স্কুলের হস্টেলে নিম্নমানের খাবার দেওয়া হচ্ছে বলে ক’দিন আগে তার নেতৃত্বেই অভিযোগ তুলেছিল এক দল আবাসিক। মঙ্গলবার ভোরে সত্যজিৎ মণ্ডল (১৪) নামে অষ্টম শ্রেণির সেই ছাত্রের ঝুলন্ত দেহ মিলল স্কুলের বারান্দায়। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ঝড়খালির হেড়োভাঙা বিদ্যাসাগর বিদ্যামন্দিরের এই ঘটনা ঘিরে এ দিন ব্যাপক অশান্তি ছড়াল ওই এলাকায়।
হস্টেলের খাবার নিয়ে সরব হওয়ার জন্যই ওই ছাত্রকে খুন করে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে স্কুলের প্রধান শিক্ষক চিত্তরঞ্জন সর্দার, পরিচালন সমিতির সম্পাদক প্রণব মণ্ডল ও স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান আরএসপি-র দিলীপ মণ্ডলকে মারধর করে ক্ষুব্ধ জনতা। পরিস্থিতি সামলাতে নামাতে হয় র্যাফ, কমব্যাট ফোর্স। গুরুতর আহত চিত্তরঞ্জনবাবু বাসন্তী হাসপাতালে ভর্তি। প্রণববাবুর বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেছেন সত্যজিতের বাবা মনোরঞ্জন মণ্ডল। পুলিশ সুপার প্রবীণ ত্রিপাঠি বলেন, “প্রণববাবুকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তদন্ত চলছে।” তবে হস্টেল সুপার তারক সর্দার বেপাত্তা। কাল, বৃহস্পতিবার বাসন্তী ব্লকে ছাত্র ধর্মঘট ডেকেছে ডিএসও।
সূত্রের খবর, দিন কয়েক আগে হস্টেলে নিম্নমানের খাবার দেওয়া হচ্ছে বলে সত্যজিৎরা অভিযোগ করেছিল। |
শনিবার রাতে তারকবাবু, চিত্তরঞ্জনবাবু, প্রণববাবু এবং দিলীপবাবুর সঙ্গে ছাত্রদের আলোচনায় খাবারের মান ঠিক রাখার সিদ্ধান্ত হয়। কিছু আবাসিকের দাবি, ওই ঘটনার পর থেকেই সত্যজিৎকে ‘দেখে নেওয়া হবে’ বলে স্কুলের পরিচালন সমিতির তরফে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল।
এ দিন ঘটনাস্থলে ছিলেন তৃণমূলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরাও। তৃণমূল নেতা সুকান্ত সরকারের অভিযোগ, “হস্টেলে নিম্নমানের খাবারের প্রতিবাদ করেছিল সত্যজিৎ। সেই কারণেই আরএসপি পরিচালিত পরিচালন সমিতির কয়েক জন ওকে খুন করে ঝুলিয়ে দেয়।”
প্রধান শিক্ষক চিত্তরঞ্জনবাবু বলেন, “নিম্নমানের খাবারের অভিযোগের সঙ্গে এই ঘটনার সম্পর্ক কোথায়? ছাত্রের মৃত্যু দুঃখজনক। তবে ছেলেটি হস্টেলের নিয়মকানুন ঠিকমতো মানত না। কিছু দিন আগে এক সহপাঠীর মোবাইল চুরির ব্যাপারে জড়িত থাকার অভিযোগে ওকে বকাবকি করা হয়। সোমবার রাতে কাউকে না জানিয়ে হস্টেল থেকে বেরোনোয় হস্টেল সুপার ওকে বকাবকি করেন বলেও শুনেছি।” প্রণববাবু বলেন, “নিম্নমানের খাবারের বিষয়টি গত শনিবার আলোচনা করে মিটিয়ে দেওয়া হয়। এই ঘটনা কেন ঘটল জানি না। জনতা আমাকে কেন মারধর করল তা-ও বুঝতে পারছি না।”
সত্যজিতের বাবার অভিযোগ, “বরাবরই সত্যজিৎ অন্যায়ের প্রতিবাদ করত। হস্টেলে বাজে খাবার দেওয়ার বিরুদ্ধেও প্রতিবাদ করে। যাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিল তারাই ওকে খুন করেছে।” তাঁর দাবি, “আমার ছেলে ভাল ক্যারাটে জানত। একা কারও পক্ষে ওকে মারা সম্ভব নয়। কয়েক জন মিলে পরিকল্পনা করেই মেরেছে।” পুলিশ সূত্রের খবর, ঘটনাস্থল থেকে কোনও ‘সুইসাইড নোট’ মেলেনি। মৃতের গায়ে আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়নি। তবে ময়না-তদন্তের রিপোর্ট হাতে পাওয়ার আগে মৃত্যুর কারণ নিয়ে মন্তব্য করতে চায়নি পুলিশ। |