ভরা কোর্টে পেটে ছুরি মারল বন্দি, বাঁচালেন উকিল
চিৎকার শুনে ভিড়ে ঠাসা আদালতে আসামিদের দাঁড়ানোর লোহার খাঁচায় নজর গিয়েছিল সকলের। লোহার তারে ঘেরা সেই খাঁচার ভিতরে রয়েছে এক যুবক। তার হাতে প্রায় দশ ইঞ্চি মাপের একটি ধারালো ছুরি। তা দিয়ে বারংবার নিজের পেটে কোপ মারছে যুবকটি। রক্তে ভিজে উঠছে চেকশার্ট। আদালতে শুনানি বন্ধ করে দিয়েছেন হতভম্ব আইনজীবীরা। বিমূঢ় বিচারকও।
সোমবার দুপুরে আলিপুর আদালতে এই ঘটনায় প্রাথমিক বিহ্বলতা কাটিয়ে ওই খাঁচায় ঢুকে সেই যুবককে নিরস্ত করতে চেয়েছিলেন পুলিশকর্মীরা। কিন্তু যুবকটি ছুরি দেখিয়ে বলতে থাকে, “কাছাকাছি এলে প্রাণে মেরে ফেলব।” ভয়ে আর ভিতরে ঢুকতে রাজি হননি কেউ।
আদালত চত্বরে কমলবাবুর সঙ্গে আবুজার। —নিজস্ব চিত্র
এই সময়েই ওই খাঁচার মধ্যে ঢুকে পড়েন এক আইনজীবী। বলতে থাকলেন, ‘আমাকে বিশ্বাস করো, আমি তোমাকে সাহায্য করতে চাই’। কথা বলতে বলতেই ছুরি হাতে ধরা ওই যুবকের দিকে ধীর পায়ে এগোতে থাকলেন তিনি। বাইরে তখন দমবন্ধ করে রয়েছেন আইনজীবী ও পুলিশকর্মীরা। শেষ পর্যন্ত হার মানল ওই যুবক। ছুরিটি তুলে দিল আইনজীবীর হাতে। হাঁফ ছাড়লেন সবাই। খাঁচায় ঢুকে আবুজার হোসেন নামের ওই অভিযুক্তকে বার করে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। সবাই তখন ব্যস্ত ওই অকুতোভয় আইনজীবীকে নিয়ে।
কে তিনি? আইনজীবীর নাম কমল বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “পুলিশকে সহ্য করতে পারছিল না ওই যুবকটি। পেট থেকে ক্রমাগত রক্তক্ষরণে অনেকটা নিস্তেজও হয়ে পড়েছিল। বললাম, আমি সাহায্য করতে চাই। ছেলেটি আমাকে লক-আপের ভিতরে ঢুকতে বলল। তার পরে ছুরিটাও দিয়ে দিল আমার হাতে।” পুলিশ জানায়, ওই আইনজীবীর সঙ্গে আবুজার স্বাভাবিক ভাবে কথা বলছে দেখে তারা পাশে দাঁড়িয়েছিল। জোর করে ভিতরে ঢুকতে গেলে ওই আসামির আরও উত্তেজিত হয়ে পড়ার আশঙ্কা ছিল।
কিন্তু আদালতে ছুরি পেল কী করে আবুজার? এর স্পষ্ট জবাব দিতে পারেনি পুলিশ। তারা জানায়, রাজ্য পুলিশের লক-আপ থেকে এজলাসে নিয়ে যাওয়ার পথে সেটি কেউ আসামির হাতে পৌঁছে দিয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (সদর) জাভেদ শামিম বলেন, “কী করে অস্ত্র পৌঁছল, তা নিয়ে তদন্ত চলছে। পুলিশের কারও গাফিলতি পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” পুলিশ জানিয়েছে, মে মাসে ১০ কিলোগ্রাম গাঁজা-সহ গ্রেফতার করা হয় রবীন্দ্রনগর থানা এলাকার সন্তোষপুর শেখপাড়ার বাসিন্দা আবুজারকে।
আবুজারের জামিনের আবেদনের শুনানি চলছিল চতুর্থ অতিরিক্ত জেলা বিচারকের এজলাসে। জামিনের আর্জি খারিজ হতেই লক-আপ থেকে চিৎকার করে আবুজার বলতে থাকে, তাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, “হঠাৎ প্যান্টে গোঁজা ছুরি বার করে আত্মহত্যার হুমকি দেয় ওই বন্দি। বিচারক তাকে শান্ত হতে বলেন। উচ্চ আদালতে জামিনের আবেদন করার পরামর্শও দেন। কিন্তু তাতে কান না দিয়ে বারবার নিজের পেটে ছুরি মারতে থাকে সে।” চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, আবুজারের চিকিৎসা চলছে।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.