এলাকার একটি কলেজের শিক্ষাকর্মী নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতি ও স্বজনপোষণের অভিযোগে বাঁকুড়ার রাইপুরের আট বারের দলীয় বিধায়ক উপেন কিস্কুকে সাসপেন্ড করল সিপিএম। তাঁর সঙ্গেই সাসপেন্ড করা হয়েছে সিপিএমের রাইপুর জোনাল কমিটির সদস্য বাবুলাল মাহাতো ও গঙ্গাধর মাহাতো এবং রানিবাঁধ জোনাল কমিটির কমিটির সদস্য বাবুলাল মাহাতোকে।
শুক্রবার রাইপুরের কমিউনিটি হলে অনুষ্ঠিত এক সভায় এ কথা ঘোষণা করেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক অমিয় পাত্র। এ দিন সভায় উপস্থিত সদস্যদের কাছে স্থানীয় বিধায়ক তথা সিপিএমের বাঁকুড়া জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য উপেন কিস্কু সহ ওই চার জনকে সাসপেন্ড করা হয়েছে জানিয়ে অমিয়বাবু বলেন, “যত বড়ই নেতা হোক, দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়লে বা দলের শৃঙ্খলাভঙ্গ করলে শাস্তি পেতেই হবে।”
|
বিধায়ক উপেন কিস্কু। |
কী কারণে এই ‘শাস্তি’, তার উত্তরে অমিয়বাবু জানান, রাইপুরের বীরসা-মুন্ডা মেমোরিয়াল কলেজের শিক্ষাকর্মী নিয়োগ নিয়ে চূড়ান্ত দুর্নীতি ও স্বজনপোষণ হয়েছে বলে দলীয়স্তর থেকে অভিযোগ পাওয়া গিয়েছিল। ওই নিয়োগ বাতিল করার জন্য ওঁদের বলা হয়েছিল কিন্তু দলের সেই নির্দেশ উপেক্ষা করে গত ২৫ জুন নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে। অমিয়বাবুর বক্তব্য, “নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও স্বজনপোষণ হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণ পাওয়ার পরেই দলীয় বিধায়ক-সহ ওই চার জনকে সাসপেন্ড করা হয়।”
সিপিএম সূত্রের খবর, রাইপুরের এই কলেজে শিক্ষাকর্মী নিয়োগের জন্য গত মার্চ মাসে চাকরি প্রার্থীদের ইন্টারভিউ হয়েছিল। কলেজের ৮টি শূন্য পদে গত ২৫ জুন ৮ জনকে নিয়োগ করা হয়। এই কলেজেই নিযুক্ত হন উপেন কিস্কুর মেয়ে লিলিবীথি কিস্কু, গঙ্গাধর মাহাতোর ভাইপো ইন্দ্রজিৎ মাহাতো এবং দুই বাবুলাল মাহাতোর নিকটাত্মীয়েরা। স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব বুধবার রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর কাছে এ ব্যাপারে অভিযোগও জানান। পাশাপাশি দলীয় স্তরে সিপিএমের জেলা নেতৃত্ব খবর পেয়েছিলেন, রাজনৈতিক ‘প্রভাব খাটিয়ে’ এই নিয়োগ করা হয়েছে। যদিও ওই নিয়োগে কোনও দুর্নীতি হয়েছে বলে মানতে চাননি উপেনবাবু। তাঁর দাবি, “আমার মেয়ে যোগ্যতা দেখিয়ে ওই কলেজের শিক্ষাকর্মী পদে চাকরি পেয়েছে। আমি ওই নিয়োগ নিয়ে কারও উপর প্রভাব খাটাইনি।” ‘শাস্তি’ প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, “দল আমাকে এ ব্যাপারে সাসপেন্ড করেছে। এই মুহূর্তে এর বেশি কিছু বলব না।” গঙ্গাধরবাবু, বাবুলালবাবুরা অবশ্য মন্তব্যই করতে চাননি।
রাইপুর ব্লক তৃণমূল সভাপতি জগবন্ধু মাহাতোর আরও অভিযোগ, ওই কলেজের সিপিএম প্রভাবিত পরিচালন সমিতির এক কর্তার ছেলেও ‘নিয়মবিরুদ্ধ’ ভাবে শিক্ষাকর্মী পদে চাকরি পেয়েছেন। তৃণমূলের বাঁকুড়া জেলা সভাপতি অরূপ খাঁ-র টিপ্পনী, “সিপিএমের নেতারা যে এখনও কতটা দুর্নীতি ও স্বজনপোষণ চালাচ্ছেন, এই ঘটনায় তার জ্বলন্ত প্রমাণ।” অমিয়বাবুর অবশ্য দাবি, “আমাদের দল যে দুর্নীতির সঙ্গে আপস করে না, একজন বিধায়ককে সাসপেন্ড করার থেকে আর বড় প্রমাণ আর কী হতে পারে?” |