বারো বছর আগে -পরের মধ্যে একটা মস্ত ফারাক হয়ে গিয়েছে। আগে সিপিএমই ছিল প্রধান শাসকদল। প্রশাসনও ছিল তাদেরই কব্জায়। আর কে না জানে, শাসকের সঙ্গে থাকাই আখেরে লাভজনক ভাবতে অভ্যস্ত অনেকেই। এখনকার পরিস্থিতিতে সেই ‘অ্যাডভান্টেজ’ তাঁদের নেইভাল মতোই বোঝেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সিপিএমের একাংশ নেতাও। তাই ‘প্রতিকূল পরিস্থিতি’ থেকে ঘুরে দাঁড়াতে ধৈর্য ধরারই পক্ষপাতী তাঁরা। কিন্তু অন্য অংশের, বিশেষত কর্মী -সমর্থকদের একটা বড় অংশের তরফে তাড়াতাড়ি ‘কিছু করা’র চাপ যে ভাল রকমই। এই দুইয়ের সংঘাতে গত মঙ্গলবার মিছিল করে গিয়ে আনন্দপুরে ১৪ মাস ধরে বন্ধ থাকা লোকাল -কমিটির অফিস খুলেছিলেন সিপিএম -শিবিরের একাংশ। কিন্তু শেষে সেই তাড়াহুড়োর জেরেই পিছোতে হল সিপিএমকে। তৃণমূলের তরফে হামলার আশঙ্কায় শুক্রবারই ফের বন্ধ করতে হয়েছে সেই অফিস। সিপিএমের পাল্টা বুধবারের পর ফের শনিবারও আনন্দপুরে মিছিল করেছে তৃণমূল। দু’দিনের মিছিল থেকেই বোমা -পটাকা ফাটানো হয়েছে বলে অভিযোগ।
উদ্দেশ্য সেই এক —এলাকার ‘নিয়ন্ত্রণ’ হাতে রাখা। তৃণমূলের নেতারা হাড়ে -হাড়েই জানেনকেশপুর তো বটেই, আশপাশের শালবনি, চন্দ্রকোনা ব্লকে প্রভাব -বিস্তারেও আনন্দপুর কৌশলগত ভাবে ভীষণই গুরুত্বপূর্ণ। এক বার আনন্দপুরের নিয়ন্ত্রণ হাতছাড়া হওয়া মানেপিছোতে শুরু করা। পঞ্চায়েত ভোটের আগে যা আরওই মারাত্মক। ‘শিয়রে শমন’ টের পেয়েই গোষ্ঠী -দ্বন্দ্ব দূরে সরিয়ে মরিয়া হয়ে পথে নেমেছে তৃণমূল। আর পিছোতে হয়েছে সিপিএমকে। এমন যে হতে পারেসেই ধারণা সিপিএমের সেই অংশের মধ্যে ভাল মতোই ছিলযাঁরা ‘পরিবর্তিত পরিস্থিতি’তে ধৈর্য ধরে এগোনোরই পক্ষপাতী। মিছিল -উল্লাসের উচ্চকিত প্রত্যাবর্তনও (আনন্দপুরে মঙ্গলবার যা হয়েছিল ) তাঁরা চাননি। চাননি, অনেকে মিলে এখনই ওই পার্টি -অফিসে থাকা শুরু করুক। তাঁরা জানতেনযত বেশি ‘আলো ছিটকোবে’ততই মরিয়া হবে বিরোধী -পক্ষ। কিন্তু তাড়াহুড়ো -পন্থীদের চাপে মঙ্গলবার আনন্দপুর পার্টি -অফিস খোলার সিদ্ধান্তে সিলমোহর দিতেই হয়েছিল জেলা সিপিএম নেতৃত্বকে। সেই পয়লা মে এই প্রত্যাবর্তনের প্রথম পরিকল্পনা হয়েছিল। কিন্তু পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করেই জেলা নেতৃত্ব রাশ টেনেছিলেন। এ বার আর রাশ রাখতে পারেননি।
দলের জেলা কমিটির এক সদস্য মানছেন, “একটু তড়িঘড়িই হয়ে গিয়েছিল। এখন সর্বাত্মক আক্রমণ ও চক্রান্ত চলছে। এই আক্রমণ মোকাবিলায় সাহসের সঙ্গেই অসীম ধৈর্যও জরুরি, খুবই জরুরি।” তাঁর সতর্ক মন্তব্য, “আমাদের প্ররোচিত হওয়া চলবে না কোনও মতেই। ভবিষ্যতেও এ ব্যাপারে খেয়াল রাখা জরুরি। দলের সবাইকেই সেটা বুঝতেও হবে।” তবে ওই নেতারও বক্তব্য, “তৃণমূলের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়েই কেশপুরে প্রত্যাবর্তনটা তাড়াতাড়ি চেয়েছিলেন কর্মী -সমর্থকেরা।”
১৯৯৯ -এ পাঁশকুড়া লোকসভা আসনের উপ -নির্বাচনে কেশপুর থেকে প্রায় ২০ হাজার ভোটের ‘লিড’ পেয়েছিলেন তৃণমূলের বিক্রম সরকার। তার পরেই কেশপুরের একের পর এক গ্রামে ‘আধিপত্য’ বাড়াতে শুরু করেছিল তৃণমূল। খাতায় -কলমে গ্রাম পঞ্চায়েতের ক্ষমতা সিপিএমের হাতে থাকলেও অধিকাংশ এলাকার ‘নিয়ন্ত্রক’ হয়ে গিয়েছিল তৃণমূলই। তবে আনন্দপুরের ‘দখল’ তখনও সিপিএমের হাতেই রয়ে গিয়েছিল। এখান থেকেই শুরু হয়েছিল তাদের ‘ঘুরে দাঁড়ানোর’ লড়াই। যে লড়াইয়ে সাফল্যও এসেছিল। এ বার তা হল না। প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছিল, আনন্দপুরের পরে -পরেই সাহসপুর, ছুতারগেড়্যা ও কেশপুরের পার্টি -অফিসও খোলা হবে। তা হলে ‘আক্রমণ’ আর এক জায়গায় আসবে না। তা -ও হয়ে ওঠেনি। সব মিলিয়েই যে ‘পরিবর্তিত পরিস্থিতি’, এখন মানছেন ‘তাড়াহুড়ো -পন্থী’রাও। |
|
|
|
|
|