সম্পাদকীয় ১...
জনতা ও একটি মেয়ে
গুয়াহাটিতে এক তরুণীর শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটিয়াছে। ‘এমন কাণ্ড কতই হয়’ বলিয়া বিষয়টিকে উড়াইয়া দিবার অবকাশ নাই। বিশেষ করিয়া এই ঘটনাটির সহিত প্রশাসনিক নিষ্ক্রিয়তা এবং সংবাদমাধ্যমের কর্তব্য এবং ভূমিকার ন্যায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জড়াইয়া গিয়াছে। উল্লিখিত দ্বিতীয় বিষয়, অর্থাৎ গণমাধ্যমের তৎপরতা কী হওয়া উচিত, তাহার স্বাধীনতা ঠিক কত দূর পর্যন্ত বাঞ্ছিত, তাহা লইয়া বিতর্ক জাগিয়াছে। প্রশ্নগুলি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ, সন্দেহ নাই, কিন্তু সামগ্রিক ঘটনাটির প্রেক্ষিতে প্রাথমিক কিছু বিষয় সর্বাগ্রে মনোযোগ দাবি করে। প্রশাসনিক অদক্ষতা লইয়া নানাবিধ কথা বলা হইতেছে বটে, কিন্তু প্রশাসনের মানসিকতাটিও এই সূত্রে বিবেচ্য। কারণ, অমিত তৎপরতা বা নিদারুণ শৈথিল্য, উভয়ই এক-একটি বিশেষ মানসিকতা হইতে জাত। সোমবার রাত্রে ঘটনাটি ঘটিবার পরে স্থানীয় বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল-এ তাহার ‘ফুটেজ’ ছড়াইল, অথচ অভিযুক্তেরা গ্রেফতার হইতে হইতে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত গড়াইয়া গেল। কেন, তাহার আপাত উত্তর প্রশাসনিক নিষ্ক্রিয়তা। গভীরতর জবাব, প্রশাসনিক মানসিকতা। এই মানসিকতা আসলে সমাজের মানসিকতারই প্রতিফলন। সুতরাং, তির্যক ভাবে এই অপকর্মের দায় তাহাদেরও বহন করিতে হইবে।
তর্ক উঠিবে, কেন? তর্ক উঠিবে, এবং উঠিতেছেও যে, সন্ধ্যা গড়াইবার পরে যে তরুণী পানশালা হইতে বাহির হন, তিনি কি এক অর্থে নিজের বিপদ নিজেই আহ্বান করেন না? তর্কগুলি পরিচিত, কারণ পুরাতন। পিতৃতন্ত্র নিজস্ব লালসা এবং অপকর্মের দোহাই হিসাবে নারীর তথাকথিত চারিত্রিক দোষের প্রতি বারংবার ইঙ্গিত করিয়াছে। সুতরাং, যে উন্মত্ত ভিড় সেই তরুণীটিকে ঘিরিয়া তাঁহার শরীরে হাত দিয়াছিল, তাহার (কু)যুক্তিটি অচেনা নহে। যেন, সন্ধ্যার পরে পানশালা হইতে বাহির হইলেই সমাজের নৈতিক ধ্বজাধারীগণ কোনও তরুণীর শ্লীলতাহানির অধিকার পাইয়া থাকেন। আইনমাফিক যে বয়সে কোনও নাগরিক পানশালায় গিয়া মদ্যপানের অধিকার লাভ করেন, ঘটনাচক্রে তরুণীটি তাহার তুলনায় বয়োকনিষ্ঠ। অতএব, কী রূপে তিনি পানশালায় গিয়া আনন্দ করিতেছিলেন, তাহা অন্য প্রশ্ন। জরুরি প্রশ্ন বটে, কিন্তু অন্য প্রশ্ন। কারণ, বয়সের শংসাপত্র দেখিয়া তাঁহার শ্লীলতাহানি করা হয় নাই। যে মেয়ে পানশালায় যায়, তাহারই চরিত্র সন্দেহজনক, সুতরাং বাগে পাইবার পরে তাহার শরীরে ইচ্ছামাফিক হাত দেওয়া চলিবে, ইহাই ছিল দুষ্কৃতীদের উল্লাসের বিষয়। এই মানসিকতাটি ধিক্কারের যোগ্য, এবং যাঁহারা এই জাতীয় মনোভাব পোষণ করেন, তাঁহাদের সমুচিত শাস্তিবিধান জরুরি। সেই কাজটি করিবে কে? নিঃসন্দেহে প্রশাসন।
অতঃপর সংকটের পরবর্তী পর্ব। অবিলম্বে তৎপর হওয়া দূরস্থান, প্রশাসনিক শিথিলতা অভিযুক্তদের পিঠটান দিবার যথেষ্ট সময় দিয়াছে। তৎসত্ত্বেও কেহ কেহ ধরা পড়িয়াছেন। ঘটনার দিন কেন পুলিশ যথাসাধ্য দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় নাই, কেন এই অবাঞ্ছিত বিলম্ব, তাহার জবাব দিতে গিয়া জনৈক পুলিশকর্তা সদম্ভে জানাইয়া দিয়াছেন, পুলিশ ‘এ টি এম’ যন্ত্র নহে, সুতরাং, কিছু বিলম্ব হইতেই পারে। জাতীয় স্তরের সংবাদমাধ্যমে এই বিষয়ে বিপুল বিতর্কের প্রেক্ষিতে তিনি আরও বলিয়াছেন, নয়াদিল্লিতেই বা নারীর নিরাপত্তা কত দূর? সুতরাং দিল্লি কেন এই বিষয়ে সরব হইবে? মন্তব্যগুলি সম্পূর্ণ অবাঞ্ছিত। স্বস্তির বিষয়, মাননীয় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এই জাতীয় মন্তব্যের নিন্দা করিয়াছেন। অসমের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী তৎপর হইবার প্রতিশ্রুতি দিয়াছেন। অপরাধের প্রতিবিধান কী এবং কত দূর হইবে, তাহা ভবিষ্যতের বিষয়। প্রশাসন ইহা স্মরণে রাখিলে ভাল যে পুলিশি তৎপরতা শুধু যে নির্দিষ্ট কোনও অপরাধের কিনারায় সহায়তা করে, তাহাই নহে ইহা এমন একটি আবহ নির্মাণ করে, যাহা কোনও ব্যক্তিকে কোনও সম্ভাব্য অপরাধমূলক কর্ম হইতে নিবৃত্ত করে। তাহাকেই আইনশৃঙ্খলা বলে। প্রথমে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তা, এবং পরে তাহার সমর্থনে সাফাই সেই আইনশৃঙ্খলাকেই ব্যাহত করে। সুতরাং, এই বিষয়ে সমূহ প্রশাসনিক তৎপরতা কাম্য। অবিলম্বে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.