সরকারি সাহায্য শুরু, প্রশ্ন ইচ্ছুক-অনিচ্ছুক বিভাজনে
রকারি সাহায্যে ‘ইচ্ছুক-অনিচ্ছুক’ বিভাজন কেন? প্রশ্ন উঠল শনিবার সিঙ্গুরে।
এ দিনই সরকারি সাহায্যের জন্য ব্যাঙ্কের পাসবই, চালের ‘টোকেন’ হাতে পৌঁছল সিঙ্গুরের ২৩৪ জন ‘অনিচ্ছুক’ জমিদাতার। যা জেনে টাটাদের প্রকল্পে স্বেচ্ছায় জমি দেওয়া কেজিডি পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা অশোক পাখিরার মতো কেউ কেউ বলছেন, “আগের সরকারকে জমি দিয়েছিলাম। কোনও দলকে নয়। ক্ষতিপূরণ বাবদ যা পেয়েছিলাম, তা-ও শেষ। কিন্তু আমাদের জন্য তো কিছু হল না! মুখ্যমন্ত্রী তো আমাদেরও!”
সরকারি সাহায্যে ‘ইচ্ছুক-অনিচ্ছুক’ না-দেখার দাবিতে এ দিন সিঙ্গুরে মিছিল করেছে কংগ্রেস। কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান বলেন, “অনিচ্ছুক-ইচ্ছুক বিভাজন রাজ্য কেন করছে? সব জমিদাতার স্বার্থেই সর্বদলীয় বৈঠক ডেকে বিষয়টি আদালতের বাইরে মীমাংসার দাবি জানিয়েছি।” ঘটনাচক্রে, কলকাতায় সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু বলেন, “ইচ্ছুক-অনিচ্ছুক বিভাজন না-করে যাঁরা প্রকল্পের জন্য জমি দিয়ে টাকা নিয়েছেন, তাঁদেরও ২ টাকা কেজি দরে চাল ও মাসে ২ হাজার টাকা ভাতা দেওয়া হোক। কারণ জমি দিলেও তাঁদের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়নি।”
জয়দেব দাস সুবলচন্দ্র বাগ অশোক পাখিরা
সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত সিঙ্গুরে দেখা মিলেছে নানা মুখের। টোকেন ও ব্যাঙ্কের পাসবই হাতে-পাওয়া খাসেরভেড়ির আনন্দ কোলে বললেন, “জমি আর ফেরত পাব কি না, জানি না। সরকারি সাহায্যে কিছুটা তো উপকার হলই।” একই এলাকার সুবলচন্দ্র বাগের বক্তব্য, “এত দিন ধরে জমি ফেরত দেওয়া হবে বলে নানা কথা শুনছিলাম। সংসারের যা হাল, তাতে যেটুকু পাচ্ছি, সেটাই ভাল।”
সকলেই যে সরকারি প্রচেষ্টাকে ‘স্বাগত’ জানিয়েছেন, তা নয়। খাসেরভেড়ির জয়দেব দাসের চার বিঘা জমি গিয়েছে টাটার প্রকল্পে। চল্লিশোর্ধ্ব জয়দেব বললেন, “জমি ফেরত পাব বলে আন্দোলনে নেমেছিলাম। এখন মনে হচ্ছে, ক্ষতিপূরণের চেক নিয়ে নিলে ভালই হত। ছ’বছর টানাপোড়েনে আর পারছি না। জীবনটাই বৃথা হয়ে গেল!”
সিঙ্গুরের পাঁচটি মৌজায় (খাসেরভেড়ি, বাজেমিলিয়া, গোপালনগর, বেড়াবেড়ি ও সিংহের ভেড়ি) ‘অনিচ্ছুক’ চাষি, বর্গাদার ও খেতমজুর ৩,৭৪৬ জন। জেলাশাসক শ্রীপ্রিয়া রঙ্গরাজন, সিঙ্গুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি প্রতিমা দাসদের উপস্থিতিতে এ দিন খাসেরভেড়ি এলাকার বাসিন্দাদের সরকারি সাহায্য দেওয়া শুরু হয়। পরিবার পিছু মাসিক আট কেজি চালের ‘টোকেন’ (সংশ্লিষ্ট এলাকার রেশন ডিলারকে দেখালে চাল মিলবে) এবং ব্যাঙ্কের পাসবই (যাতে মে-জুন মাসের ১ হাজার টাকা করে ভাতার উল্লেখ রয়েছে)। প্রশাসন জানিয়েছে, জুলাই থেকে ভাতা বেড়ে হবে ২ হাজার টাকা।
ফের পথে
একই দিনে সিঙ্গুরের রাস্তায়। কংগ্রেসের মিছিল (বাঁ দিকে)। পথে নেমেছে
তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সদস্যরাও। শনিবার। ছবি: তাপস ঘোষ
সিঙ্গুরে ‘ইচ্ছুক’ জমিদাতা প্রায় ৮ হাজার। ‘অনিচ্ছুক’দের সরকারি সাহায্য দেওয়া শুরু হয়েছে জেনে কেজিডি পঞ্চায়েত (কামারকুণ্ডু-গোপালনগর-দলুইগাছি) এলাকার অশোক পাখিরা বলেন, “স্বামী-স্ত্রীতে প্রকল্প এলাকায় সাপুরজি-পালনজি কোম্পানিতে ঝাড়ুদারের কাজ করতাম। কারখানা হবে ভেবে চেক নিয়েছিলাম। টাটারা চলে যাওয়ায় কোম্পানিও বন্ধ হয়ে যায়। এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। উনি তো সকলের মুখ্যমন্ত্রী। গরিবদের সাহায্য দিচ্ছেন। তা, আমরা কি গরিব নই?”
জমি-আন্দোলন পর্বের নেতা তথা বিধায়ক বেচারাম মান্নার অবশ্য বক্তব্য, “সকলকে তো একসঙ্গে খুশি করা যায় না! অনিচ্ছুক চাষিরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপরে ভরসা করেছিলেন। তিনি তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছেন।” তবে বিধায়কের সংযোজন, “সিঙ্গুরে যখন অন্য সুর শোনা যাচ্ছে, তখন সে কথাও সরকারের কাছে পৌঁছে দেব।” রাজ্য যে ‘অনিচ্ছুক’দের পাশে রয়েছে, তা বোঝাতে এ দিন সিঙ্গুরে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের তরফে বিশাল মিছিল হয়। কামারকুণ্ডু স্টেশন লাগোয়া ভারতী সঙ্ঘের মাঠ থেকে শুরু হয়ে তা শেষ হয় বেড়াবেড়ি এলাকায়।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.