|
|
|
|
|
|
জলসঙ্কট তীব্র |
শুষ্ক বালি |
শান্তনু ঘোষ |
স্রেফ কম পরিমাণে জল সরবরাহ করার কারণেই বালি পুর এলাকা জুড়ে শুরু হয়েছে জলসঙ্কট। হাওড়া পুরসভার বিরুদ্ধে এমনই অভিযোগ তুলেছেন বালির পুর কর্তৃপক্ষ। যদিও কয়েক দিন আগেই হাওড়া পুরসভার জলসঙ্কটের পিছনে পুর কর্তৃপক্ষের দাবি ছিল, বালি পুরসভা ‘জল চুরি’ করছে।
হাওড়া পুরসভার তোলা এই অভিযোগ অবশ্য কোনও ভাবেই মানতে রাজি নয় বালি পুরসভা। বালির পুরপ্রধান সিপিএমের অরুণাভ লাহিড়ী বলেন, “জল চুরির অভিযোগ একেবারে বাজে কথা। হাওড়ার ম্যাপে বালি একেবারে শেষ প্রান্তে। এখানে জল চুরির কোনও জায়গা নেই। জল চুরি করলে কি আর বালিতে জলসঙ্কট দেখা দিত?”
তবে দুই পুরসভার এই কাজিয়াকে মোটেই আমল দিতে রাজি নন বালি পুর এলাকার ৩৫টি ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, গরম পড়তেই শুরু হয়েছিল জল সরবরাহের সমস্যা। কিন্তু তা এখন মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। রাস্তার কলে দিনের কোনও সময় কিছু ক্ষণের জন্য জল এলেও তা সরু সুতোর মতো। আবার বাড়ির কলে জল সরবরাহ অনিয়মিত। বাসিন্দাদের অভিযোগ অবশ্য স্বীকার করছেন পুর কর্তৃপক্ষ।
বালি পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে, দৈনিক মাথাপিছু ১৩৫ লিটার জল সরবরাহের প্রয়োজন থাকলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রতি দিন গড়ে ৬৫ লিটারের বেশি জল সররাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। যদিও কয়েক মাস আগেও জল সরবরাহের পরিমাণ ছিল প্রতি দিন গড়ে ৮০ লিটার। নিজস্ব জলপ্রকল্প এখনও সম্পূর্ণ না হওয়ায় হাওড়ার পদ্মপুকুর ও শ্রীরামপুর জলপ্রকল্পের উপরে ভিত্তি করেই চলছে বালি পুর এলাকায় জল সরবরাহ।
বালি পুর এলাকায় জল সরবরাহের জন্য তিনটি ভূগর্ভস্থ জলাধার রয়েছে। পদ্মপুকুর থেকে বেলুড় লালবাবা কলেজ জলাধার, লিলুয়া ভট্টনগর জলাধার ও সালকিয়া জলাধারে জল আসে। পুরসভার জল দফতর সূত্রে খবর, সালকিয়া জলাধার থেকে বেলুড়ের দশটি ওয়ার্ড ও বেলুড়েরই ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের একটি ওভারহেড জলাধারে জল সরবরাহ করা হয়। লিলুয়া জলাধার থেকে লিলুয়া এলাকায় ও বালি জলাধার থেকে বালির কয়েকটি এলাকায় জল সরবরাহ হয়। অন্য দিকে, হাওড়া পুরসভাকে মাসিক তিন লক্ষ টাকার বিনিময়ে শ্রীরামপুর জলপ্রকল্প থেকেও বালিতে জল সরবরাহ করা হয়।
বালি পুর এলাকার বালি, বেলুড়, লিলুয়া মিলিয়ে ১১.৮১ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় রাস্তার কলের সংখ্যা ১৯০০ এবং ১২ হাজার বাড়িতে জলের সংযোগ রয়েছে। কিন্তু জলসঙ্কটের ফলে সর্বত্র জল না পাওয়ার ছবিটাই স্পষ্ট। বাসিন্দাদের অভিযোগ, আগে ভোর ৬টা থেকে সকাল সাড়ে ৭টা, দুপুর ১২টা থেকে দেড়টা ও বিকেল ৪টে থেকে ৫টা পর্যন্ত জল সরবরাহ করা হত। কিন্তু এখন সেই সময় অনেক কমে গিয়েছে। খুব সামান্য সময়ের জন্য জল আসে। ফলে রাস্তার কলে দীর্ঘ লাইন পরে। পুরসভার জল দফতর সূত্রে খবর, সকাল ও দুপুর মিলিয়ে মোট তিন ঘণ্টার মতো জল সরবরাহ করার কথা থাকলেও বর্তমানে মাত্র চল্লিশ মিনিট জল সরবরাহ করা হয়। বিকেলেও জল সরবরাহ সর্বত্র সমান ভাবে হয় না।
সমস্যা কেন?
