কোচবিহারের দিনহাটায় ফরওয়ার্ড ব্লক কর্মীদের উপরে পুলিশ গুলি চালাতে বাধ্য হয়েছিল বলে বিচারপতি শীল কমিশনের রিপোর্টে মন্তব্য করা হয়েছে। রাজ্য বিধানসভার চলতি অধিবেশনে তা পেশ হওয়ার কথা। অধিবেশন চলবে আগামী শুক্রবার, ৬ জুলাই পর্যন্ত।
দিনহাটার ঘটনাটি চার বছর আগের, পূর্বতন বাম আমলের। ২০০৮-এর ৫ ফেব্রুয়ারি আইন অমান্য আন্দোলন করতে গিয়ে দিনহাটা মহকুমাশাসকের অফিসের সামনে পুলিশের গুলিতে ফরওয়ার্ড ব্লকের ৫ কর্মী মারা গিয়েছিলেন। সংঘর্ষে এক এনভিএফ কর্মীরও মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় উদয়ন গুহ, নৃপেন রায়-সহ ফরওয়ার্ড ব্লকের ৫৫ জন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে পুলিশ। মোট ৩৮ জন গ্রেফতার হন। পরে উদয়নবাবু, নৃপেনবাবু-সহ ১৭ জন কলকাতা হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন নেন। সেই মামলা এখনও চলছে।
পাশাপাশি দিনহাটা-কাণ্ডের তদন্তে বামফ্রন্ট সরকার অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি নারায়ণচন্দ্র শীলের নেতৃত্বে এক সদস্যের বিচারবিভাগীয় কমিশন গড়েছিল। ২০১০-এর ১৯ অগস্ট কমিশন তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের হাতে রিপোর্ট তুলে দেয়। রিপোর্টটি প্রকাশ করা উচিত কি না, তা নিয়ে বাম-শরিক ফরওয়ার্ড ব্লকের সঙ্গে সিপিএমের টানাপোড়েনও হয়েছিল। শেষমেশ বাম আমলে শীল-রিপোর্ট সর্বসমক্ষে আনা হয়নি।
আর নতুন সরকারের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছিলেন, শীল-রিপোর্ট খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকী, গত শুক্রবার বিধানসভায় পুলিশ দফতরের বাজেট-বিতর্কে মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশমন্ত্রীর উপস্থিতিতে দিনহাটার বিধায়ক তথা ফব-র কোচবিহার জেলা সম্পাদক উদয়নবাবু প্রসঙ্গটি উত্থাপন করে প্রশ্ন তুলেছিলেন, সরকারি নথি সরকারের হেফাজত থেকে উধাও হয়ে যায় কী ভাবে? এ ব্যাপারে কোনও এফআইআর দায়ের হয়েছে কি না, তা-ও তিনি জানতে চেয়েছিলেন।
কিন্তু এখন মুখ্যমন্ত্রীরই নির্দেশে সেটি বিধানসভায় পেশ হতে চলেছে। বস্তুত শুক্রবারই সরকারি ভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল যে, শীল-রিপোর্ট পাওয়া গিয়েছে। ‘নিখোঁজ’ রিপোর্টের সন্ধান মিলল কী ভাবে?
সরকারি সূত্রের দাবি: প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী রিপোর্টে সই করে তৎকালীন স্বরাষ্ট্র-সচিবের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। নিয়ম মেনে স্বরাষ্ট্র-সচিবও ফাইলটি নিজের দফতরের অফিসে পাঠিয়ে দেন। যে কারণেই হোক, তার হদিস মিলছিল না। বিস্তর খোঁজাখুজি চালিয়েও ফাইল পাওয়া যায়নি। তবে খুব সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র দফতরের অফিসেই সেটি খুঁজে পাওয়া গিয়েছে।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর: দীর্ঘ রিপোর্টে ঘটনা পরম্পরা, প্রশাসন-অভিযোগকারী-সাক্ষীদের বক্তব্য এবং বেশ কিছু ছবি দেখানো হয়েছে। সব বিচার-বিবেচনা করে কমিশনের রায়: দিনহাটার আন্দোলকারীরা সে দিন হিংসাত্মক হয়ে উঠেছিলেন। তাই পুলিশ গুলি চালাতে বাধ্য হয়।
শীল-রিপোর্টের পাশাপাশি সিপিএম বিধায়ক মোস্তাফা বিন কাসেমের ‘রহস্যজনক’ মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখতে গঠিত বিচারবিভাগীয় কমিশনের রিপোর্টও বিধানসভার চলতি অধিবেশনে পেশ হওয়ার কথা। |