জেলায় জেলায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাব মেটাতে ব্যর্থ হয়ে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর এ বার লন্ডনের ‘রয়্যাল কলেজ অফ জেনারেল প্র্যাকটিশনার্স’-এর দ্বারস্থ হয়েছে। স্থির হয়েছে, ওই বিলেতি প্রতিষ্ঠানের সাহায্যে পশ্চিমবঙ্গে ‘বিকল্প’ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৈরি করা হবে। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে সমঝোতাপত্র সই হয়ে গিয়েছে। নিয়ম-কানুন চূড়ান্ত করতে গত ১৯ জুন লন্ডন গিয়েছেন স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়।
ক’মাস আগে রাজ্যের বিভিন্ন জেলা হাসপাতাল ছেড়ে মেডিক্যাল কলেজগুলোয় শিক্ষক-চিকিৎসক হিসেবে ৬০ জন বিশেষজ্ঞ যোগ দিয়েছেন। এঁদের ৪৫ জনই ছিলেন সংশ্লিষ্ট জেলা হাসপাতালে সংশ্লিষ্ট বিভাগের একমাত্র বিশেষজ্ঞ। অধিকাংশ জায়গায় এখনও ওঁদের বিকল্প কাউকে পাওয়া যায়নি, ফলে বিভাগগুলো বন্ধ হতে বসেছে। উপরন্তু জেলায় বদলি হওয়ায় বেশ কিছু এমডি-এমএস স্বেচ্ছাবসরের আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন।
এ হেন সঙ্কটের পরিস্থিতিতে রয়্যাল কলেজ বড় পরিত্রাতার ভূমিকা নিতে পারে বলে স্বাস্থ্য-কর্তাদের আশা। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সংখ্যা বাড়াতে লন্ডনের প্রতিষ্ঠানটি কী ভাবে সাহায্য করবে?
সুশান্তবাবু জানিয়েছেন, এমবিবিএস পাশ করার পরে সরকারি চিকিৎসকেরা এখন ‘ডিপ্লোমা ইন ফ্যামিলি মেডিসিন’ পড়তে পারবেন, যে তকমাটি দেবে ‘রয়্যাল কলেজ অফ জেনারেল প্র্যাকটিশনার্স।’ এক বছরের ওই ডিপ্লোমা কোর্সের মধ্যে মোটামুটি তিন মাস এ রাজ্যের ডাক্তারেরা লন্ডনে গিয়ে হাতে-কলমে কাজ শিখবেন। বিনিময়ে রয়্যাল কলেজের ডাক্তাররা কয়েক মাস রাজ্যের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে কাজের সুযোগ পাবেন। এখানকার এমবিবিএস’দের কী শেখানো হবে লন্ডনে? |
অভাবী চিকিৎসা |
বিশেষজ্ঞের মোট পদ - ২৭০০ |
রয়েছেন - ১৬০০ |
কী হাসপাতাল |
কত ঘাটতি |
জেলা |
৩০% |
মহকুমা |
৩৫% |
স্টেট জেনারেল |
৩০% |
গ্রামীণ |
৮৫% |
আপগ্রেডেড প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র |
৮০% |
* তথ্য: রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর |
|
সুশান্তবাবুর বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গের জেলা হাসপাতালগুলোয় শিশুরোগ, অস্থিরোগ ও স্ত্রীরোগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাব সবচেয়ে বেশি। অ্যানাস্থেটিস্ট, সার্জন ও মেডিসিনের বিশেষজ্ঞও প্রয়োজনের তুলনায় বিস্তর কম। এই সার্টিফিকেট কোর্সে এমবিবিএস পাশ প্রত্যেক সরকারি চিকিৎসককে ওই ছ’টা বিষয়ে আলাদা ভাবে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। অর্থাৎ, প্রশিক্ষণ শেষে তাঁরা প্রত্যেকে ছ’টি ক্ষেত্রেই ‘বিকল্প বিশেষজ্ঞের’ ভূমিকা পালন করতে পারবেন। “যে সব জেলা, মহকুমা, স্টেট জেনারেল ও গ্রামীণ হাসপাতাল কিংবা আপগ্রেডেড প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ছ’টার কোনও একটায় স্পেশ্যালিস্ট দরকার হবে, সেখানে ওঁদের পাঠানো যাবে। এমডি-এমএসের জন্য হা-পিত্যেশ করে বসে থাকতে হবে না।” বলেন স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা।
‘ডিপ্লোমা ইন ফ্যামিলি মেডিসিন’ পড়ার সুযোগ পাবেন কারা?
স্বাস্থ্য দফতরের খবর: ডিপ্লোমা কোর্সটিতে ভর্তি হওয়ার প্রথম শর্ত হবে জেলায় কাজ করা। এবং ওই শর্ত পূরণের মাধ্যমে জেলা ও গ্রামে ডাক্তারের অভাবও মেটানো যাবে বলে স্বাস্থ্য-কর্তাদের আশা। সুশান্তবাবুর কথায়, “ডাক্তারেরা এ বার কলকাতা ছেড়ে বেরোতে চাইবেন। কারণ বিনিময়ে লন্ডনের রয়্যাল কলেজের মতো নামী জায়গায় নিখরচায় হাতে-কলমে তালিমের সুযোগ ও সে দেশের ডিপ্লোমা পাওয়ার সুযোগ থাকছে।” স্বাস্থ্য-কর্তারা জানাচ্ছেন, কলকাতার ‘ইনস্টিটিউট অফ হাইজিন অ্যান্ড পাবলিক হেল্থ’-এ একদা প্রিভেনটিভ মেডিসিনে এমডি এবং ‘ডিপ্লোমা ইন পাবলিক হেল্থ’ পড়ানো হতো। ওখানে মেডিসিন বা ফ্যামিলি মেডিসিনের ডিপ্লোমা শুরু করা যায় কি না, সে ব্যাপারে ভাবনা-চিন্তাও শুরু হয়েছিল। কিন্তু ভারতীয় সংস্থার ডিপ্লোমালাভে নবীন ডাক্তারেরা তেমন আগ্রহী না-ও হতে পারেন এ কথা ভেবে পরিকল্পনাটি ত্যাগ করা হয়েছে।
বস্তুত সরকারি চাকরির প্রতি রাজ্যের ডাক্তারদের অনীহা দিন দিন প্রকট হচ্ছে। বিশেষজ্ঞের অভাব মেটাতে সম্প্রতি অ্যাড-হক ভিত্তিতে তিনশো চিকিৎসককে নেওয়া হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত কাজে যোগ দিয়েছেন সাকুল্যে ১৪৮ জন। পাবলিক সার্ভিস কমিশন থেকে ডাকা হয়েছিল ২৮ জন এমডি-এমএস’কে। তাঁদের মধ্যে ১১ জন এসেছেন। বিলেতি ডিপ্লোমার টানে এ বার কত জন আসেন, সেটাই এখন দেখার। |