ওয়েবক্যামে ‘বন্ধু’র সঙ্গে কিছু ক্ষণ চ্যাট না-করলে দিনটা কেমন পানসে লাগত মেয়েটির। শহরের এক নামী স্কুলের ওই ছাত্রী ভাবতেই পারেনি চ্যাটের ফাঁদে কত বড় বিপদে সে জড়িয়ে পড়ছে।
নিজের ঘরে মেয়েটির কিছু ব্যক্তিগত মুহূর্তের ভিডিও হঠাৎই নেট-মারফত ছড়িয়ে পড়তে থাকে। এর পরে হুঁশ ফেরে তার। লালবাজারের সাইবার-অপরাধ শাখার দ্বারস্থ হলে বোঝা যায়, এর পিছনে রয়েছে অনলাইন চ্যাটে মেয়েটির কোনও এক ‘হ্যাকার-বন্ধু’। তার কারিকুরিতেই চ্যাট থেকে ‘লগ-আউট’ করে যাওয়ার পরেও মেয়েটির কম্পিউটারের ওয়েবক্যাম চালু থাকত। ওই ছাত্রী ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি বিষয়টা। অথচ, ওয়েবক্যাম মারফত তার ছবি অবাঞ্ছিত হাতে চলে যাচ্ছিল নিয়মিত। তদন্তে নেমে পুলিশ সমস্যাটা ধরতে পারলেও আসল অপরাধীর শেষ পর্যন্ত নাগাল পায়নি। |
এমন নমুনা নেহাতই ব্যতিক্রম নয়। ওয়েবক্যামে চ্যাট করা ছাড়াও সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট বা ই-মেল আইডি ব্যবহারের ‘অসাবধানতা’র মাসুল অনেককেই দিতে হচ্ছে। ১৭ বছরের এক তরুণীর কিছু ব্যক্তিগত তথ্য যেমন জেনে ফেলেছিল এক ফেসবুক-বন্ধু। তার থেকে মেয়েটির পাসওয়ার্ড খুঁজে বার করতে তাকে বেগ পেতে হয়নি। এর পরে মেয়েটি তাজ্জব হয়ে দেখতে থাকে, তার অ্যাকাউন্টের সাইবার-দেওয়ালে পরপর অশ্লীল ছবি ‘পোস্ট’ হয়েই চলেছে। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটের ‘হ্যাকার-বন্ধু’র পাল্লায় পড়ে আর এক স্কুলছাত্রীর ই-মেল আইডি ও ফেসবুক অ্যাকাউন্টও ‘বেদখল’ হয়ে যায়। ওই কিশোরীর অ্যাকাউন্ট থেকে তার পরিচিতদের মধ্যে পরপর কুরুচিকর বার্তা ছড়িয়ে পড়তে থাকে।
লালবাজারের কর্তাদের মতে, সাইবার-দুনিয়ায় সফ্ট টার্গেট বা সহজ শিকার এখন এই স্কুলপড়ুয়ারা। গত দেড় বছরে বিপদে পড়ে সাইবার-পুলিশের দ্বারস্থ যাঁরা হয়েছেন, তাঁদের বেশির ভাগই স্কুলের উঁচু ক্লাসের ছাত্রী। এটা মাথায় রেখেই শনিবার আলিপুরের বডিগার্ড লাইনে এক কর্মশালার আয়োজন করেছিল কলকাতা পুলিশ। তাতে যোগ দেয় শহরের পাঁচটি নামী স্কুলের শতাধিক ছাত্রী। |
এ দিন গোয়েন্দাপ্রধান পল্লবকান্তি ঘোষ বলেন, “সাইবার অপরাধের সব চেয়ে বেশি শিকার হচ্ছে কিশোরীরাই। তাই ইন্টারনেট ব্যবহারে সচেতনতা বাড়াতে এ দিনের কর্মশালা।” কিন্তু কেন বাড়ছে এ ধরনের ঘটনা?
