এস এস কে এম হাসপাতালে এক সাফাই কর্মী রোগীর ক্ষত সেলাই করিবার সংবাদ প্রকাশিত হইবামাত্র হই চই পড়িয়া গিয়াছে। সেই কলরব হইতে নিতান্ত পরিচিত কয়েকটি বক্তব্য বাহির হইয়া আসিতেছে। যথা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দশা ভয়ানক। সর্বোচ্চ হাসপাতালে এই অবস্থা হইলে জেলার হাসপাতালগুলিতে কী হইবে। ইহা রোগীর অধিকারের অবমাননা। সরকারের ব্যর্থতা। সংবাদমাধ্যমের অনাবশ্যক গোয়েন্দাগিরি। এই সকল বাদানুবাদের মধ্যে যে প্রশ্নটি কেহ করে নাই তাহা হইল, ওই সেলাইগুলি কি খুব মন্দ হইয়াছে? কোনও নবীন চিকিৎসকের স্বহস্তের কাজের তুলনায় ওই প্রবীণ অ-চিকিৎসক কর্মী কি খারাপ কাজ করিয়াছেন? যদি তাহা না হইয়া থাকে, তাহা হইলে চিকিৎসার কী বিপর্যয় ঘটিল? হাসপাতালগুলিতে ইচ্ছামতো বিধিনিষেধ লঙ্ঘন করা যাইতে পারে, এমন অনৈতিক কথা প্রতিষ্ঠা করিবার কোনও অভিপ্রায় নাই। চিকিৎসকদের দক্ষতা লইয়া কটাক্ষ করাও উদ্দেশ্য নহে। কথা হইল, আমাদের যথেষ্ট চিকিৎসক নাই, রোগী-ডাক্তার অনুপাত আন্তর্জাতিক মানে আনিতে যে আরও কয়েক দশক কাটিয়া যাইবে, তাহা সুবিদিত। অথচ যে স্বল্প-সংখ্যক চিকিৎসক সম্বল, তাহাদের এমন বহু কাজ করিতে বাধ্য করা হইতেছে যাহা অচিকিৎসক কর্মী করিলে ক্ষতি হইত না। সরকারি হাসপাতালের আউটডোরে অত্যধিক রোগী, অথচ ডাক্তারবাবুকেই রোগীর রক্তচাপ মাপিতে হইবে, উচ্চতা বা ওজন দেখিতে হইবে। ইহা কি প্রশিক্ষিত সহায়ক দিয়া করা যাইতে পারে না? হাসপাতালের ইমার্জেন্সি বিভাগে ক্ষতস্থান সেলাই, ইঞ্জেকশন প্রদান, আউটডোরের রোগীর রক্তচাপ, ওজন-উচ্চতা কিংবা নাড়ির গতির মাপা, নানা ধরনের পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করিবার জন্য সহায়করা থাকিতে পারেন। অপারেশন থিয়েটারেও নানা ধরনের প্রযুক্তিগত কাজের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ-প্রাপ্ত কর্মী নিয়োগ করা যাইতে পারে। তাহাতে চিকিৎসা ব্যবস্থার কী ক্ষতি হইবে?
এক জন চিকিৎসক তৈরি করা অত্যন্ত ব্যয়সাধ্য, জনগণই সেই ব্যয়ের অধিকাংশ বহন করে। যদি একজন চিকিৎসকের প্রশিক্ষণের খরচে একাধিক প্রশিক্ষিত চিকিৎসা-সহায়ক পাওয়া যায়, এবং চিকিৎসার গতি ও মানের উন্নতি হয়, তাহাতে নীতিগত বাধা কোথায়? বাস্তব বলিতেছে, চিকিৎসা-সংক্রান্ত আইন, বিধি, নিষেধাজ্ঞা ইত্যাদির ফাঁসে রোগী মারা পড়িতেছে। চিকিৎসা-সহায়কদের প্রশিক্ষণের কয়েকটি পাঠক্রম দক্ষিণ ভারতে শুরু হইয়াছে, কিন্তু মেডিক্যাল কাউন্সিল কিংবা নার্সিং কাউন্সিল সেগুলিকে স্বীকৃতি দেয় নাই। এ দেশে নার্সদের বিধিসম্মত কাজের পরিধিও অত্যন্ত সীমিত, ‘নার্সিং প্র্যাকটিশনার’ পাঠক্রম চালু করিয়া নার্সদের দায়িত্ব বিস্তৃত করিবার কাজটিও তেমন ভাবে এগোয় নাই। এ রাজ্যে চিকিৎসা সহায়ক তৈরি করিবার জন্য পাঠক্রম প্রস্তুতির প্রসঙ্গও ওঠে নাই। যাহা করা যায়, তাহা করিবার উদ্যোগ নাই। এ বার নূতন করিয়া ভাবিতে হইবে। যাহা চিকিৎসকের করিবার কথা, তাহা সাফাই কর্মী করিবেন কেন, এই পুরাতন প্রশ্ন বাতিল হউক। আজ জিজ্ঞাসা করা প্রয়োজন, যাহা সাফাই কর্মী করিতে পারেন তাহা চিকিৎসক করিবেন কেন? |