হুড়োহুড়িতে পড়ে জখম ১৫ ছাত্রী
স্কুলের ছাদের চাঙড় খসে পড়ার আওয়াজে ভয় পেয়ে তিন তলার সিঁড়ি দিয়ে হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে পদপিষ্ট হয়ে জখম হল ৬ জন ছাত্রী। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটে শিলিগুড়ি হিন্দি বালিকা বিদ্যালয়ে। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, জখম ছাত্রীদের নাম দীপা রাউত, প্রীতি যাদব, জ্যোতি প্রসাদ, কুসুম সিংহ, নিকিতা জয়সওয়াল এবং কাজল শর্মা। দীপাকে শিলিগুড়ি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। বাকি পাঁচজনকে স্কুল সংলগ্ন একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়েছে। দীপা অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী, কাজল দশম শ্রেণির এবং বাকিরা একাদশ শ্রেণির পড়ুয়া। ঘটনাস্থলে গিয়ে শিলিগুড়ির জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) সঞ্জীব কুমার ঘোষ ‘পড়ুয়াদের অসতর্কতার কারণে ঘটনাটি ঘটেছে’ বলে মন্তব্য করেছেন, এই অভিযোগে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন অভিভাবকেরা। শেষ পর্যন্ত শিলিগুড়ির বিধায়ক রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য ও এসডিও বৈভব শ্রীবাস্তবের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। সঞ্জীববাবু অবশ্য দাবি করেন, “আমি ওই ধরনের কথা বলিনি। আমার কথার হয়তো ভুল ব্যাখ্যা হয়েছে।” শিলিগুড়ির বিধায়ক এসজেডিএ-এর চেয়ারম্যান রুদ্রনাথবাবু বলেন, “স্কুলটি ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তার পরে কয়েক লক্ষ টাকা স্কুল সংস্কারের জন্য দেওয়া হয়। অথচ কোনও কাজ হয়নি। পুরনো ভবনেই স্কুল চলছিল। তা নিয়ে ছাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছিল। তা থেকেই এই ঘটনা ঘটেছে বলে মনে হচ্ছে। মহকুমাশাসককে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করতে বলা হয়েছে।”
ছাদের চাঙড় খসল শিলিগুড়ির স্কুলে।
তিনি জানান, যে সব ছাত্রী জখম হয়েছে, তাঁদের চিকিৎসার খরচ রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর বহন করবে। পাশাপাশি, দুর্ঘটনার পরে পড়ুয়াদের উপরে দোষ চাপানো ঠিক নয় বলেও রুদ্রনাথবাবু জানিয়ে দেন। মহকুমাশাসক স্কুলে গিয়ে এ দিন স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা, স্কুল পরিদর্শককে নিয়ে বৈঠক করেন। তিনি জানান, ওই ভবনে দুটি স্কুল চলছে। সকালে হাইস্কুলের ক্লাস হয়। তার পরেই প্রাথমিক স্কুল হয়। দুই স্কুল কর্তৃপক্ষের মধ্যে বিরোধে শ্রেণিকক্ষ সংস্কারের কাজ হয়নি। তিনি বলেন, “টাকা হাতে পড়ে থাকতেও কী কারণে কাজ হয়নি তার জবাব চেয়েছি স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে। সংস্কারের কাজ শুরু করা না হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দুটি স্কুলের মধ্যে বিবাদের জেরে ছাত্রীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, এটা কিছুতেই মেনে নেওয়া হবে না।” স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, তিন