সম্পাদকীয় ১...
রাষ্ট্রের দায়িত্ব ও দায়
ত্তীসগঢ়ে মাওবাদী ঘাঁটিতে সি আর পি-র নৈশ হানায় নকশালপন্থী সহ নিরীহ জনজাতীয় গ্রামবাসীর মৃত্যুর ঘটনা নূতন করিয়া মানবাধিকারের প্রসঙ্গটিকে সামনে আনিয়াছে। রাজ্য সরকার এবং সি আর পি কর্তৃপক্ষ হতাহতদের সকলকে ‘সশস্ত্র মাওবাদী’ এবং ‘সংঘর্ষেই তাহাদের মৃত্যু হইয়াছে’ বলিয়া দাবি করিলেও এ বিষয়ে ঘোর সংশয় দেখা দিয়াছে। কেন্দ্রীয় জনজাতি কল্যাণ মন্ত্রী কিশোরচন্দ্র দেও সংঘর্ষটিকে ‘সাজানো’ আখ্যা দিয়াছেন এবং অন্তত সাত জন নিরস্ত্র আদিবাসী কিশোরকে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যার অভিযোগ তুলিয়াছেন। প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বও ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করিয়াছে, যেমন করিয়াছেন দেশের বিভিন্ন মানবাধিকার আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা। এই সমস্বর সংশয়ের মধ্যে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পালনিয়াপ্পন চিদম্বরম সি আর পি কমান্ডারদের ঢালাও শংসাপত্র দেওয়ার পাশাপাশি কবুল করিয়াছেন, যদি যথার্থই কোনও নিরীহ ব্যক্তি সংঘর্ষে নিহত হইয়া থাকেন, তবে তিনি ‘গভীর ভাবে দুঃখিত’।
তবে ভারতের দরিদ্র, অসহায় জনজাতীয়রা বরাবরই রাষ্ট্রের কাছে লাঠি-গুলি খাইতে, বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার হইয়া বিনা বিচারে আটক থাকিতে, জেল-গারদে পচিয়া মরিতে অভ্যস্ত। তাঁহারা বোধহয় ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উদ্দেশে গভীর দুঃখপ্রকাশের প্রকৃত লক্ষ্য নহেন। চিদম্বরম সম্ভবত দেশের শিক্ষিত মধ্য শ্রেণির উদ্দেশেই তাঁহার অনুতাপ ব্যক্ত করিয়াছেন। এই শ্রেণিই মানবাধিকার লইয়া শোরগোল করে, এমনকী মাওবাদী জঙ্গি বা সন্ত্রাসবাদীদের মানবাধিকার রক্ষার দাবিতেও আন্দোলন করে। মানুষ-খুন-করা জঙ্গিদের কেন মানবাধিকার থাকিবে, দেশের আইন ও বিচারব্যবস্থাকে যাহারা অগ্রাহ্য করে, তাহাদের কেন সুবিচার পাওয়ার অধিকার থাকিবে, প্রশাসনের কর্তারা অনেক সময় তাহা বুঝিতে পারেন না। কিন্তু এই অধিকারকে স্বীকার এবং  সম্মান না করিলে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র আপন নৈতিক ভিত্তিটি হারাইয়া ফেলে। প্রকৃত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র সন্ত্রাসবাদী রাষ্ট্রদ্রোহীদের ‘সাজানো সংঘর্ষে’ হত্যা করিতে পারে না, আইনভঙ্গকারীদেরও বিচার ও দণ্ডদানের জন্য আদালতে আনা তাহার কর্তব্য। ভারতীয় রাষ্ট্র তাই কখনওই জঙ্গিদের মতো, সন্ত্রাসবাদীদের মতো, মাওবাদীদের মতো আচরণ করিতে পারে না। তাহার দায়বদ্ধতা আইনের শাসনের প্রতি, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও রীতি-পদ্ধতি-ঐতিহ্যের প্রতি, মানবাধিকার রক্ষার রাষ্ট্রপুঞ্জ-নির্দেশিত দাবিসনদের প্রতি।
আর সেই জন্যই জঙ্গিরা ‘মানব-ঢাল রূপে নিরীহ গ্রামবাসীদের ব্যবহার করিতেছে’, এই যুক্তিতে বা অজুহাতে সি আর পি-র জঙ্গি-দমন অভিযানে নিরস্ত্র জনজাতীয় কিশোরদের মৃত্যুর সাফাই গাওয়া চলে না। রাষ্ট্র কি মাওবাদীদের সহিত যুদ্ধে লিপ্ত? ছত্তীসগঢ়ে কি জাফনার মতো কোনও গৃহযুদ্ধ চলিতেছে? চিদম্বরম নিজেই তো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিযুক্ত হওয়ার পর ঘোষণা করিয়াছিলেন, রাষ্ট্র দেশবাসীরই একাংশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিতে পারে না এবং মাওবাদীরাও এ দেশেরই অধিবাসী। আশা করা যায়, তিনি সেই সূত্রায়ণ হইতে সরিয়া আসেন নাই। তাই মাওবাদীদের ধ্বংস করিতে গিয়া তাহাদের ঢাল-রূপী আদিবাসী কিশোরদেরও ধ্বংস করিবার ‘নীতি’ তাঁহার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক স্বীকার করিতে পারে না। মাইন বিস্ফোরণে সি আর পি-বাহী বাস উড়াইয়া জওয়ানদের পাশাপাশি নিরীহ বাসযাত্রীদেরও মৃত্যুর কারণ হইলে মাওবাদীরাও এই মানব-ঢাল-এর তত্ত্বই খাড়া করিয়া ওই মৃত্যুকে যুক্তিসিদ্ধ করিয়াছিল। রাষ্ট্র সেই যুক্তি অনুসরণ করিতে পারে না। জঙ্গি বা অন্তর্ঘাতকরা যদি নিরীহ গ্রামবাসীদের লইয়া মানব-ঢাল তৈয়ার করিয়া তাহার আড়ালে আত্মগোপন করে, কিংবা ‘জলের মধ্যে মাছের মতো মিশিয়া থাকা’র কমিউনিস্ট তত্ত্বের প্রয়োগ ঘটায়, তাহা হইলেও রাষ্ট্রকে জঙ্গি দমনে নির্বিচার হইলে চলিবে না। প্রকৃত উন্নয়নের পথে জঙ্গিদের জনসাধারণ হইতে বিচ্ছিন্ন করিতে হইবে। পাশাপাশি আইনি পথে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযানও চালাইতে হইবে। ইহাই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের দায়িত্ব এবং দায়।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.