আশঙ্কাই সত্যি হল।
নেপালে ঢুকে পড়া হস্তিযূথের একটিকে গুলি করে মারল বাসিন্দারা। শুক্রবার ভোরে নেপালের ঝাঁপা জেলার বহুবন জঙ্গল লাগোয়া শান্তিনগরে ধান খেতের মধ্যে বছর আটেকের ওই পুরুষ হাতির দেহ মেলে। তার আধ-পুষ্ট দাঁত দু’টিও খোয়া গিয়েছে। হাতিটি নেপালের স্থানীয় বাসিন্দাদের রোষের শিকার নাকি চোরাশিকারিদের বলি, তা স্পষ্ট নয়। বনকর্তারা মনে করছেন, অসম থেকে আসা চোরাশিকারিদের যে দলটি হস্তিযূথের পিছু নিয়েছিল, এ কাজ তাদেরই। উত্তরবঙ্গের মুখ্য বনপাল ব্রিজরাজ শর্মা বলেন, “খবর পেয়েছি নেপালে একটি হাতিকে গুলি করে মারা হয়েছে।”
সরকারি ভাবে নেপাল সরকারের তরফে এ ব্যাপারে কিছু জানানো হয়নি। তবে নেপালের একটি প্রকৃতিপ্রেমী সংগঠন জানায়, রাতে হাতির পাল শান্তিনগরের ধান খেতে নেমেছিল। তখনওই গুলির আওয়াজ পাওয়া গিয়েছিল। সকালে পাওয়া যায় হাতির দেহ। নেপালে ঢুকে পড়া অন্য হাতিগুলিকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা অবশ্য অব্যাহত বলে বন দফতরের দাবি। কিন্তু তারা স্ব-ইচ্ছায় না ফিরলে কিংবা নেপাল বনমন্ত্রক এ ব্যাপারে উদ্যোগ না নিলে তা যে সম্ভব নয়, বন বিভাগের কর্মীরা তা মেনে নিয়েছেন।
২৮ জুন অন্তত ৩৫টি হাতির একটি দল নকশালবাড়ির কলাবাড়ির জঙ্গল উজিয়ে নেপালে ঢুকে পড়ে। দু’দিন পরে আরও অন্তত ৭৫টি হাতির দ্বিতীয় দলটিও মেচি পেরিয়ে পড়শি দেশে পাড়ি দেয়। দু’টি দল বামনডাঙি পেরিয়ে হাঁটতে থাকে আরও পশ্চিমে। দলে বেশ কয়েকটি শাবকের পাশাপাশি অন্তত ৫টি গুলিতে আহত হাতিও ছিল। এই সময়েই খবর আসে অসম থেকে আসা চোরাশিকারিদের একটি দল তাদের পিছু নিয়েছে। নেপালের প্রায় ‘মুক্তাঞ্চলে’ গুলি করে তারা যে অবাধে বেশ কয়েকটি হাতি মারতে পারে, সে ব্যাপারেও উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন বন কর্তারা। সম্ভবত সে আশঙ্কা সত্যি হল। এ ব্যাপারে দিল্লিকেও সতর্ক করা হয়েছে। বনকর্তারা বিদেশ মন্ত্রকের মাধ্যমে নেপাল সরকারকে এ ব্যাপারে সজাগ করার অনুরোধ করেছেন। নকশালবাড়ি বিজ্ঞান ক্লাবের সম্পাদক প্রাণগোবিন্দ নাগ বলেন, “হাতির পাল নেপালে ঢুকে পড়ার পরেও বনকর্তারা গুরুত্ব দিতে চাননি। হাতির পালের পিছনে চোরাশিকারিরা রয়েছে খবর পেয়েও তাঁরা নির্বিকার ছিলেন। তার জেরেই ফের হাতি-মৃত্যুর ঘটনা ঘটল।”
হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশনের মুখপাত্র অনিমেষ বসু বলেন, “নেপাল সীমান্তে বুনো হাতির উপরে হামলা ঠেকাতে বেশ কয়েক বছর ধরেই বন দফতরের কর্তাদের বলা হচ্ছে। কোনও আগাম ব্যবস্থা না-নেওয়ায় ফের হাতির মৃত্যু ঘটল। বন দফতরের ঘুম তবু ভাঙছে না!” এখন প্রশ্ন, কবে তা ভাঙবে? |