উত্তর কলকাতা: পাইকপাড়া, ব্যারাকপুর
পানিহাটি
দুর্ভোগের হাসপাতাল
ক শয্যায় একাধিক রোগী থাকেন। পরিকাঠামোর অভাবে চালু হয়নি শিশুদের বিশেষ ইউনিট। চত্বরে নোংরা পড়ে থাকে। সামান্য বৃষ্টিতেই জল জমে যায়। প্রসূতি বিভাগে অবাধে ঘুরে বেড়ায় বিড়াল। এমনই হাজারো অভিযোগ পানিহাটি স্টেট জেনারেল হাসপাতাল নিয়ে।
অভিযোগ, এই হাসপাতালে অনেক সময়ে এক শয্যায় দু’জন রোগীকে রাখা হয়। রোগীর সংখ্যা বাড়লে দু’টি শয্যা জুড়ে চার জনকেও রাখতে হয়। আরও বাড়লে মেঝেতে কম্বল পেতে রোগীদের রাখা হয়।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, ১৯৭৫-এ এই হাসপাতালের উদ্বোধন হয়। এখন মোট ১৫০টি শয্যা রয়েছে। এর মধ্যে ২১টি করে শয্যা পুরুষ ও মহিলা বিভাগে ‘পেয়িং বেড’ হিসাবে রাখা হয়েছে। বাকি শয্যাগুলি সাধারণ। কিন্তু স্থানীয় বিধায়ক এবং পুরপ্রধানের চিঠি থাকলে শয্যাগুলিতে বিনামূল্যে থাকা যায়। না-হলে শয্যা ভাড়া ও খাওয়ার খরচ দিতে হয়।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, এই হাসপাতালে মহিলা ওয়ার্ডের একটি শয্যায় এক ভবঘুরে মহিলা দীর্ঘ দিন ধরে আছেন। সারা দিন বাইরে ঘুরে রাতে হাসপাতালে ঘুমোতে আসেন তিনি। দীর্ঘ দিন আগে ওই মহিলাকে অসুস্থতার কারণে কেউ হাসপাতালে ভর্তি করে যান। কিন্তু তিনি সুস্থ হয়ে যাওয়ার পরেও কেউ আর তাঁকে নিতে আসেনি। তিনি রয়ে গিয়েছেন সেই শয্যাতেই। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, প্রশাসনিক স্তরে জানানো হলেও ওই মহিলাকে কোথাও স্থানান্তরিত করা যায়নি।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, এখানে চিকিৎসক রয়েছেন ২২ জন। দৈনিক গড়ে ২৫০-৩০০ রোগী এখানে বহির্বিভাগে চিকিৎসার জন্য আসেন। ভর্তি থাকেন ১৮০-১৯০ জন। ফলে ৩০-৪০ জন রোগীকে শয্যা ভাগ করে থাকতে হয়। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, নার্স, চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর অভাবে নবজাতকদের ‘সিক নিওনেটাল স্টেবিলাইজেশন ইউনিট (এসএনএসইউ)’ চালু করা যায়নি।
গত বছর হাসপাতালের অ্যাম্বুল্যান্সের চালক অবসর নেওয়ার পরে এই পরিষেবা বন্ধ বলে অভিযোগ। ফলে বেসরকারি সংস্থার অ্যাম্বুল্যান্সে চড়া ভাড়া দিয়ে রোগী নিয়ে যেতে হচ্ছে। হাসপাতালে রয়েছেন ২২ জন পুরুষ ও ১৬ জন মহিলা চতুর্থ শ্রেণির কর্মী। হাসপাতাল সূত্রে খবর, এই সংখ্যক কর্মী নিয়ে ঠিকমতো পরিষেবা দেওয়া যাচ্ছে না। ফলে হাসপাতালের বাইরে, নর্দমায় আবর্জনা জমা হচ্ছে। হাসপাতালে অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে বিড়াল। স্থানীয় বাসিন্দা অণিমা চক্রবর্তীর কথায়: “প্রসূতি বিভাগে বিড়াল ঘুরে বেড়াচ্ছে। নবজাতকদের ক্ষতি হতে পারে। কর্তৃপক্ষের এ দিকে নজর দেওয়া উচিত। পাখা চললেও হাওয়া পাওয়া যায় না।”
হাসপাতালের ওয়ার্ডমাস্টার অভিজিৎ দাস বলেন, “ওষুধ, অক্সিজেন, স্যালাইন প্রভৃতি সব কিছুই আমরা বিনামূল্যে দিয়ে থাকি। স্টেট জেনারেল হাসপাতালের পক্ষে যে-সব পরিষেবা দেওয়া সম্ভব তা দেওয়া হয়। তবে নিকাশি সমস্যায় বর্ষায় জল জমে যায়।”
হাসপাতালের সুপার শুভব্রত দাস বিভিন্ন অভিযোগের কথা স্বীকার করে বলেন, “রোগীর চাপ খুব বেশি। তাই এক বিছানায় একাধিক রোগী রাখতে হয়। বিড়াল ধরার পরিকাঠামো নেই। জানলায় জাল লাগানোর চেষ্টা করছি। ‘এসএনএসইউ’ ইউনিটটির উদ্বোধন না হলেও জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহার করা সম্ভব। যতটা সম্ভব পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করা হয়। যদিও পরিকাঠামোয় ঘাটতি আছে।”
উত্তর ২৪ পরগনার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুকান্ত শীলের কথায়: “নিকাশি সংস্কারের জন্য পুরসভার কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। একটি ঘরে নতুন শয্যার ব্যবস্থা করার চেষ্টা চলেছে। ভবঘুরের বিষয়ে সমাজকল্যাণ দফতরের সঙ্গে কথা বলা হবে।”

ছবি: দেবস্মিতা চক্রবর্তী




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.