সাইবার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নবীন প্রজন্ম প্রযুক্তি ব্যবহারে সড়গড়। কিন্তু বয়স কম হওয়ায় তাঁদের মধ্যে সচেতনতা বা সতর্কতার অভাব রয়েছে। হ্যাকাররা অনেকেই বয়স ভাঁড়িয়ে ছোটদের সঙ্গে মিশছে। কিশোরীদের ব্যক্তিগত জীবনের খুঁটিনাটি জেনে তাদের গোটা পরিবারকেই সামাজিক ভাবে অপদস্থ করছে তারা। অনেক সময় কোনও ছাত্রীর ফোন নম্বর জেনে নিয়ে তার অজান্তেই কুরুচিকর বিজ্ঞাপন ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।
কী ভাবে ঠেকানো সম্ভব এই বিপদ?
ন্যাসকমের পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান সুপর্ণ মৈত্র বলেন, “পাসওয়ার্ডটা একটু সাঙ্কেতিক হওয়াই ভাল। যা হ্যাকাররা সহজে আঁচ করতে পারবে না। আবার তা মনে রাখতে ঝামেলা হলেও বিপদ।” এক সুর কলকাতা পুলিশের সাইবার ল্যাবের প্রজেক্ট ম্যানেজার স্বস্তিভূষণ দেবেরও। বিভিন্ন অশ্লীল ওয়েবসাইট এবং বিনামূল্যে গান-সিনেমা ডাউনলোড করার সাইট থেকেও বিপদ হতে পারে। ওই সব সাইটে ঢুকলে ‘ট্রোজান’ নামের একটি ভাইরাস কম্পিউটারে হানা দিতে পারে। ওই ভাইরাসের মাধ্যমেই সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে কারও অ্যাকাউন্ট বা ই-মেল আইডি-র দখল নিতে পারে হ্যাকাররা।
গোয়েন্দারা বলছেন, এই অপরাধীদের পাকড়াও করার মূল সমস্যা তাদের পরিচয় জানতে না পারা। কারণ, কলকাতার ছাত্রী যাকে এ শহরের বাসিন্দা বলে মনে করছে, সে হয়তো আফ্রিকা বা পশ্চিম এশিয়ার কোনও দেশের নাগরিক। এই ‘ছদ্মবেশী’রা এত রকম প্রাযুক্তিক কারিকুরি জানে, যে এদের আসল ‘ইন্টারনেট প্রোটোকল অ্যাড্রেস’ (আইপি) খুঁজে বার করাও দুঃসাধ্য। এক গোয়েন্দা অফিসার জানান, অনেক সময়ই বড়সড় জঙ্গিরাও অন্য কারও অ্যাকাউন্ট হ্যাক করেই নিজেদের মধ্যে বার্তা চালাচালি করে। এর ফলে, কোনও নির্দোষ ব্যক্তিও জঙ্গি-সংস্রবের অভিযোগে ফেঁসে যেতে পারেন।
উঠতি বয়সের দুই সন্তানের মা জুন মালিয়া কিংবা দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী জিনিয়া সাহা এই ধরনের কর্মশালা খুবই জরুরি বলে মনে করছেন। পুলিশ কমিশনার রঞ্জিত পচনন্দা বলেন, “এ বার স্কুলে স্কুলে গিয়েও আমরা এমন কর্মশালার ব্যবস্থা করব।”
|
আজ ফের মহাকাশে সুনীতা
সংবাদসংস্থা • ওয়াশিংটন |
দ্বিতীয় বার মহাকাশে পাড়ি দিতে চলেছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন মহাকাশচারী সুনীতা উইলিয়ামস। ৪৬ বছরের সুনীতা আগামিকাল কাজাখস্তানের বেকোনার মহাকাশযান উৎক্ষেপণ কেন্দ্র থেকে ভারতীয় সময় সকাল ৮টা ১০-এ উড়ে যাবেন আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের উদ্দেশে। সঙ্গে থাকবেন আরও দুই মহাকাশচারী রাশিয়ার ইউরি মালেনচেঙ্কো ও জাপানের আকিহিকো হোশিদে। মহাকাশ স্টেশনে ‘এক্সপিডিশন ৩৩’-এর কম্যান্ডার হিসেবে যোগ দেবেন সুনীতা। ২০০৬-এ প্রথম বার মহাকাশে গিয়ে ১৯৫ দিন আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে কাটান তিনি, মহিলা মহাকাশচারীদের মধ্যে যা দীর্ঘতম। |