বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ঈশ্বর-দর্শনেও স্বদেশে কুর্নিশ
পেলেন না ‘বিধর্মী’ সালাম

খুঁজলে কী-ই না মেলে। এমনকী ঈশ্বর কণাও। কিন্তু মৌলবাদী ভাবনার দাপটে তাঁর অস্তিত্ব ‘মুছে’ ফেলা হয়েছে। স্কুল-কলেজের পাঠ্যসূচি থেকে তো বটেই, আমজনতার স্মৃতি থেকেও। মৃত্যুর পরেও বিস্মৃত রয়ে গিয়েছেন একদা ‘নিশান-ই-পাকিস্তান’!
বুধবারও বহু প্রতীক্ষিত ‘হিগস-বোসন’ আবিষ্কার নিয়ে জেনিভায় সার্নের ল্যাবরেটরিতে যখন লক্ষ ফ্ল্যাশের ঝলকানি, তখন পাকিস্তানে অনুচ্চারিতই রয়ে গেল তাঁর নাম। তিনি, দেশের একমাত্র নোবেলজয়ী, পদার্থবিজ্ঞানী আব্দুস সালাম। কণা-পদার্থবিদ্যার ‘স্ট্যান্ডার্ড মডেল’ সংক্রান্ত গবেষণার জন্য ১৯৭৯ সালে বিজ্ঞানী শেলডন গ্ল্যাসো ও স্টিভেন উইনবার্গের সঙ্গে যৌথ ভাবে নোবেল সম্মান পেয়েছিলেন। আরও গুরুত্বপূর্ণ, সালাম সেই গুটিকয়েক বিজ্ঞানীদের একজন, যাঁরা স্বাধীন ভাবে গবেষণা করে বহু বছর আগে ঈশ্বর কণার মতো কোনও বিশেষ কণার অস্তিত্বের সম্ভাবনার কথা জানিয়েছিলেন। আজ সার্নের ল্যাবরেটরিতে যে সাফল্যের আনন্দ, তাতে যে সালামেরও একটা বড় ভূমিকা রয়েছে, তা মানছেন দেশ-বিদেশের তাবড় বিজ্ঞানীরা।
অথচ এমন ঐতিহাসিক মুহূর্তে পাকিস্তানেই সালামকে নিয়ে কোনও উচ্ছ্বাস, উৎসাহ নেই। সরকারের থেকেও কেউ কোনও কথা বলেননি। গোঁড়া ধর্মীয় আবেগ আর তালিবানি ফতোয়ায় ক্রমে ঢাকা পড়ে গিয়েছে সালামের বহু কীর্তি। পদার্থবিজ্ঞানীদের একাংশ শুধু সালাম-বন্দনা করেছেন, তাও কার্যত নিভৃতে।
পাকিস্তানের নোবেলজয়ী পদার্থবিজ্ঞানী সালাম।
কিন্তু কেন?
১৯২৬ সালে জন্ম নেওয়া সালাম ‘আহমদি’ সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি। দেশ ভাগের পর পাকিস্তানি তকমা পান। তত দিনে গবেষণার জন্য আন্তর্জাতিক বহু পুরস্কার তাঁর ঝুলিতে। একটা সমস্যা তখনই মাথাচাড়া দিচ্ছিল। ধর্মীয় মৌলবাদী গোষ্ঠীগুলি আহমদি সম্প্রদায়কে মুসলিম বলে মানতে রাজি ছিল না। কিন্তু সালাম বরাবরই ছিলেন ধর্মীয় পরিচয়ের ঊর্ধ্বে। ১৯৬০ থেকে ৭০ প্রায় এক দশক পাক প্রেসিডেন্টের বিজ্ঞান বিষয়ক প্রধান পরামর্শদাতা ছিলেন। দেশের প্রথম মহাকাশ গবেষণাকেন্দ্র স্থাপনে অন্যতম প্রধান ভূমিকা পালন করেন। এমনকী পরমাণু শক্তিধর দেশ হিসেবে পাকিস্তানের আত্মপ্রকাশের পিছনেও সালামের বিরাট অবদান।
সমস্যা বেড়ে গেল ১৯৭৪ সালে। মৌলবাদী দলগুলির প্রবল ‘চাপে’ পাক পার্লামেন্ট সংবিধান সংশোধন করে জানাল, আহমদি সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের আর মুসলিম বলে গণ্য করা হবে না। তাঁরা মুসলিম রীতি-নীতি অনুসরণও করতে পারবেন না। ওই সংশোধনীর প্রতিবাদে শুধু পদ নয়, দেশই ছেড়ে দিলেন ‘বিধর্মী’ সালাম। চলে গেলেন ইতালি। এর কিছু দিন পরেই দেশের বিভিন্ন পাঠ্যবই থেকে সরিয়ে দেওয়া হল ‘আহমদি’ সালামের নাম।
তাঁর গবেষণা, বিভিন্ন কীর্তি ক্রমশ বিস্মৃতির পথে পাঠিয়ে দিলেন মৌলবাদীরা।
সালাম নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর তাঁকে দেশের সর্বোচ্চ সম্মান ‘নিশান-ই-পাকিস্তান’ দিয়ে সম্মান জানিয়েছিলেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হক।
কিন্তু তাতেই পরিস্থিতি বদলায়নি। বরং যে বিজ্ঞানী এক সময় দেশের অন্যতম রত্ন হিসেবে সম্মান পেতেন, সেই সালামকেই পাকিস্তান সফর বাতিল করতে হয় প্রাণনাশের হুমকির জেরে। ইসলামাবাদে কায়েদ-ই-আজম বিশ্ববিদ্যালয়ে সালামের বক্তৃতার আয়োজন হয়েছে জেনেই মৌলবাদীরা জানিয়ে দেয়, তাঁকে ওই বক্তৃতা দিতে দেওয়া হবে না।১৯৯৬ সালে লন্ডনে মৃত্যুর পরে অবশ্য দেশে ফেরার ‘অনুমতি’ মিলেছিল। এখন সেখানেই ঘুমিয়ে আছেন তিনি। হাজার ফ্ল্যাশের আলো থেকে অনেক দূরে!




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.