পুরভোটে হেরে ফের দাওয়াই ‘শুদ্ধকরণ’
বিধানসভা নির্বাচনে বিপর্যয়ের পরে বর্ধমান জেলায় অন্তত তিন হাজার দলীয় কর্মীর সদস্যপদ খারিজ করেছিল সিপিএম। এ বার, দুর্গাপুর পুরসভা হাতছাড়া হওয়ার পরেও ফের আর এক দফা শুদ্ধকরণের ‘খাঁড়া’ নামতে চলেছে। সিপিএম সূত্রের খবর, গত ৩ ও ৪ জুলাই দলের পলিটব্যুরো সদস্য নিরুপম সেন, রাজ্য কমিটির সদস্য মদন ঘোষ এবং জেলা সম্পাদক অমল হালদার দুর্গাপুরের নেতৃত্বকে নিয়ে পুরভোটের ফলাফল পর্যালোচনা করেন। সিপিএমের বিগত জেলা সম্মেলনের সম্পাদকীয় প্রতিবেদনে ৬৯ পাতায় ‘ত্রুটি সংশোধনের সংগ্রাম’ পরিচ্ছদের প্রথম অনুচ্ছদেই বলা হয়েছিল, দুর্নীতি, স্বজনপোষণ, আকস্মিক জীবনমানের পরিবর্তন, অসামাজিক ব্যক্তিদের সাথে মেলামেশা ইত্যাদি ‘ত্রুটি’ ঘটছে। ট্রেড ইউনিয়ন নেতাদের একাংশ ‘রাজনৈতিক ঠিকেদার’ হয়ে গিয়েছেন। এ ছাড়া নিষ্ক্রিয়তা, অসুস্থতা ইত্যাদি কারণে কেউ কেউ সঠিক ভূমিকা নিচ্ছেন না বলেও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। স্বার্থসিদ্ধির জন্য তৃণমূলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার অভিযোগে ১৭ জনকে দল থেকে তাড়িয়েও দেওয়া হয়।
কিন্তু এখনও যে অনেক ‘সংশোধন’ প্রয়োজন, দুর্গাপুর পুরভোটের ফলাফল বিশ্লেষণ করতে বসেই সম্ভবত তা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে সিপিএম নেতাদের কাছে। বিশেষত বেনাচিতির পরিস্থিতি দেখে তাঁরা উদ্বিগ্ন। পুরভোটের আগে থেকেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে টানা সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে এসেছে সিপিএম। বিধাননগরের মতো কোথাও-কোথাও তা ‘প্রতিরোধ’ করতে দলের কর্মীরা মাঠেও নামেন। কিন্তু বেনাচিতিতে কর্মী-সমর্থকেরা কার্যত ‘আত্মসমর্পণ’ করেছেন বলে দলের কাছে খবর। শনিবার রাতে দলের বেনাচিতি লোকাল কমিটির সম্পাদক পদ থেকে বিবেকানন্দ হাইস্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক বিনয় মণ্ডলকে সাময়িক ভাবে সরিয়েও দেওয়া হয়েছে। তদন্তে দোষ প্রমাণিত হলে বহিষ্কারের মতো কড়া ব্যবস্থাও নেওয়া হতে পারে বলে দলীয় সূত্রে ইঙ্গিত মিলেছে।
বস্তুত, পর্যালোচনায় বেনাচিতিই সর্বাধিক গুরুত্ব পেয়েছে। সেখানকার ৬টি ওয়ার্ডেই বড় ব্যবধানে হেরেছেন বামপ্রার্থীরা। স্থানীয় সূত্রে রাজ্য ও জেলা নেতাদের কাছে খবর গিয়েছে, সেখানে এক বা একাধিক নেতা ‘সঠিক ভূমিকা’ পালন করেননি। উল্টে তৃণমূলের সঙ্গে ‘সুসম্পর্ক’ রেখে চলেছেন। সে কারণেই সাধারণ কর্মী-সমর্থকেরা নিষ্ক্রিয় হয়ে গিয়েছেন। দলের নির্বাচনী রণনীতির অনেক তথ্যও চলে গিয়েছে বিরোধীদের কাছে। তৃণমূলের ‘সন্ত্রাস’-এর প্রতিরোধই হয়নি। ফলে সাধারণ সমর্থকেরা বুথমুখো হওয়ার সাহস পাননি।
