|
|
|
|
কচকচ করে মার্কশিট খেয়ে শিক্ষিত হল গাধা |
কিংশুক গুপ্ত • ঝাড়গ্রাম |
কলেজে ভর্তির লম্বা লাইন। মার্কশিট-সার্টিফিকেট হাতে দাঁড়িয়ে ছাত্রছাত্রীরা। ধীর পায়ে লাইন এগোচ্ছে। কেউ গল্পে ব্যস্ত, কেউ বা আনমনা। এই সুযোগটাই যেন সে খুঁজছিল।
সে, মানে ব্যাকরণ শিং, বিএ-র এক নব্য সংস্করণ। হযবরল খ্যাত ‘খাদ্য বিশারদ’-এর মতো ছাগ-শিরোমণি নয়, তবে অবশ্যই ‘গর্ধব-কুলশ্রেষ্ঠ’। না হলে আস্ত মার্কশিট চিবিয়ে সাবাড় করে! শিক্ষায় গাধার আগ্রাসন আর বলে কাকে! তবে এই গাধার বুদ্ধিশুদ্ধি নিয়ে আর ভুরু কোঁচকানো যাবে না। কারণ, ওর পেটেও গিজগিজ করছে শিক্ষা।
ঘটনাস্থল পশ্চিম মেদিনীপুরের গোপীবল্লভপুরের সুবর্ণরেখা কলেজ। এই কলেজেই পাস কোর্সে বিএ পড়ার জন্য ফর্ম জমা দিয়েছিল শিবুগোপাল শ্যামল। স্থানীয় নয়াবসান জনকল্যাণ বিদ্যাপীঠ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছে সে। বৃহস্পতিবার দুপুরে ভর্তি সংক্রান্ত স্ক্রুটিনির জন্য কলেজে এসেছিল আলমপুর অঞ্চলের তেঁতুলিয়া গ্রামের এই ছাত্রটি। শিবুর বক্তব্য, “দু’হাত পিছনে রেখে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এক হাতে নথিপত্রের ফাইল ছিল। মার্কশিটটা বের করে অন্য হাতে ধরে ছিলাম। আচমকা গাধাটা পিছন দিক থেকে এসে মার্কশিট খেতে শুরু করে। টানাটানি করেও ওটা বাঁচাতে পারিনি।” |
|
অলঙ্করণ: সুমন চৌধুরী |
শিবু তখন কাঁদোকাঁদো। কী ভাবে ভর্তি হবে, আদৌ ভর্তি হতে পারবে কি না, ভেবে আকুল। গাধার সে দিকে নজর নেই। অবশ্য কবেই বা ছিল! কচকচ করে খেয়ে নিল খান কতক নম্বর। তার চোখেমুখে বিদগ্ধ নির্লিপ্তি। ততক্ষণে কলেজ চত্বর সরগরম। গাধার পিছনে রে রে করে ছুটছে ছেলের দল। গাধাও তাদের ছুটিয়ে মারছে। শিবুর মতোই কলেজে ভর্তি হতে আসা রাজকুমার প্রধানের কথায়, “গাধাটা জোড়া পায়ে লাথি ছুড়ছিল। ফলে ঝুঁকি নেওয়া যাচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত তাড়া খেয়ে গাধাটা ক্যাম্পাসের বাইরে পালিয়ে গেল। তার আগেই অবশ্য শিবুর পুরো মার্কশিটটা কচমচ করে খেয়ে ফেলেছে।”
গাধার আগ্রাসনে বিপন্ন শিবুর পাশে দাঁড়াতে ছাত্রনেতারা উঠেপড়ে লাগলেন। গোপীবল্লভপুর ১ ব্লক তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতা সত্যরঞ্জন বারিক নিজেই শিবুকে নিয়ে গেলেন থানায়। লিখিত অভিযোগ দায়ের হল। কারণ, নতুন মার্কশিট পেতে হলে অভিযোগ জানানোটা জরুরি। পুলিশ অভিযোগ নিল বটে, কিন্তু তাদের কী-ই বা করার আছে! পুলিশের বক্তব্য, গাধার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার মতো আইনের কোনও ধারা তাদের জানা নেই। কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদিকা টিএমসিপি’রই করিশ্মা মহাপাত্র আবার ক্যাম্পাসে গাধার প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে কর্তৃপক্ষের দ্বারস্থ হলেন। শিবুও কলেজ কর্তৃপক্ষকে গাধার কীর্তি লিখিত জানালেন। সব জেনে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সুবলচন্দ্র জানা তো থ। তবে উপায় বেরোল। মার্কশিটের প্রতিলিপি-র ভিত্তিতেই ভর্তি নেওয়া হল শিবুকে। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বলেন, “ওই ছাত্রকে ভর্তি নেওয়া হয়েছে। সংসদ থেকে ডুপ্লিকেট-মার্কশিট পেলে তখন সেটি প্রতিলিপির সঙ্গে মিলিয়ে নেওয়া হবে।”
আর গাধার উৎপাত ঠেকাবেন কী করে?
সুবলবাবু বলেন, “স্থানীয় একটি শীতলা মন্দিরে উৎসর্গীকৃত গাধাটি দীর্ঘদিন ধরেই কলেজে আসে। কোনও দিন কারও অনিষ্ট করেনি। কেন যে এমন করল বুঝতে পারছি না!” |
|
|
|
|
|