বৃষ্টি-ধসে নাকাল উত্তর
পাহাড় ও সমতলে টানা বৃষ্টিপাতের জেরে শুক্রবার ফের প্লাবিত হল উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা। সিকিমগামী ৩১ (এ) জাতীয় সড়কের রম্ভির ২৫ মাইলে নতুন করে ধস নামায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়েছে। শুক্রবার সকাল ৯টা নাগাদ সিকিমগামী ৩১ (এ) জাতীয় সড়কের রম্ভির ২৫ মাইলে ফের ধস নামে। ওই সড়কের লিকুভি এলাকাতেও ধস নামে। ফলে দুপুর ২টা পর্যন্ত ওই রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ থাকে। প্রশাসন সূত্রের খবর, সীমান্ত সড়ক বাহিনীর কর্মীরা রাস্তার একটি অংশ থেকে ধস সরিয়ে একমুখী যান চলাচলের ব্যবস্থা করে দেয়। দার্জিলিংয়ের পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল বলেন, “ধস নামার কারণে বেশ কিছুক্ষণ যান চলাচল বন্ধ থাকে। বর্তমানে রাস্তার একটি অংশ দিয়ে যান চলাচলের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। বাকি রাস্তা থেকে ধস সরানোর কাজ চলছে।”

বৃহস্পতিবার রম্ভির ওই ২৫ মাইলে ধস নেমে দিনভর সিকিমগামী রাস্তা বন্ধ থাকে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, টানা বৃষ্টিপাতের ফলে শুক্রবার জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার জেলার প্রতিটি নদীর জলস্তর বাড়তে শুরু করে। কালজানি, ঘিস, চেল নদী বিপদসীমা ছুঁয়ে বইছে। উদ্বেগজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে কোচবিহার জেলার দিনহাটা মহকুমায়। কোচবিহার জেলা পরিষদের সভাধিপতি দিলীপ বিশ্বাস বলেন, “জেলার প্রতিটি নদীর জলস্তর বেড়েছে। দিনহাটা, তুফানগঞ্জ ও কোচবিহার সদরে লক্ষাধিক মানুষ জলবন্দি হয়েছেন।” কোচবিহারের জেলাশাসক মোহন গাঁধী বলেন, “দিনহাটায় গত ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে। নদীর জলস্তর বাড়ছে। বৃষ্টি না থামলে সমস্যা হতে পারে। পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হচ্ছে।” দিনহাটায় বানিয়াদহ, বুড়া ধরলা, সিঙিমারি নদী ফুঁসে উঠেছে। শুক্রবার সকালে বড় শাকদল, কিসামত দশগ্রাম, নয়ারহাট-গোবড়াছাড়া এলাকা বানিয়াদহ নদীর জলে প্লাবিত হয়েছে। নয়ারহাট-গোবড়াছড়া এলাকার জলবন্দিদের উদ্ধারের জন্য প্রশাসনের তরফে নৌকা নামানো হয়েছে। পুটিঁমারি, পেটলা, আটিয়াবাড়ি, দিনহাটা ভিলেজ-২, ভেটাগুড়ি, বড় শৌলমারির বিভিন্ন এলাকা নদীর উপচে প্লাবিত হয়েছে। সিতাইয়ের আদাবাড়ি, চামটা সহ কিছু এলাকাও জলমগ্ন হয়েছে। দিনহাটা-১ ব্লকে ৩৪টি, দিনহাটা-২ ব্লকে ৯টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। এ দিকে বৃহস্পতিবার থেকে জলবন্দি হয়েছেন দিনহাটা পুর এলাকার কয়েক হাজার বাসিন্দা। দিনহাটার মহকুমাশাসক অগাস্টিন লেপচা বলেন, “মহকুমার বিভিন্ন এলাকার ৫০ হাজারের বেশি মানুষ জলবন্দি হয়েছেন। কিছু এলাকায় নদীর জল ঢুকেছে। ৪৩টি ত্রাণ শিবিরে অন্তত ১০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। রসামন্ত এলাকায় দুর্গতদের উদ্ধারে নৌকা নামানো হয়েছে। বিএসএফের সাহায্য চাওয়া হয়েছে।”
কোচবিহার সদর মহকুমায় ৬টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। ওই মহকুমার খাগরাবাড়ি, মধুপুর, পাটছড়া, ঘুঘুমারি, পানিশালা, হাড়িভাঙা সহ বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দারা জলবন্দি। পুর এলাকার সুভাষপল্লি, সিলভার জুবিলি রোড, কেশব রোডে রাস্তার উপর দিয়ে জলের স্রোত বইছে। কোচবিহার সদরের মহকুমা শাসক সুপর্ণকুমার রায় চৌধুরী বলেন, “মহকুমায় প্রায় ৩০ হাজার মানুষ জলবন্দি হয়েছেন। দেওচড়াইয়ে গদাধরের বাঁধ ভেঙে বৃহস্পতিবার কয়েকশো পরিবার জলবন্দি হয়েছে।” ডুয়ার্সের জয়ন্তী, বালা, বাসরা ও পানা নদীর জলস্তর এ দিন সকাল থেকে বেড়েছে। ময়নাগুড়ি জরদা নদীও ফুঁসে উঠেছে। শুক্রবার ঘোকসা নদীর জলোচ্ছ্বাসে কুমারগ্রাম ব্লকের তুরতুরিখন্ড এলাকার সড়কের ২০ মিটার উড়ে যায়। এখানে অন্তত দুশোটি বাড়ি জলবন্দি হয়েছে। আালিপুরদুয়ারের মহকুমাশাসক অমলকান্তি রায় জানান, প্রতিটি পাহাড়ি নদীর জল বেড়েছে। আলিপুরদুয়ার শহরের কয়েকটি এলাকা জলবন্দি হয়েছে। বৃষ্টির জমা জলে বিপর্যস্ত হয়েছে শিলিগুড়ির পুরসভার কয়েকটি ওয়ার্ড। রাস্তার উপর দিয়ে জলের স্রোত গিয়েছে। কিছু বাড়িতে জল দাঁড়ায়। এনজেপি মেইন রোডের পাশে থাকা রেল কোয়ার্টারগুলি জলবন্দি হয়ে পড়ে। এ ছাড়াও ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের অশোকনগর, ৪ নম্বর ওয়ার্ডের চন্দ পার্ক, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মিলনপল্লি, ১ নম্বর ওয়ার্ডের ধর্মনগর, অম্বেডকর কলোনিতে রাস্তার উপর জল জমে। শিলিগুড়ি মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত বলেন, “অতিবৃষ্টির জন্য কিছু এলাকায় জল দাঁড়ায়। পুরকর্মীরা জল বের করে দেওয়ার কাজ করছেন।”

রম্ভি, কোচবিহার শহর ও ময়নাগুড়ির জরদা নদীতে ছবিগুলি
তুলেছেন কার্তিক দাস, হিমাংশুরঞ্জন দেব এবং দীপঙ্কর ঘটক।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.