বেনাচিতি লোকাল কমিটির সম্পাদক বিনয়বাবুর বিরুদ্ধে স্বজনপোষণ, দুর্নীতি, অ-কমিউনিস্ট সুলভ আচরণের অভিযোগ উঠেছে। প্রভাব খাটিয়ে তিনি পরিজনদের স্কুলশিক্ষকের চাকরি পাইয়ে দিয়েছেন বা একাই চারটি স্কুলে পরিচালন সমিতির সভাপতির পদ আঁকড়ে রেখেছেন বলে সরাসরি অভিযোগ এসেছে। বিনয়বাবুর বিরুদ্ধে যে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা স্বীকার করেও দুর্গাপুরের প্রাক্তন মেয়র তথা জেলা কমিটির সদস্য রথীন রায় অবশ্য তার কারণ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। জেলা সম্পাদকও বিষয়টি এড়িয়ে গিয়েছেন। মঙ্গলবার বিনয়বাবু অবশ্য দাবি করেন, “দলের তরফে এখনও আমায় কিছু জানানো হয়নি। তবে তৃণমূলের সঙ্গে যোগসাজসের অভিযোগ ভিত্তিহীন।”
পুর নির্বাচনে যথাযথ ভূমিকা পালন না করায় নজরে পড়েছেন বেনাচিতি এলাকার আরেক সিটু নেতা তথা জেলা কমিটির সদস্যও। তাঁর বিরুদ্ধেও অ-কমিউনিস্ট সুলভ জীবনযাপনের অভিযোগ উঠেছে। আলোচনা চলছে জোনাল ও লোকাল কমিটির আরও জনা পাঁচেক সদস্যকে নিয়েও। এঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, শ্রমিক আন্দোলনের নামে এঁরা নিজেদের পকেট ভরেছেন। শ্রমিক-স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে মালিকপক্ষের হয়ে কাজ করছেন। হিসাববহির্ভূত সম্পত্তি থাকারও অভিযোগ রয়েছে। এঁদের ভাবমূর্তি নির্বাচনে দলের বিপক্ষে গিয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে।
উঠে এসেছে আরও একটি বিষয়। ছয় ও সাতের দশকে দুর্গাপুরের শ্রমিক আন্দোলনে সিটুর দাপট একের পর এক নির্বাচনে সিপিএম তথা বামফ্রন্টকে সুবিধা জুগিয়েছে। কিন্তু বিগত দুই দশকে দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে নতুন নেতৃত্ব উঠে আসেনি। পুরনো নেতাদের অনেকে অসুস্থ। বয়সের কারণে দায়িত্ব পালন করতে পারেন না অনেকে। তরুণ কর্মী-সমর্থকদের দিশা দেখাতে বহু সময়েই তাঁরা ব্যর্থ হচ্ছেন। তারও প্রভাব পড়ছে নির্বাচনে। অবিলম্বে নতুন মুখ তুলে আনা না হলে ভবিষ্যতে বিপদ বাড়বে বলেও মনে করছেন সিপিএমের উচ্চতর নেতৃত্ব।
প্রশ্ন হল, কিছু নেতা-কর্মী যে বিপথে পা বাড়িয়েছেন, তা কি এত দিন নেতৃত্বের অজানা ছিল? না কি, ভোটের অঙ্ক ঘেঁটে যাওয়ার ভয়ে ক্ষমতায় অভ্যস্ত হয়ে যাওয়া দল এত দিন চোখ বুজে বসেছিল?
নির্বাচনে একের পর এক বিপর্যয় হয়তো ইতিমধ্যেই কিছু উত্তর দিয়েছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.