দক্ষিণ কলকাতা
পূর্ব কলকাতা উপনগরী
হস্তান্তরই সার
রাস্তা কোথাও এবড়ো-খেবড়ো, কোথাও বা গভীর গর্ত। একটু বৃষ্টিতেই জল জমে যায় এলাকার বিভিন্ন জায়গায়। সমস্যা রয়েছে পানীয় জলেরও। থমকে রয়েছে পূর্ব কলকাতা উপনগরীর নিকাশির একটি গুরুত্বপূর্ণ পাম্পিং স্টেশন হস্তান্তরের কাজও। গত ফেব্রুয়ারিতে কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (কেএমডিএ) কলকাতা পুরসভাকে এই উপনগরীর একাংশ হস্তান্তরের পর পুরসভা তড়িঘড়ি কাজ শুরু করে। কিন্তু, কিছু ক্ষেত্রে প্রশাসনিক জটিলতায় কাজ আটকে রয়েছে। ফলে, অসুবিধায় পড়ছেন এলাকার বাসিন্দারা।
পুরকর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, চার মাস আগে এই উপনগরী পুরসভাকে হস্তান্তর করা হলেও কিছু কিছু জায়গায় কেএমডিএ-র অনুমতি নিয়েই কোনও কোনও বেসরকারি সংস্থা কিছু নতুন প্রকল্পের কাজ করছে। এই কাজ করার সময়ে কিছু কিছু জায়গায় রাস্তা এবং নিকাশির ক্ষেত্রে সমস্যা হয়েছে। যত ক্ষণ না এই জায়গাগুলি ঠিক করা হচ্ছে তত ক্ষণ এই সমস্যার সমাধান করা যাচ্ছে না। কেএমডিএ-র সঙ্গে এই ধরনের প্রকল্পের ক্ষেত্রে সমস্যা হলে তার সমাধানে কী চুক্তি ছিল এবং প্রয়োজনে এই সংস্থাগুলি কী বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করবে তা পুরসভার জানা না থাকায় চটজলদি কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। কেএমডিএ কর্তৃপক্ষকে এই ব্যাপারে এগিয়ে আসতে হবে। তাঁদেরকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তবে, কিছু রাস্তায় এর মধ্যেই রাস্তা মেরামতির কাজ শুরু হয়েছে বলে পুরকর্তৃপক্ষের দাবি।
কেএমডিএ-র সিইও বিবেক ভরদ্বাজ বলেন, “পূর্ব কলকাতা উপনগরী হস্তান্তর হওয়ার আগে থেকেই এলাকায় কিছু উন্নয়নমূলক প্রকল্প বেসরকারি উদ্যোগে হচ্ছে। আমাদের অনুমতি নিয়েই এই প্রকল্প গৃহীত হয়েছে। এই ধরনের প্রকল্প করতে গিয়ে রাস্তাঘাট বা নিকাশির বর্তমান পরিকাঠামোর ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা হয়ে থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে যাঁরা এই ধরনের কাজ করছেন তাঁদেরকে আমরাও অনুরোধ করব পরিকাঠামোর ক্ষতি না করে যাতে প্রকল্পগুলি রূপায়ণ করেন। প্রয়োজনে আমাদের আধিকারিকেরা পুরসভাকে অবশ্যই সাহায্য করবেন।”
১০৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুশান্তকুমার ঘোষ বলেন, “এই ওয়ার্ড হস্তান্তর করা হয়েছে কলকাতা পুরসভাকে। এখানে পুরসভা ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করেছে। কাজ করতে গিয়ে যেখানে সমস্যা হচ্ছে সেখানেও তা সমাধান করা হচ্ছে।” ১০৭ নম্বর ওয়ার্ডের পুরোটা এবং ১০৮ নম্বর ওয়ার্ডের অনেকটা অংশ জুড়েই পূর্ব কলকাতা উপনগরীর পরিধি। চার মাস আগে কেএমডিএ কলকাতা পুরসভাকে পুরসভার ১০৭ নম্বর ওয়ার্ড হাস্তান্তর করলেও ১০৮ নম্বর ওয়ার্ড হস্তান্তর করা হয়নি। ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালের কাছে ছাড়াও ১০৭ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত চক্রবর্তী পাড়া, শ্যামশ্রী গার্ডেন এবং এলাকার একটি বেসরকারি স্কুলের সামনের রাস্তার অবস্থাও খুবই খারাপ। কোথাও কোথাও নর্দমাও ভেঙে পড়েছে। একই ভাবে, ১০৭ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত কেএমডিএ নির্মিত নিকাশির একটি পাম্পিং স্টেশন পুরসভা অধিগ্রহণ করলেও ১০৮ নম্বর ওয়ার্ডের আনন্দপুর পাম্পিং স্টেশনটি এখনও অধিগ্রহণ করেনি। এই বর্ষায় এখানে সমস্যা হতে পারে বলে পুরসভার আশঙ্কা।এই প্রসঙ্গে বিবেক ভরদ্বাজ বলেন, “এখনও পর্যন্ত এই উপনগরীর যে অংশটি কেএমডিএ-র অধীনে রয়েছে সেই অংশটি কেএমডিএ রক্ষণাবেক্ষণ করছে। বাইপাস সংলগ্ন ১০৮ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত রাস্তাও সারানোর কাজ শুরু করেছে কেএমডিএ।” ১০৮ নম্বরের কাউন্সিলর পার্থ রায়চৌধুরী বলেন, “এই ওয়ার্ডের যে অংশটি পুরসভার অধীনে রয়েছে সেখানে পুরসভা রাস্তা মেরামতি করছে।”
১০৮ নম্বর ওয়ার্ড এখনও হস্তান্তর করা হল না কেন? কলকাতার মেয়র তথা কেএমডিএ-র ভাইস চেয়ারম্যান শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এই ওয়ার্ডে উপনগরীর যে অংশ আছে সেখানে কিছু উন্নয়নমূলক কাজ কেএমডিএ করছে। নিয়মানুযায়ী, এই কাজ শেষ হলে তবেই তা পুরসভাকে আনুষ্ঠানিক ভাবে হস্তান্তর করা হবে। তবে, এই উপনগরীর যে অংশ বর্তমানে পুরসভার অন্তর্ভুক্ত সেখানে পুর-পরিষেবার কাজ চলছে। ধাপার জল প্রকল্পের কাজ শেষ হলে এই এলাকায় পানীয় জলের কোনও অভাব থাকবে না।” পূর্ব কলকাতা উপনগরীর জন্য এই মুহূর্তে বরাদ্দ করা হয়েছে প্রায় ৪০ কোটি টাকা। এই টাকার মধ্যে কেএমডিএ দেবে ২৫ কোটি টাকা। বাকি টাকা বরাদ্দ করবে পুরসভা।

ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.