বালি পুরসভার অভিযোগ, হাওড়ার পদ্মপুকুর থেকে যে পরিমাণ জল বালিকে দেওয়ার কথা তার থেকে অনেক কম পরিমাণ জল দেওয়া হচ্ছে। ফলে রাস্তার কলে জল দিতে গেলে বাড়িতে দেওয়া যাচ্ছে না। আবার দু’টি ক্ষেত্রেই দিতে গিয়ে ৩৫টি ওয়ার্ডে সমপরিমাণে জল সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে না। পুরসভার জল দফতরের সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার মুশারফ খান জানান, পদ্মপুকুর থেকে আগে বালি ভূগর্ভস্থ জলাধারে দৈনিক সাড়ে ৭ লক্ষ গ্যালন জল আসত। কিন্তু এখন আসছে মাত্র আড়াই লক্ষ গ্যালন। আবার লিলুয়ায় জল আসত ১২ লক্ষ গ্যালন, এখন আসছে ১০ লক্ষ গ্যালন। অন্য দিকে, ৪.৯৪ মিলিয়ন গ্যালন ক্ষমতাসম্পন্ন সালকিয়া জলাধারে অনিয়মিত জল আসছে পদ্মপুকুর থেকে। এর ফলে বালি পুর এলাকায় সর্বত্র সম পরিমাণে জল সরবরাহ করা যাচ্ছে না।
জলসঙ্কটের কথা স্বীকার করে পুরসভার অফিস সুপারভাইজার মহম্মদ আমানউল্লা মোল্লা বলেন, “বিষয়টি নিয়ে পদ্মপুকুর প্রকল্পে গিয়ে কেএমডিএ আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু তাঁরা দায় চাপিয়েছেন হাওড়া পুরসভার উপরে। সমস্যা সমাধানের জন্য বালি পুরসভার সঙ্গে কেএমডিএ এবং হাওড়া পুরসভাকে নিয়ে বৈঠক করার জন্য জেলাশাসককে একটি চিঠি লিখেছি।” পদ্মপুকুরের দায়িত্বে থাকা কেএমডিএ-র এক আধিকারিক বলেন, “পদ্মপুকুরে জল উৎপাদনের পরে তা হাওড়া ও কেএমডিএ-র যৌথ জলাধারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখান থেকে নিজেদের পুর এলাকার পাশাপাশি বালিকেও জল সরবরাহ করে হাওড়া পুরসভা। তাই যা বলার তারাই বলতে পারবে। তবে জল উৎপাদনে কোনও ঘাটতি নেই।”
হাওড়ার মেয়র মমতা জয়সোয়াল বলেন, “জল উৎপাদন খুবই কম হচ্ছে। তাই বালিতে যে জল আমাদের দেওয়ার কথা তাতে সমস্যা হচ্ছে। তবে খুব তাড়াতাড়ি সমস্যা মিটবে বলে আশা করি।”
|
ছবি: রণজিৎ নন্দী |
|
|
|
|
|