কর্নাটকে বিজেপির অবস্থা ক্রমেই সঙ্গিন হইতেছে। প্রতি দুই মাস অন্তর প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বি এস ইয়েদুরাপ্পা তাঁহার গদি ফিরিয়া পাইতে অনুগামী বিধায়কদের লইয়া ঘোঁট পাকাইতেছেন। বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী সদানন্দ গৌড়া আবার গদি ছাড়িতে আদৌ আগ্রহী নহেন। দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব (নিতিন গডকড়ী এবং অরুণ জেটলি) এ জন্য তাঁহার উপর চাপ দিতেছেন। শেষ পর্যন্ত যদি বা গৌড়াকে নিমরাজি করানো গিয়াছে, বাদ সাধিতেছেন স্বয়ং লালকৃষ্ণ আডবাণী। তিনি ইয়েদুরাপ্পার ব্ল্যাকমেল-এর রাজনীতির নিকট নতিস্বীকারের পক্ষপাতী নন। এ বার ইয়েদুরাপ্পার সমর্থক বিধায়কদের বিদ্রোহ একটু বেশি সংহত হইয়াছিল। তাঁহার অনুগামী নয় জন মন্ত্রী রাজ্য-মন্ত্রিসভা হইতে ইস্তফা দিবার হুমকি দিয়াছিলেন। শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব গৃহদাহের আগুন আয়ত্তে আনিয়াছেন। কিন্তু এই নির্বাপণ ক্ষণস্থায়ী এবং সাময়িক। অচিরেই আবার ধিকিধিকি জ্বলিয়া উঠিবার জন্য অপেক্ষা করিতেছে।
কর্নাটকই একমাত্র দক্ষিণী রাজ্য, যেখানে বিজেপি এই প্রথম বার শাসনক্ষমতা পাইয়াছে। পাছে আবার ‘উত্তর ভারতের দল’ বলিয়াই জাতীয় স্তরে শনাক্ত হইতে হয়, সম্ভবত সে জন্যই দলের নেতৃত্ব যে কোনও মূল্যে বেঙ্গালুরুর ক্ষমতা আঁকড়াইয়া থাকিতে বদ্ধপরিকর। তাই যুযুধান দুই পক্ষকেই তোয়াজ করা হইতেছে। পরিণামে রাজ্যে শাসনব্যবস্থা কার্যত অচল হইয়া পড়িয়াছে। সেই অচলাবস্থাকে স্থায়িত্ব দেওয়াই বিজেপির জাতীয় নেতৃত্বের ব্রত হইয়া উঠিয়াছে। অন্ধ্রপ্রদেশে কংগ্রেসও কতকটা একই ধরনের সঙ্কটে পড়িয়াছিল। তবে সেখানে জগন্মোহন রেড্ডির আবদারকে প্রশ্রয় না দিয়া হাইকমান্ড আপন মনোনীত মুখ্যমন্ত্রীকে সর্বতোভাবে সমর্থন করার ক্ষেত্রে দৃঢ়তা দেখাইয়াছিল। তাই উপর্যুপরি দলীয় বিধায়ক ও নেতাদের একটি অংশের বিদ্রোহ এবং জগন্মোহনের শিবিরে গিয়া ভিড়িয়া যাওয়ার ঘটনায় দলীয় সংগঠন চরম ক্ষতিগ্রস্ত হইলেও কংগ্রেস হাই কমান্ড মুখ্যমন্ত্রী কিরণকুমার রেড্ডির পিছনে দাঁড়াইয়াছে। এমনকী নির্বাচনে জনাদেশ জগন্মোহনের অনুকূলে গেলেও কংগ্রেস তাঁহার প্রতি কোনও নমনীয়তা দেখায় নাই।
বিজেপি কিন্তু কর্নাটকের ক্ষেত্রে কোনও দৃঢ় মতাদর্শগত ও রাজনৈতিক অবস্থান লইতে পারে নাই। তাহাতে অবশ্য বিজেপিরই সমূহ ক্ষতি হইতেছে। ‘অন্য রকম দল’ হওয়ার গর্ব তো কবেই ধুলায় মিশিয়াছে। উচ্চ পদে দুর্নীতি, সরকারি তহবিল তছরুপ, আর্থিক অনিয়ম ও কেলেঙ্কারি কোনও অভিযোগই বাদ নাই। বিজেপিও এখন কাচের ঘরে বাস করিয়া অন্যদের উদ্দেশে ঢিল ছুড়িতেও পিছপা হয় না। কর্নাটকে দলীয় নেতারা বড় রকমের দুর্নীতি ও অনিয়মের দায়ে কাঠগড়ায়। উপনির্বাচনের ফলাফলেও তাহার প্রভাব পড়িতেছে। কিন্তু দুর্নীতিগ্রস্তদের দল বা মন্ত্রিত্ব হইতে বিতাড়িত করার সৎসাহসটুকুও আজ নেতৃত্বের অবশিষ্ট নাই। ঠগ বাছিতে গেলে গাঁ উজাড় হইয়া যাইবে, এই ভয়েই কি নেতৃত্ব দ্বিধাগ্রস্ত? দলকে পুনরায় ক্ষমতায় ফিরাইবার স্বার্থেই কিন্তু নেতৃত্বকে কঠোর নীতিগত অবস্থান লইতে হইবে। দলীয় রাজনীতির আস্তাবল সাফসুতরো করিতে আশু নির্বাচনের পথে যাওয়াই শ্রেয়, চলতি বিধানসভা হইতে ইয়েদুরাপ্পা-সমর্থিত রাজনীতিকদের মুখ্যমন্ত্রী বানানোর জন্য চেষ্টা না করিয়া নূতন করিয়া রাজ্য বিধানসভা নির্বাচিত হউক। উহাই প্রকৃত গণতন্ত্রের দাবি। |