|
|
|
|
কুয়োয় কিশোর, উদ্ধারে নামতেই দেরি সাত ঘণ্টা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
দূর গুড়গাঁওয়ে ৭০ ফুট গর্তে পড়ে পাঁচ বছরের ছোট্ট মাহির মৃত্যুর খবর সেই সবে এসেছে। তার মধ্যেই হাওড়ার লিলুয়ায় ১৭ বছরের এক কিশোর তলিয়ে গেল ৩০ ফুট গভীর কুয়োয়।
কিন্তু স্টিফেন কোর্ট ও আমরি হাসপাতালে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পরেও শিক্ষা নেয়নি দমকল। সাবালক হয়নি রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীও। তাই প্রায় সাত ঘণ্টা পরেও রোশন মণ্ডল নামে ওই কিশোরকে উদ্ধারের কাজ শুরু করতে পারেনি প্রশাসন। বেআব্রু হয়ে যায় প্রশাসনের ভিতরে সমন্বয়ের অভাবটাও।
দেরি কেন? রাজ্যের দমকল ও বিপর্যয় মোকাবিলা মন্ত্রী জাভেদ খান বলেন, “কুয়োয় বিষাক্ত গ্যাস থাকায় উদ্ধারে দেরি হচ্ছে। বোঝাপড়ার অভাব ছিল না। কিছু লোক গুজব ছড়াচ্ছে। বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী এসেছে। বৃষ্টি ও যানজটে কিছুটা দেরি হয়েছে।” হাওড়ার তৃণমূল নেতা ও মন্ত্রী অরূপ রায়ের অভিযোগ, “স্থানীয় বাসিন্দারা খবর দিতে দেরি করায় উদ্ধারে নামতে দেরি হয়েছে।” যদিও দেরির প্রকৃত কারণ ‘অন্য’ বলে জানান হাওড়ার ডিসিপি রশিদ মুনির খান এবং ডোমজুড়ের তৃণমূল বিধায়ক রাজীব বন্দ্যোপাধ্যয়। রশিদ বলেন, “বিকেল ৫টার মধ্যেই বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরকে খবর দেওয়া হয়েছিল। |
|
বিষাক্ত গ্যাস দেখতে হ্যারিকেন নামছে লিলুয়ার কুয়োয়। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক |
কিন্তু কলকাতা থেকে আসতে গিয়ে ওই বাহিনী রাস্তা গুলিয়ে ফেলায় দেরি হয়ে যায়!” দমকল এবং বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের ব্যর্থতা কার্যত স্বীকার করে নিয়ে রাজীববাবু বলেন, “হাওড়ার মতো এলাকায় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী নেই। তাই উদ্ধারে এত দেরি। বিষয়টি বিধানসভায় তুলব।” মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গভীর রাত পর্যন্ত উদ্ধারকাজের খোঁজখবর নেন, কর্তাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশও দেন। হাওড়ার পুলিশ কমিশনার অজেয় রানাডে জানান, ফৌজেরও সাহায্য নেওয়া হচ্ছে।
কী ভাবে কুয়োয় পড়ে গেল রোশন? পুলিশি সূত্রের খবর, ভাগলপুরের বাসিন্দা রোশন হাওড়া ময়দান এলাকায় একটি কয়লা ডিপোয় কাজ করে। লিলুয়ার জগদীশপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের লক্ষ্মণপুর নিত্যনগরে একটি নির্মীয়মাণ বহুতলে শ্রমিকের কাজ করছিলেন তার বাবা উপেন্দ্র মণ্ডল। প্রতিদিনের মতো এ দিনও বাবার জন্য খাবার আনে। তাঁকে কাজে সাহায্যও করছিল সে। বহুতলের পিছনেই নির্মাণকাজের জন্য খোঁড়া পাতকুয়ো থেকে মোটরের সাহায্যে জল তুলত ওই কিশোর। কুয়োর চার ধারে বালির স্তূপ টানা বৃষ্টিতে ধসে গিয়েছিল। এ দিন বেলা সাড়ে ৩টে নাগাদ মোটর দিয়ে জল তুলতে না-পেরে কুয়োর ধারে গিয়ে উঁকি মেরে জল মাপতে যায় রোশন। হঠাৎই বালির স্তূপ ধসে কুয়োয় পড়ে যায় সে। প্রায় ৩০ ফুট নীচে কুয়োর ‘বেড়’ (সিমেন্টের খাঁজ)-এ আটকে যায় রোশন।
দমকলের খবর, পাম্প, দড়ির মই, কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্র-সহ সবই আনা হয়েছিল। কিন্তু কুয়োর মুখ সরু হওয়ায় শ্বাসযন্ত্র নিয়ে নামা যায়নি। ছোট শ্বাসযন্ত্র কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তা কার্যকর হয়নি। রাত ৯টা নাগাদ আসে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ১০ জনের দল। সওয়া ১০টা নাগাদ কুয়ো খোঁড়ার কাজে অভিজ্ঞ স্থানীয় এক যুবককে অক্সিজেন মাস্ক-সহ নামানো হয় কুয়োয়। কিন্তু টানা বৃষ্টিতে কুয়োর পাড় ভাঙতে শুরু করায় সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়। সাড়ে ১০টা নাগাদ মেট্রোর এক দল ইঞ্জিনিয়ার আসেন। আসে তাঁদের দু’টি ক্রেনও। কিশোরটি কুয়োর ঠিক কোথায় আছে, তা জানতে আনা হয় ‘সাবমার্সিবল’ ক্যামেরা। মেট্রো ইঞ্জিনিয়ারদের পরামর্শে পাশে সুড়ঙ্গ কেটে গভীর রাত পর্যন্ত উদ্ধারকাজ চলে। |
|
|
|
|
|