তলার একটি শ্রেণি কক্ষে চতুর্থ পিরিয়ডে একাদশ শ্রেণির ছাত্রীদের ইতিহাস পড়াচ্ছিলেন শিক্ষিকা রঞ্জিতা গুরুঙ্গ। তার পাশেই একটি ক্লাসে পড়াচ্ছিলেন শিক্ষিকা নির্মলা অগ্রবাল। হঠাৎই কিছু একটা ভেঙে পড়ার আওয়াজ পায় ছাত্রীরা। চাঙড় ভেঙে পড়েছে বলে চিৎকার শুরু হয়। একটি সিঁড়ি দিয়ে প্রায় দেড়শ ছাত্রী নীচে নামতে শুরু করে। দোতলার ক্লাস ঘরের ছাত্রীরাও তখন আতঙ্কে নিচে নামার চেষ্টা করে। দোতলার সিঁড়ি দিয়ে একসঙ্গে কয়েকশো ছাত্রী নামার চেষ্টা করতেই কয়েকজন নচে পড়ে যায়। তাদের মাড়িয়েই অন্যরা নীচে নেমে যায়। নার্সিংহোমের বিছানায় শুয়ে একাদশ শ্রেণির ছাত্রী জ্যোতি প্রসাদ জানান, সম্প্রতি সে স্কুলে ভর্তি হয়েছে। এ দিন ছিল তার দ্বিতীয় দিন। সে বলে, “চাঙড় ভাঙার শব্দে আমরা সবাই নিচে নেমে আসার চেষ্টা করি। দোতলার সিঁড়িতে পড়ে যায়। আমাকে মাড়িয়ে প্রায় একশ ছাত্রী নীচে নেমে যায়।” তাঁর চোখে, মাথায় কোমরে ও পিঠে আঘাত লেগেছে। দশম শ্রেণির ছাত্রী কাজল জানায়, তার পায়ে আঘাত লেগেছে। সে সিঁড়িতে পড়ে গিয়ে আর দাঁড়াতে পারেনি। স্কুলের সহ-শিক্ষিকা রঞ্জিতা দেবী বলেন, “পর পর দু’বার কিছু ভেঙে পড়ার আওয়াজ হয়। এর পরেই ছাত্রীরা দৌড় শুরু করে। আমিও ভয় পেয়ে নিচে নামতে চাই। তার মধ্যেই দেখি একের পর এক ছাত্রী সিঁড়িতে পড়ে যাচ্ছে।”
হাসপাতালে রুদ্রনাথ।
এই ঘটনার পরে স্কুলে যান অভিভাবকরা। জেলা স্কুল পরিদর্শককে সামনে পেয়ে তাঁরা কেন এমন হল তা জানতে চান। অভিভাবকদের অনেকেরই অভিযোগ, সেই সময়ে ডিআই কেন পড়ুয়ারা হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়েছে, সেই প্রশ্ন তুলে তাদের উপরেই দোষ চাপানোর চেষ্টা করেন। ইতিমধ্যে সেখানে পৌঁছে সিপিএমের যুব সংগঠনের নেতা সঞ্জয় টিব্রেওয়ালের নেতৃত্বে বিক্ষোভ শুরু হয়। সঞ্জয়বাবু বলেন, “দুর্ঘটনার পরে শিক্ষক-শিক্ষিকারা কী করছিলেন? আতঙ্কিত পড়ুয়াদের সামাল দেওয়া তাঁদেরই উচিত ছিল। অথচ পড়ুয়াদের দোষ দেওয়া হল। আমরা প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি দিয়ে ডিআইয়ের বদলির দাবি জানিয়েছি।” স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা ভাস্বতী চক্রবর্তী বলেন, “যতদূর শুনেছি, পেছনের একটি বেসরাকরি বহুতলের কিছুটা ভেঙে পড়ে। তাতে ভয় পেয়ে ছাত্রীরা তাড়াহুড়ো করে নীচে নামতে যায়। তাঁদের নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়েছে।” তিনি দাবি করেন, প্রাথমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বাধা দেওয়ায় শ্রেণিকক্ষ সংস্কারের কাজ শুরু করতে পারেননি তাঁরা। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিক যদুনাথ প্রসাদ যাদব বলেন, “আমরা অতিরিক্ত শ্রেণিকক্ষ তৈরির জন্য ৬ লক্ষ টাকার কিছু বেশি পেয়েছি। কিন্তু জায়গা না থাকায় নতুন ঘর করা যায়নি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। হাইস্কুলের কোনও কাজে আমরা বাধা দেওয়ার অভিযোগ ঠিক নয়।”
ছবি: কার্তিক দাস।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.