প্রধানমন্ত্রী ক্ষুব্ধ, বিবৃতিতে দুঃখপ্রকাশ বিশ্বভারতীর
প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের হস্তক্ষেপে শেষ পর্যন্ত ছাত্রী-নির্যাতন কাণ্ডে দুঃখপ্রকাশ করলেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ।
বৃহস্পতিবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা হবে না জানানোর পাশাপাশি বলা হয়েছে, ‘করবী ছাত্রী নিবাসের ওয়ার্ডেন উমা পোদ্দারের হাতে পাঠভবনের ওই ছাত্রীকে যে ভীতিকর অভিজ্ঞতার মধ্যে পড়তে হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় দ্ব্যর্থহীন ভাষায় তার জন্য দুঃখপ্রকাশ করছে।’ চাপে পড়ে পাঠভবনের ছাত্র ও ছাত্রী নিবাসগুলিতে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা ‘ওয়ার্ডেন-মেট্রন’ ব্যবস্থার খোলনলচে বদলানোর সিদ্ধান্তও নিয়েছে বিশ্বভারতী। একই সঙ্গে পঞ্চম শ্রেণির ওই ছাত্রীকে ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত হিসেবে পাঠভবনের ‘ডে-বোর্ডার’ (বাড়ি থেকেই যাতায়াত করে পড়াশোনা) করার অনুমতি দেওয়ার কথাও বিবৃতিতে ঘোষণা করা হয়েছে।
বিশ্বভারতীতে ছাত্রী এবং তার বাবা-মা।
বস্তুত, বিশ্বভারতীর কর্মসচিব মণিমুকুট মিত্রের এই বিবৃতির মাধ্যমে ওই ছাত্রী ও তার বাবা-মায়ের তোলা অভিযোগ অনেকটাই সত্যতা পেল বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকে পাঠানো প্রাথমিক তদন্ত-রিপোর্টে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ দাবি করেছেন, ওই ছাত্রীর মা-ই অভিযুক্ত ওয়ার্ডেনকে মেয়ের বিছানা ভিজিয়ে ফেলার রোগ সারানোর ‘দাওয়াই’ হিসেবে প্রস্রাব চাটানোর কথা বলেছিলেন। সোমবারের সাংবাদিক বৈঠকেও বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ এই দাবিই করেন। ওই ছাত্রীর বাবা-মায়ের অবশ্য বক্তব্য, “পুরোটাই বানানো গল্প!”
প্রশ্ন উঠেছে, তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেওয়া যায়, কোনও মা তাঁর সন্তানের রোগ সারাতে ওই ‘দাওয়াই’-এর কথা বলেছেন, তা হলেও ওয়ার্ডেন কী করে ছোট্ট মেয়েটির সঙ্গে এমন অমানবিক আচরণ করলেন? কীসের ভিত্তিতেই বা ছাত্রী ও তার বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা না বলেই (ঘটনার পাঁচ দিন পরে তদন্ত কমিটি এ দিন দুপুরে প্রথম ডেকেছিল বাবা-মা-মেয়েকে) এক তরফা তদন্ত-রিপোর্ট কেন্দ্রের কাছে পাঠিয়ে দিলেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ?
শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসাবে অভিযুক্ত ওয়ার্ডেনকে সাসপেন্ড করা হলেও তাতে সন্তুষ্ট নন প্রধানমন্ত্রী তথা বিশ্বভারতীর আচার্য মনমোহন সিংহ। প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের এক কর্তা বৃহস্পতিবার জানান, ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী প্রচণ্ড বিরক্ত। বিশ্বভারতীর রিপোর্ট (যেখানে ওয়ার্ডেনের আচরণের জন্য ছাত্রীর মাকেই পরোক্ষে দায়ী করা হয়েছে) পাওয়ার পর তিনি আরও অসন্তুষ্ট হন। প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের বক্তব্য, বিশ্বভারতীর মতো মর্যাদাসম্পন্ন কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেল ওয়ার্ডেনের থেকে এই অজুহাত, যুক্তি কাঙ্ক্ষিত নয়। তাঁকে যে যা পরামর্শই দিয়ে থাকুন, তাঁর নিজের বিবেচনা বোধ কী ভাবে তাতে সায় দিল, সেটাই প্রশ্ন।
পাঠভবনের ছাত্রী নির্যাতনে অভিযুক্ত ওয়ার্ডেনের সমর্থনে ওই ভবনের প্রাক্তন পড়ুয়াদের
একাংশ বৃহস্পতিবার মৌনী মিছিল করেন। পাশাপাশি ছাত্রছাত্রীরা পোস্টারও দেন।
সচিবালয়ের ওই কর্তার কথায়, “একে তো প্রধানমন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য। তা ছাড়া সেখানে বিদেশের ছাত্রছাত্রীরা আসেন। এমন প্রতিষ্ঠানে এই ঘটনা ঘটলে তা দেশের মাথা হেঁট হওয়ার সামিল। তাই বিশ্বভারতীর মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখার ব্যাপারে নজর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।” সূত্রের খবর, সেই জন্যই রিপোর্ট পাওয়ার পরে মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রককে প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের তরফে জানানো হয়, বিশ্বভারতী যেন নিঃশর্তে ক্ষমা চেয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়। তার পরেই বিশ্বভারতীর ওই প্রেস বিজ্ঞপ্তি।
তদন্ত কমিটির ডাকে এ দিন বিশ্বভারতী যান ওই ছাত্রী ও তার বাবা-মা। পরে ছাত্রীর বাবা বলেন, “আমরা সমস্ত ঘটনা জানিয়েছি।” অভিযোগকারীদের বক্তব্য এত দিন কেন শোনা হয়নি, সে প্রশ্নের সদুত্তর মেলেনি কমিটির তরফে।
এ দিনই সকালে বিশ্বভারতীর একাধিক জায়গায় অভিযুক্ত ওয়ার্ডেনের সমর্থনে পোস্টার পড়ে। সন্ধ্যায় পাঠভবনের প্রাক্তন ছাত্রছাত্রী দাবি করে কিছু ছেলেমেয়ে উমাদেবীর সমর্থনে মৌনী মিছিল করেন।
ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.